আজ সোমবার ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হারুন উর রশীদ || গৌরীপুর, ময়মনসিংহ
  • প্রকাশিত সময় : মে, ১০, ২০২৫, ১১:২১ অপরাহ্ণ




গৌরীপুরের সংগীতজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ওস্তাদ সুবোধ চন্দ্র সরকার : হারুন উর রশীদ

ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলা একটি নিরিবিলি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল, যেখানে জন্ম ও বিকাশ ঘটেছে অনেক গুণী শিল্পীর। তেমনি একজন নিরলস সংগীতসাধক ও প্রশিক্ষক হলেন ওস্তাদ সুবোধ চন্দ্র সরকার। তিনি শুধু একজন সংগীত শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন গৌরীপুর অঞ্চলের সংগীতচর্চার অন্যতম প্রধান বাতিঘর।
আমার সংগীতজীবনের শুরুর কথা বললে যাঁর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণ করতে হয়, তিনি হলেন গৌরীপুরের সংগীত প্রশিক্ষক ও সংগীত সাধক—ওস্তাদ সুবোধ কাকা।
১৯৭০-এর দশকে, যখন আধুনিক ও শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার সুযোগ মফস্বল শহরে একেবারেই ছিলনা তখন ওস্তাদ সুবোধ কাকা স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের সংগীতে আগ্রহী করে তোলেন নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। ১৯৭৮ সালের দিকে আমি তাঁর সান্নিধ্যে আসি এবং সংগীতের প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করি। তখন আমি সংগীত বলতে শুধু গান গাওয়াকেই বুঝতাম, কিন্তু উনার কাছে গিয়ে বুঝতে শিখি—সংগীত মানে কেবল সুর নয়, তা এক গভীর আত্মিক সাধনার পথ। তিনি খুব কঠোর ছিলেন কিন্তু অত্যন্ত মমতায় আমাদের তালিম দিতেন। তিনি আমাকে শুধু সুর ও তাল শেখাননি, শেখান সংগীতের প্রতি সম্মান, ধৈর্য্য এবং মানুষের প্রতি ভালবাসার মানসিকতা।
গৌরীপুরসহ আশেপাশের অনেক সংগীতপ্রেমীর জীবনে তিনি প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছেন। বহু ছাত্র-ছাত্রী তাঁর হাত ধরে সংগীতের প্রথম পাঠ গ্রহণ করে আজও সংগীতচর্চা করে যাচ্ছেন।তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে মঞ্চে গান গেয়েছেন, কেউ কেউ রেডিও ও টেলিভিশনেও গান করেছেন, আবার কেউ কেউ সংগীত শিক্ষক হিসেবে নিজ নিজ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এই সব কিছুর পেছনে ছিল সুবোধ কাকার নিরলস পরিশ্রম ও নিঃস্বার্থ উৎসর্গ।
গৌরীপুরের মঞ্চে, প্রভাতফেরিতে কিংবা কোন গানের আসরে—সর্বত্রই বিচরণ ছিল সুবোধ কাকার।নিজের প্রচার বা স্বীকৃতির পেছনে কখনো ছুটতেন না। গৌরীপুরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি নিজে গান করতেন, কখনও কখনও হারমোনিয়ামে সঙ্গত দিতেন, কখনো তবলায় সঙ্গত করতেন আবার কখনো সেতার বাজাতেন।
স্মৃতিতে আজও ভেসে ওঠে সুবোধ কাকার বাড়ীর উঠোন, হারমোনিয়ামের সুরে ভেসে থাকা বিকেলগুলো, আর সুবোধ কাকার গম্ভীর কিন্তু স্নেহময় কণ্ঠ—”তাল ঠিক রাখ্”, “সুরে গা”। এই ছোট ছোট বাক্যই আমাদের সংগীতচর্চার ভিত্ গড়ে দিয়েছে।
এতদিন পর ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, ওস্তাদ সুবোধ কাকার মতো মানুষেরা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ড। তাঁর মতো মানুষেরা সমাজে নীরবে-নিভৃতে আলোর দিশা দেখিয়ে যান। আমরা ভাগ্যবান, এমন একজন সংগীত সাধককে আমাদের জীবনে পেয়েছি।
আজ যখন সংগীতের পথে চলি, স্মৃতির পাতায় খুঁজে পাই ওস্তাদ সুবোধ কাকার নিভৃত ভালাবাসা। তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পেরে আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ। তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা চিরকাল অটুট থাকবে।
ওস্তাদ সুবোধ কাকার অবদান গৌরীপুরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন, আছেন, এবং থাকবেন আমাদের হৃদয়ে চিরকাল।
“যে মানুষটি নীরবে বাজিয়ে গেছেন সুরের বাঁশি, যাঁর হৃদয়জুড়ে ছিল সংগীতের আরাধনা, তিনি ছিলেন আমাদের গৌরীপুরের গর্ব—ওস্তাদ সুবোধ চন্দ্র সরকার।” আমাদের প্রিয় সুবোধ কাকা।
সুবোধ কাকার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই
“গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি”




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০