আজ সোমবার ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মে, ১১, ২০২৫, ১:০৮ পূর্বাহ্ণ




ডাক্তার-বিচারকের সফল জননী আঞ্জুমানারা!

এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন আঞ্জুমানারা বেগম। ঠিক সেই সময়; বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। বিদ্যার পাঠ চুকিয়ে টিনের ছালা ঘরে বই-খাতা-কলমের বদলে ১৯৯০সনে শুরু হয় কড়াই-ডেকসি’র সঙ্গে নতুন জীবন। তবে দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হন তিনি। আজ তিনি সমাজের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত!
জীবনযুদ্ধ জয় করে আঞ্জুমানারা বেগম একজন সফল মা, সফল ব্যবসায়ী, সফল গৃহিনী। এ সাফল্যের জন্য তিনি সফল জননী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়মন্ত্রণালয়ের অধিনে ২০২৩ সনে উপজেলায় তিনি শ্রেষ্ঠ সফল জননী নির্বাচিত হন।
আঞ্জুমানারা বেগমের স্বামী এম এ সেলিম চৌধুরী ছিলেন ক্ষুদ্র ধানের ব্যবসায়ী। হাঁটাহাঁটি পা-পা করে স্বামীর সংসারটা গুচিয়ে নেন তিনি। সেলিম চৌধুরী হয়ে উঠেন এ অঞ্চলের একজন সফল ব্যবসায়ী। সবার পছন্দের প্রিয় ভালো মানুষও। সাফল্যের অনন্য কৃতিত্বে ছিলেন আঞ্জুমানারা বেগম। তবে তিনি চলে যান টিনের সেই রান্না ঘরের বদলে আট ফুট প্রস্থ আর বারো ফুট দৈর্ঘ্যরে রান্না ঘরটায়। যেখানে তিনি তার নতুন ঠিকানাকে সাজিয়ে তুলেন। আপদমস্তক একজন গৃহিনী হয়ে উঠেন তিনি। সংসার জীবনে কেটে যায় ২৩টি বছর। তিনি এক কন্যা আর দুই পুত্রের জননী।
সেদিন ছিলো শুক্রবার, ২৩মার্চ ২০১২। সন্ধ্যার নামার সঙ্গেসঙ্গে আঞ্জুমারানা’র জীবন-সংসারে নেমে আসে গুটঘুটে অন্ধকার। তাকে আর সন্তানদের রেখে না ফেরার দেশে চলে যান সেলিম চৌধুরী। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামের মৃত আলতাফ উদ্দিন চৌধুরী ও মৃত আজেনা খাতুনের পুত্র।
স্বামীর সংসারে শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আঞ্জুমানারা বেগম বলেন, নিজের বাড়ি আর রান্না ঘরের বাহিরে সব অপরিচিত ছিলো। স্বামী ছাড়া সমাজের নানাজনের কটু কথা আমাকে বারবার জর্জরিত করেছে। স্বামীর ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে রাত-দিন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওইপ্রান্তে ছুটেছি। যখন একা হাঁটি, তখন ভয়-আতঙ্ক সব কিছু যেন পিছু নেয়। আবার নিজে নিজেই নিজেকে শক্ত করেছি। কেননা-গন্তব্যটা তো অনেক দূর। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য কতরাত-কতদিন একাএকা কাটাতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, ছেলেপড়া ইচ্ছে ছিলো। স্বামী বললো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাও মাসে মাসে আমি তোমাকে বেতন দিয়ে দিবো। নিজের অপূর্ণতাটা সন্তানদের মাধ্যমে পূর্ণতা আনার চেষ্টা করেছি।
তার প্রথম সন্তান বড় মেয়ে তানজিনা আক্তার চৌধুরী। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে বর্তমানে জামালপুরে কর্মরত। মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিনও একই এলাকায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মরত আছেন। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ থেকে ২০১৮সনে এমবিএসসি পাস করেন দ্বিতীয় পুত্র আসাদুজ্জামান চৌধুরী। ডা. আসাদ জেনারেল প্র‍্যাকটিশনার হিসাবে এলাকায় সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। পুত্রবধূ জান্নাতুল মেহরাব কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করছেন। তৃতীয় সন্তান আরিফুজ্জামান চৌধুরী পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০