ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাশিদের প্রেমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গেল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ওই শিক্ষিকার সঙ্গে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ওই শিক্ষিকার আত্মীয়-স্বজনদের হামলার শিকার হন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আবু রায়হান ও আব্দুর রাশিদ। হামলার পরপরই আবু রায়হানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ওই শিক্ষিকার বাবা জানান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাশিদের সঙ্গে ৫/৬মাস পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে আমার সন্তানরা দ্বি-বিভক্ত মতামত দেয়ায় বিয়ের প্রস্তাব নাকচ হয়। এরপরে অন্যকোন বিয়ের প্রস্তাব আসলেই তিনি বিয়ে ভেঙ্গে দেন। শুক্রবার আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। বুধবার রাত ১২টায় তিনি ফোন দেন এবং আজকে বাসায় আসেন। আসলে তিনি একজন অফিসার হিসাবে এ কাজ করতে পারেন না। এছাড়া আমি বাসায় ছিলাম না। ছেলেদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে হয়তো ঘরের কোনস্থানে আঘাত লেগে আবু রায়হান সাহেব আহত হয়েছে। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।
হামলার শিকার মো. আবু রায়হান জানান, ওই শিক্ষিকার বিয়ে অন্যত্র ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ায় বুধবার রাতে শিক্ষিকার বাবাকে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাশিদ। মেয়ের বাবা তাকে বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানান। ফোনে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে আমি এসেছিলাম। কথা বলার এক পর্যায়ে তাঁরা আমার ওপর হামলা চালায়। এতে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি। এ সময় মারধরের শিকার হন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাশিদও। তবে তিনি মারধরের বিষয়টি চেপে যান।
এ প্রসঙ্গে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাশিদ জানান, সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রস্তাব দেন। এরপর এনিয়ে আলোচনা চলছিলো। প্রেমের কোনো বিষয় না, মেয়েটা আমাকে একটু ভালোবাসে। সেজন্য তাঁর বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বাসায় ডেকে এনে আমাদের ওপর হামলা-মারধর করবে, এটা অত্যন্ত দু:খজনক।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ইমরান আল হোসাইন। তারা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, ঘটনা শোনেছি। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আমি জানি না।
এদিকে এ হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রতিবাদ ও নিন্দা ঝড় বইছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস তার নিজস্ব আইডিতে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির দাবি জানান। তিনি আরও বলেছেন, একজন সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ২জন অফিসারের ওপর এ হামলা করা হয়েছে।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। তিনিও এ ঘটনার বিচার ও শাস্তির দাবি জানান। এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণও ঘটনার সুবিচার দাবি করেছেন।