রঙিন স্বপ্নের শিক্ষার ভুবন ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজ বিদ্যাপীঠ। ১৯৬৪ সালের এইদিনে (১আগস্ট) এ বিদ্যাগঞ্জের যাত্রা শুরু করে। এই স্বপ্নের ভুবনে এসে দেশের জন্য ১৯৬৯’রের গণঅভ্যূত্থানে শহিদ হন এ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আজিজুল হক হারুণ। ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আজ রোববার (১আগস্ট/২১) ৫৭তম বর্ষপূর্তি।
কলেজের চারদিকে রয়েছে নতুন-পুরাতন অসংখ্য সাইনবোর্ডে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সাইনবোর্ড ঝুলে রয়েছে। তবে হচ্ছে না নতুন ভবন। শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। নেই শ্রেণিকক্ষ, পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন নেই, নেই অনার্স বিভাগের পৃথক শ্রেণিকক্ষ, হোস্টেলবিহীন ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন। কলেজটিতে ৮হাজার ৯৫৪জন ছাত্রছাত্রীর অনুপাতে নেই শিক্ষক।
একাডেমিক ভবনের কারণে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ্য করে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিলটন ভট্টাচার্য্য বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুপাতে এখানে শিক্ষক নেই। পদসৃষ্টি করে শূন্যতা পূরণ করা জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন। একটি একাডেমিক ছয়তলা ভবনের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ও শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে একটি আবেদন দিয়েছি। সেখানে জমিদার আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী লালভবনটি সংস্কার ও মেরামত, ছাত্রদের জন্য ১০০শয্যার একটি আবাসিক হোস্টে ও ছাত্রীদের জন্য ১০০শয্যার একটি আবাসিক হোস্টেল, আরো একটি একাডেমিক ভবন এবং পুরো কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সদুত্তর পাইনি।
এদিকে ছাত্রী নিবাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের ১০গুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। চরম নিরাপত্তাহীনতা ও যৌন হয়রানির শংকায় দিন কাটে এ কলেজের শিক্ষাথীদের। কলেজটিতে একাদশ শ্রেণিতে ৬১৩জন ছাত্রী, দ্বাদশ শ্রেণিতে ছাত্রী ৫২৫জন, স্নাতক (পাস) কোর্সে ছাত্রী ১,৩৪৮জন, স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ছাত্রী ৮৯৭জন। এ ছাত্রীরা হোস্টেলের কোন সুবিধাই পাচ্ছেন না। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর থেকেই রাজধানীর ন্যায় উপজেলা পর্যায়েও ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
অপরদিকে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষা উপকরণ, রাত জেগে জরাজীর্ণ দু’টি হোস্টেলে শিক্ষাজীবন অতিক্রমের সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ৫১জন ছাত্র। প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী হোস্টেলে সিটের থাকার আবেদন করেও পাচ্ছেন না সিট বরাদ্দ। বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রী নিবাসের কার্যক্রম সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এম.পি’র মৃত্যুতে মঞ্জুরী ফাইলের অগ্রগতি কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে যায়। তৃতীয়তলা বিশিষ্ট এ ছাত্রী নিবাসটি নির্মিত হলে ১০০জন ছাত্রী সেখানে লেখাপড়ার সুযোগ ছিলো বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজটিতে গৌরীপুর উপজেলার বাহিরের ছাত্রী ১ হাজার ৪২৮জন। ছাত্র রয়েছে দেড় হাজারের অধিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জানান, কারও বাসা ভাড়া নেয়ার পর মালিকদের নিকট জিম্মি হয়ে যাই। মালিক বা তার আত্মীয় স্বজনের যৌন হয়রানির শিকার হলেও প্রতিকারের সুযোগ থাকে না। লোকলজ্জার ভয়েও কারও সাথে বলতে পারি না। এছাড়া এসব এলাকা থেকে কলেজ আসার পথে যৌন হয়রানিও শিকার হতে হচ্ছে। ২০১৪সালে ডিজাইন, প্রাক্কলিক ব্যয় উল্লেখ করে ১০০জন ছাত্র বসবাসযোগ্য আরেকটি ছাত্রাবাসের আবেদন প্রেরণ করেন তৎকালিন অধ্যক্ষ প্রফেসর আল হেলাল ভূঞা। যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
সরজমিন জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের এস আলী ছাত্রাবাসে ২৭ টি ও স্নাতক শিক্ষার্থীদের নূরুল আমিন খান ছাত্রাবাসে ২৪ টি আসন রয়েছে। এ দুটি হোস্টেলের ভবন অত্যন্ত জরাজীর্ণ। সিলিং ও চেয়ার-টেবিল ভাঙ্গাচোরা। টিনের চালে অসংখ্য ফুটো রয়েছে। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে শিক্ষার্থীদের বই খাতা-জামাকাপড় নষ্ট হয়। কক্ষগুলোর দরজা-জানালাগুলো নষ্ট থাকার কারণে প্রায়ই ছাত্রাবাসে চুরি ও শিক্ষার্থী চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। এবার ঝড়ে উড়িয়ে নিয়েছে বারান্দার ছাউনীও। এস আলী ছাত্রাবাসের ছাত্ররা বলেন, ছাত্রাবাসে সিট নিলে বছরে ভাড়া লাগে ২ হাজার ৮শ টাকা। আর বাহিরের মেসে সিট নিলে ১০/১২ হাজার টাকা লাগে। সেবার মান খারাপ হলেও ১০গুন টাকা সাশ্রয় হয়।
এ দিকে গৌরীপুর সরকারি কলেজের চারদিকেই দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে আছে প্রস্তাবিত লিখা অসংখ্য সাইনবোর্ড। ভবন না হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব সাইনবোর্ডই রক্ষা করছে কলেজের ভূসম্পত্তি। প্রস্তাবিত লিখা রয়েছে অধ্যক্ষ মহোদয়ের বাসভবন, প্রস্তাবিত ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, বিবিএ ভবন, হিসাবরক্ষণ বিভাগ ভবন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ভবন, শিক্ষক মিলনায়তন।