আজ শনিবার ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
তারাকান্দায়এলজিইডি’র একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট মোফাজ্জলকে বিজয়ী করতে এলাকাবাসীর অঙ্গিকার রোগীর সেবায় থাকে খোদার সন্তুষ্টি গৌরীপুরে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জহিরুল হুদা লিটনের ব্যাপক গণসংযোগ গৌরীপুর পৌর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম আর নেই! মেহেদির রং মুছতে না মুছতেই লা*শ হলো নববধূ সাদিয়া গৌরীপুরে এসডিএফের উদ্যোগে স্টেক হোল্ডারদের কর্মশালা আইডিইবি ময়মনসিংহ শাখার সংবাদ সম্মেলন তারাকান্দায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা সভাপতি -শিমেল,সাধারণ সম্পাদক- সাজ্জাদ তারাকান্দায় থানার ওসি’র বিরুদ্ধে অবৈধ তদবিরবাজরা লেগে গড়েছে
প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ৩০, ২০২২, ৮:১৫ অপরাহ্ণ




স্বামীর নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় দেখে যেতে চান গৌরীপুরের আছিয়া

মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন এই সুলতান। যার পুরো নাম সুলতান উদ্দিন তালুকদার। মুক্তিযুদ্ধে রণাক্ষনের সাথী ছিলেন তিনি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিববাড়ি যুব অর্ভ্যথনা ক্যাম্পে তিনি ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবক। সেই ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার নাম আজও গেজেটভূক্ত হয়নি।

দুই সন্তানকে কোলে আর পেটে আরেক সন্তানকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়েছি, কেউ একদিন থাকতে দিলে, পরের দিন না করে দিয়েছে। স্বামী মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে, জানার পর কেউ আশ্রয় দিতে চায়নি। বাড়ি-ঘরে থাকতে পারি নাই, স্বামী ফিরে আসবে কি, না? তাও জানা ছিলো না! এভাবেই যুদ্ধকালীন সময়ের বর্ণনা দেন তার স্ত্রী আছিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, স্বামী দেখে যেতে পারেনি; আমি কী, দেখে যেতে পারবো! স্বামীর নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়?
তিনি আরো বলেন, স্বামী চলে গেছে; আমিও চলে যাবো। অন্তত স্বামীর প্রাপ্য অধিকারটুকু নিয়ে মরতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেটভুক্ত হবে স্বামীর নাম, এটা কারো দয়া বা করুণা নয়, এটা হলো আমার স্বামীর কাজের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি না পেলে পহেলা মার্চ থেকে আমিও আন্দোলনে নামবো। স্বামী সেবা করতো, আমি আমরণ অনশন করবো। ওকে গিয়ে বলতে পারবো, তোমার স্বীকৃতির জন্য আমিও লড়াই করে এসেছি।

এ কথাগুলো বলতে গিয়ে বারবার আঁচলে মুখ মুছেন আছিয়া সুলতানা। সুলতান উদ্দিন তালুকদার মৃত্যুর সময় তিনি পাননি রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও। ২০০৪সালের ৯মে চিরবিদায় নেন। সেদিন ছিলো রোববার। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮সালের ৩১জানুয়ারি। যুদ্ধের জন্য তিনি নিয়মিত লেখাপড়াও করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। পরে ১৯৭২সালে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্টিক পাস করেন। তার রোল গৌরী নাম্বার পি ৪৭১।

যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে সুলতান উদ্দিন তালুকদার ছিলেন সর্দাপ্রস্তত। ক্যাম্পে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পরিচিত এক নাম ছিলো সুলতান। এ ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনের জন্য মুজিবনগর সরকারের একজন ভাতা ভোগকারীও ছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭১সালের ১৫নভেম্বর তারিখে ৭৫টাকা সর্বশেষ ভাতাও উত্তোলন করেন তিনি। ভাতাভোগীর ১১জনের মধ্যে তাঁর ক্রমিক নং ৯। এ তালিকার ১০জনই মুক্তিযোদ্ধা। শুধু গেজেটভুক্ত হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম! এছাড়াও আরো একটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা (অর্ন্তভূক্তি) ৪০জনের যে তালিকা প্রস্তুত হয় সেখানে সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম ১৫নং ক্রমিকে। এ তালিকার অনেকেই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। হয়নি সুলতান উদ্দিন তালুকদারের নাম। তার বড় ছেলে মহি উদ্দিন তালুকদার লিটন জানান, মুক্তিযুদ্ধ করেছে আমার বাবা বিজয়ের ৪৯বছরেও তালিকাভূক্তি না হওয়ায় দুঃখজনক। অপর পুত্র কামরুজ জামান স্বপন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মায়ের পেটে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি দৌড়েছি আশ্রয়ের জন্য আর আজ স্বীকৃতির জন্য এ দফতর থেকে ও দফতরে যাচ্ছি, আসলে যুদ্ধাটা শেষ হলো কোথায়!

