হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের মেডিকেল স্কুলের মর্গ থেকে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের সর্বোচ্চ আদালত। এছাড়া মরদেহ দানকারী পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন বলেও রায় দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৬ অক্টোবর) ম্যাসাচুসেটস সুপ্রিম জুডিশিয়াল কোর্ট নিম্ন আদালতের একটি আগের রায় বাতিল করে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় এই অপরাধ থেকে দায়মুক্ত নয়।
আদালত আরও ঘোষণা করেছে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অ্যানাটমিকাল গিফট প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্ক এফ. সিচেটি-ও আইনি দায়ে পড়েছেন।
প্রধান বিচারপতি স্কট এল. ক্যাফকার তার রায়ে ঘটনাটিকে ‘বহু বছর ধরে চলা এক ভয়াবহ ও বিকৃত চক্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন। মামলার মূল অভিযুক্ত, হার্ভার্ড মর্গের সাবেক ম্যানেজার সেড্রিক লজ, গবেষণা ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে দান করা মৃতদেহগুলো থেকে অঙ্গ কেটে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করতেন।২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় ১২টি মামলা দায়ের করেছেন ৪৭ জন পরিবারের সদস্য, যাদের প্রিয়জনদের দেহাংশ অনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদারকিতে গুরুতর অবহেলা করেছে এবং আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যানাটমির নির্দেশনা অমান্য করেছে।
রায়ে ক্যাফকার লিখেছেন, ‘দানকৃত মানবদেহের প্রতি মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও সঠিক নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা হার্ভার্ডের আইনি দায়িত্ব ছিল, যা তারা করুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে — হার্ভার্ড নিজেরাও তা স্বীকার করেছে।’
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ২০২৩ সালে লজকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এবং তার কর্মকাণ্ডকে ‘নৈতিকভাবে ঘৃণিত’ বলে অভিহিত করে।
রায়ের বিবরণ অনুযায়ী, লজ চুরি করা দেহাংশ — যেমন মাথা, মস্তিষ্ক, ত্বক ও হাড় — রাজ্য সীমানা অতিক্রম করে পাচার করতেন, যার ফলে এটি একটি ফেডারেল অপরাধের মামলায় পরিণত হয়।
এক সহযোগী মাত্র ৬০০ ডলারে দুইটি কাটা মুখমণ্ডল কিনেছিল বলে আদালত জানায়। লজ তাকে আরও মানব ত্বক সংগ্রহে সাহায্য করেছিলেন, যা পরবর্তীতে তৃতীয় এক ব্যক্তির কাছে ‘মানবচামড়ার লেদার’ তৈরির বিনিময়ে সরবরাহ করা হয়।
আরেক অভিযুক্ত ৩৯ বার মোট ৩৭ হাজার ডলার পেমেন্ট করেছিলেন, যার মধ্যে এক লেনদেনে ‘হেড নাম্বার ৭’ এবং অন্যটিতে ‘ব্রেইইইনস’ লেখা ছিল।
লজ চলতি বছরের মে মাসে চুরি করা মানবদেহ পরিবহনের এক অপরাধে দোষ স্বীকার করেছেন। তার সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে।