ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার (১৯ এপ্রিল/২৫) হামলার ঘটনায় স্বামীকে বাঁচাতে ৯৯৯ নাম্বারে কল করেন স্ত্রী খোদেজা আক্তার। এরপরে আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী আলাল উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা-ভাংচুর করে। অবশেষে সেই বাড়ি থেকে বের হলে হামলাকারীরা পিছু নেয়। তিনি জীবন বাঁচাতে দৌড়তে থাকেন পাশ্ববর্তী গ্রাম পালান্দরের দিকে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৌড়ে রাস্তার মাঝে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন আবেদ আলী খা (৭০)। এলাকাবাসী উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। তিনি উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের হিম্মতনগর গ্রামের মৃত ছমির খানের পুত্র।
এ ঘটনায় নিহতের মেয়ের জামাই মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে রোববার (২০ এপ্রিল/২৫) গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মাযহারুল আনোয়ার। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী মো. ছাবেদ আলী সাবুকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলার হিম্মতনগর গ্রামের নিহত আবেদ আলী খানের স্ত্রী খোদেজা খাতুন জানান, তার স্বামী ওর ভাই ছাবেদ আলী ছাবুর নিকট থেকে সাড়ে ২২শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সেই জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় শনিবার (১৯ এপ্রিল/২৫) দুপুরে হামলা চালায়। আমরা দু’জন নিজ ঘরে আটকে ছিলাম। স্বামীকে বাঁচাতে ৯৯৯ নাম্বারে কল দেই। এরপরে আক্রমণ ও হামলা বেড়ে যাওয়ায় স্বামীকে প্রতিবেশী আলাল উদ্দিনের ঘরে আশ্রয়ের জন্য পাঠিয়ে দেই। সেখানে গিয়েও ছাবেদ আলী, জাবেদ আলী, আমিরুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলামসহ লোকজন হামলা চালায়। হামলা করে আলাল উদ্দিনের বাড়িঘর ভাংচুর করে। নিরুপায় হয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসলে ওরা আবারও হামলা করে। এ সময় আমার স্বামী পালান্দর গ্রামের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে যেতে থাকে। পিছন পিছনে ওরা ধাওয়া দেয়।
তিনি আরও বলেন, এরপরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাল্টা আমাদেরকে দোষারোপ করে। আসামীদের পক্ষ নিয়ে ওদেরকে বলে যায়, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। তখন যে, আমার স্বামী নিখোঁজ, ওরে ওই দিকে দৌড়াইয়া নিয়ে গেছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এরপরে পালান্দর গ্রামের লোকজন আমার স্বামীকে গৌরীপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি মারা যান।
গৌরীপুর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা গেছেন। তার শরীরে বড় ধরণের আঘাতে কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধু বামহাতে একটি কাটা ও ঘাড়ে আচড়ের দাগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের জরুরী নাম্বারে কল পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে দু’পক্ষ ছাড়াও গ্রামবাসীর সাথে কথা হয়। হামলার শিকার আলাল উদ্দিনের বাড়িতেও আমরা গিয়েছি। তখন ছাবেদ আলী ভয়ে পালিয়ে গেছে শুনেছি। আমিরুল ইসলাম মারাত্মকভাবে আহত থাকায় তার চিকিৎসার কথা বলেছি।
পালান্দার গ্রামের সাহাব আলীর পুত্র সীমান্ত রায়হান সিজান জানায়, ছাবেদ আলী রাস্তায় পড়ে ছটফট করছিলো। লোকজন উদ্ধার করে মাথায় পানি দেয়। এরপরে তারা হাসপাতালে পাঠায়। উনার বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে তাকে পাওয়া যায়। হিম্মতনগর গ্রামের আব্দুর রাশিদের পুত্র আল আমিন জানায়, ছাবেদ আলীর ওপরে ২/৩মাস পূর্বে গৌরীপুর বাজারে হামলা হলে তিনি দৌড়ে বড় মসজিদে আশ্রয় নেন। তখনও তার পাঞ্জাবী ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিলো। হিম্মতনগরের আলাল উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলেন, জীবন বাঁচাতে ছাবেদ আলী আমার ঘরে ঢুকছিলো। এরপরে ওরা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে দরজা, জানালা ও ঘরের বেড়া ও আসবাবপত্রও ভাংচুর করে। জীবন বাঁচাতে দৌড় দিলে ওরাই পিছনে পিছনে দৌড়াইয়া নিয়ে যায়। পরে রাস্তার মাঝে মারা যায়। যেভাবে হামলা করেছিলো, উনার মৃত্যু তো আমার ঘরের ভিতরেই হয়ে যেতো, অল্পের জন্য আমার ঘরের ভিতরে হয়নি।