ময়মনসিংহের গৌরীপুরে উপজেলার ভাংনামারি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল/২৫) কলেজছাত্র মারফত আলীকে (২২) সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৯ এপ্রিল/২৫) মারা যায়। নিহত কলেজছাত্র নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ধূরুয়া গ্রামের মো. কাশেম আলী ফকিরের ছেলে। তিনি শুক্রবার দুপুরে ভাগ্নির বিয়ে উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের সাকুয়া মাঝেরচর গ্রামে যান। বিয়ে শেষে ভাগ্নিকে এগিয়ে দিতে যাওয়া সময় গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ীর সামনে তার মোটরসাইকেল আটকিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মাযহারুল আনোয়ার। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ভিকটিম ও হামলাকারীরাও নান্দাইলের। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
নান্দাইলে মারফত আলী হত্যাকাণ্ডের আগেই প্রতিবেশী তানভীর তাকে হুমকি দিয়ে আসছিলো বলে নিহতের পরিবার সন্দেহ করে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে অভিযুক্ত তানভীর নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আমাকে অনর্থক দুইষ্যা লাভ নাই। আমি তো এখন কলকাতায়, যাওনের টিকিট পায় নাই। আমি মারলে তো মারবাম অন্য দুইজনরে। এর আগে অনেকেই হাসপাতালে গেছে, দেখতে যাই নাই। আর মারফত তো মরছে রোড অ্যাক্সিডেন্টে।
ঘটনার পরপরই হত্যাকারীরা নিজেদের মোটরসাইকেলটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। বর্তমানে মোটরাসাইকেলটি গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল বারেকের হেফাজতে রয়েছে। আব্দুল বারেক বলেন, একদল সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলে এসে ওই কলেজছাত্রকে কুপিয়ে মৃত ভেবে চলে যায়। পরে এলাকার লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মারফত ফকিরের বাড়ির কাছে অভিযুক্ত তানভীরের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের উসমান খাঁর ছেলে। এলাকায় তানভীরের অপকর্ম নিয়ে ফকির বাড়ির লোকজন প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের ৫ জনসহ মোট ১০ জনকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় তানভীর ও তার লোকজন। এসব ঘটনার পর তানভীর নিজের ফেসবুক আইডিতে এসে স্বীকারও করেন। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তাকে ধরেনি। পরে বিভিন্ন সময় নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অনেককেই প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এই হুমকিতে ছিল মারফতও। মারফতের ওপর হামলা করার পরপরই তানভীর নিজের ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন ইঙ্গিত করে পোস্ট দিলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। মৃত্যুর পর তানভীর নিজেকে আড়াল করতে ফেসবুক আইডিতে এসে নিজে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে সাফাই গায়।
জানা যায়, অভিযুক্ত তানভীরের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে একটি ও নান্দাইল থানায় ৬টিসহ মোট ৭টি মামলা রয়েছে। সব মামলাই গত এক বছর আগের। সব কটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ ধরতে পারেনি।