প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হই আর বিভিন্ন কারণে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের আত্মীয়স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাদের জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা শুশ্রুষা করা এবং তার জন্য উপযুক্ত খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া ইসলামি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহপাক যাদের সুস্থ রেখেছেন তারা প্রতিনিয়ত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কেননা সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নেয়ামত।
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক পুণ্যের কাজ। হাদিসে এসেছে হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি মহানবি (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি শরিফ)।
রোগীর সেবা-যত্ন করাকে আল্লাহ ও তার রাসূল অনেক পছন্দ করতেন। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্নকে স্বয়ং আল্লাহতায়ালার সেবা-যত্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ।
হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডেকে বলবেন-হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে (সেবা-যত্ন করতে) আসনি। মানুষ বলবে-হে প্রভু! আপনি রাব্বুল আলামিন, আমি কীভাবে আপনার সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল; কিন্তু তখন তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবা-যত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম ও মিশকাত)।
রোগীর সেবা-যত্ন করার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমরা যখন কোনো রোগীকে দেখতে যাব তখন তার পুণ্য কর্মগুলো স্মরণ করে কথা বলতে পারি। কেননা হাদিসে এসেছে-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বলো ফেরেশতারা তার ওপর আমিন আমিন বলে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)।
রোগী দেখতে যাওয়া ও তার সেবা করায় অনেক পুণ্য নিহিত এমনকি আকাশ থেকে ফেরেশতাও তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। যেভাবে হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তখন আকাশ থেকে এক ফেরেশতা তাকে লক্ষ করে বলতে থাকে, মোবারক হও তুমি এবং মোবারক হোক তোমার এ পথচলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে।’ (ইবনে মাজাহ)।
রোগীর সুস্থতার জন্য আমাদের দোয়া করতে হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তার নিয়ম এ ছিল যে, যখন তিনি কোনো রোগীকে দেখতে যেতেন তখন বলতেন-‘লা-বা’সা তুহুরুন ইনশাআল্লাহ।’ অর্থ : ‘ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানিতে আরোগ্য লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ডান হাত রোগীর শরীরে বোলাতেন এবং বলতেন-‘আজহাবিল বা’সা রব্বান নাসি, ওয়াশফি আনতাশ শাফি, লা শিফাআ’ ইল্লা শিফা উকা শিফাআ’ লা ইউগাদিরু সুক্বমা। অর্থ : ‘হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতীত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকি রাখে না কোনো রোগ।’ (বুখারি, মিশকাত)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন অসুস্থদের কষ্ট দূর করে আরোগ্য দান করেন আর আমাদের তার নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখেন এবং সব বালামুসিবত থেকে মুক্ত রাখেন, আমিন।