নেত্রকোনায় এক বছরে মোট ১ হাজার ৮২৩টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন গ্রাম আদালত। জেলার ৮৬টি ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত গ্রাম আদালতগুলোতে এ মামলা নিষ্পত্তি করা করা হয়। নিষ্পত্তি হওয়া এসব মামলার মধ্যে পারিবারিক, দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধবিষয়ক অভিযোগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদার জানান, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত গ্রাম আদালতগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত বিচারপ্রার্থীরা মোট ১ হাজার ৯৭৬টি আবেদন জমা দেন। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।
আবেদনকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ নারী (৪৪৪ টি মামলা) এবং ৭৫ শতাংশ পুরুষ (১ হাজার ৩৩২টি মামলা) ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে আদালতের বিচারপ্রার্থীরা মোট ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।
স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক আরিফুল ইসলাম সরদারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়া এভিসিবি-৩ প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ ও আতিকুল ইসলামসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে জারিয়া ইউনিয়ন গ্রাম আদালত সর্বাধিক মামলা নিষ্পত্তি করেছে। স্বচ্ছতা ও দ্রুততার কারণে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে এ ইউনিয়ন। দ্বিতীয় স্থান পাওয়া লেঙ্গুরা ইউনিয়নও স্থানীয় বিরোধ সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, আর তৃতীয় হওয়া বিশকাকুনী ইউনিয়ন ধারাবাহিক সেবা কার্যক্রমের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বিজয়ী ইউনিয়নগুলোকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বিজয়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
জানতে চাইলে লেঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, গ্রামাঞ্চলে নানান বিরোধে মানুষ হয়রানি হয়। এসব বিরোধ আদালতে গড়ালে বাদী-বিবাদী পক্ষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। কিন্তু এসব বিরোধ গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি হলে একেবারেই খরচ হয় না। আমরা এসব বিরোধ নিষ্পত্তিতে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত বেশির ভাগ মানুষই শহরে গিয়ে আদালতে বিচার চাইতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। গ্রাম আদালতের ক্ষমতার আওতায় যেসব বিচার করা সম্ভব, তা নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশ নেন।
গ্রাম আদালতের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাটো বিরোধ ও মামলা দ্রুত এবং স্বল্প খরচে নিষ্পত্তি করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ সহজে ন্যায়বিচার পেয়ে থাকেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মামলার নিষ্পত্তির হার, কার্যক্রমের গতিশীলতা, জনগণের অংশগ্রহণ ও সেবার মানের ভিত্তিতে এ মূল্যায়ন করা হয়েছে