অপরদিকে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য ২০০৬সালে প্রথম আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। এরপর থেকে বারবার এ দপ্তর, ওই মন্ত্রণালয় ঘুরতে ঘুরতে আজ তিনি ক্লান্ত। সাক্ষাতকার ও যাছাই বাচাইয়ের আসরে যেতে যেতে তিনিও হাঁপিয়ে উঠেছেন। আছিয়া সুলতানের বয়সও ৭০’র কোটা ছাড়িয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধ্যকজনিত নানা রোগ। এই আছেন ভালো, এইতো খারাপ এমন শংকায় কাটছে দিন। তার দু’মেয়ে আম্বিয়া আক্তার জুয়েল ও রোকেয়া আক্তার রুমা জানান, বাবা মুক্তিযোদ্ধা, তা না হলে সরকার বলুক তিনি যুদ্ধ করেননি, ভারতে প্রশিক্ষণ নেননি।
অপরদিকে ১৯৭২সালের ৯ ফেব্রæয়ারিতে ভারতের শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ডা: এম.এ সোবহান প্রত্যয়নে লিখেছেন, মোঃ সুলতান উদ্দিন তালুকদার ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিববাড়ী যুব শিবিরে ১৯৭১ সালের মে মাসে যোগ দেন। ১৬ডিসেম্বর বিজয় ঘোষণা পূর্বপর্যন্ত তিনি ছিলেন এই ক্যাম্পে। শিবিরে দীর্ঘকাল অবস্থানকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধকে সর্বাধিক মূল্যবান ও যুদ্ধাহতদের নিরলসভাবে সেবা দেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এমসিএ হাতেম আলী মিয়া দেয়া প্রত্যয়নপত্রে লিখেন শিবিরে তাঁর দীর্ঘ অবস্থানকালে তিনি সর্বাধিক পসবা মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করেন। তার মনোযোগ ছিলো সবসময় সেবা দেয়া। সুলতান উদ্দিন তালুকদার মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিমাসে ৭৫ রুপী সম্মানী ভাতা পেতেন। তিনি এ প্রত্যয়ন প্রদান করেন ১৯৭৭সালের ৭ ফেব্রæয়ারিতে।
স্বামীর নামটি গেজেটভূক্ত করতে সর্বশেষ ২০১৪সালের ২২ মে অনলাইনে আবেদন করেন আছিয়া সুলতানা। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭সালের ২৭জুন যাছাই বাচাই হয়। সেই যাছাই-বাচাই কমিটিতে ছিলেন সাত জন সদস্য। তারা হলেন সভাপতি ১৪৮ ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনে এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা খাতুন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা কমাÐারের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাÐের কমাÐার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম, কেন্দ্রীয় কমাÐের কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন, জামুকার প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ। এ কমিটির সাক্ষ্য, মুক্তিযোদ্ধার প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে ৬জনকে তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এ তালিকার ১নং ক্রমিকে ছিলো সুলতান উদ্দিন তালুকাদারের নাম। অথচ অন্যদের হলেও এবারও বাদ পড়েছেন শুধু তিনি। মুক্তিযোদ্ধা নতুন গেজেট সংক্রান্ত ২০২০সালের ১৯জানুয়ারি প্রকাশিত তালিকা নাম দেখে এবার ভেঙ্গে মুচড়ে পড়েন আছিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, এবার শুধু আমি নই; আমার পুরো পরিবার হতাশ। আমার স্বামী যুদ্ধে গিয়েছিলো, তালিকায় নাম তুলতে নয়, যুদ্ধ করতে। আমরা শুধু তার প্রাপ্য অধিকারটুকু দেখে যেতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কদ্দুছ বলেন, যে তালিকার ৫জন হলো সেই তালিকার এক নম্বর ক্রমিকের নাম বাদ পড়ে কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধ করার পরেও তালিকায় নাম উঠানোর জন্য আরেকটা যুদ্ধ করতে হবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনকও। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমাÐার আব্দুর রহিম জানান, যাছাই-বাচাই কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে তার স্বীকৃতির জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি আপিল বিভাগে রয়েছে।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১