গ্রীষ্মের দুপুর, কাঠফাটা রোদ। কাঁচি হাতে একদল যুবক খেতের আইল ধরে ছুটে চলেছে। সবার গন্তব্য দরিদ্র কৃষক চাঁন মিয়ার ধান খেত।
সেখানে পৌঁছে দেখা গেল যুবকদের দলটি কাদাপানি মাড়িয়ে কাঁচি দিয়ে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছে। দেখতে দেখতে কয়েক ঘন্টায় কেটে ফেলে কৃষক চাঁন মিয়ার দুই কাঠা জমির পাকা ধান।
বুধবার দুপুরে কাটার এই দৃশ্যের ধরা পড়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বোকাইনগর ইউনিয়নের মানিকদি গ্রামে। ধানকাটা দলের যুবকরা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী।
করোনার প্রভাবে শ্রমিক সঙ্কটে মানিকদি গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছিলেন না। খবর পেয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি(স্থগিতকৃত কমিটি) আল মুক্তাদির শাহীন দলীয় কর্মীদের নিয়ে তার ধান কেটে মাড়াই করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
ছাত্রলীগের এই দলটি শুধু কৃষক চাঁন মিয়ার ধান কেটে দিয়েছে বিষয়টি এমন নয়। করোনা পরিস্থিতিতে বোকাইনগর ইউনিয়নের কৃষক বাবু,নুরুল হক, হাসিনা বেগম, মুন্নাফ, কাসেম, সেলিম, কালাম, সিরাজ, শামসুল হক, আক্কাস আলী, এমদাদ সহ একাধিক দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে তারা।
জানা গেছে চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ধানের ভালো ফলন হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে শ্রমিক সঙ্কটে পাকা ধান গোলায় ভরতে পারছেনা দরিদ্র কৃষক। উল্টো বৈরী আবহাওয়ায় মাঠেই ধান নষ্টের উপক্রমে দিনদিন মলিন হয়ে যাচ্ছিলো কৃষকের হাসিমুখ।
এমন পরিস্থিতিতে বোকাইনগর ইউনিয়নের দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি হাতে নেন ছাত্রলীগ নেতা আল মুক্তাদির শাহীন। ধানকাটার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ২০/২৫ জনের একটা দল। খোঁজ নিয়ে তালিকা করেন দরিদ্র কৃষক ও বর্গাচাষির।
এরপর গত ৩০ এপ্রিল থেকে ছাত্রলীগ নেতা শাহীনের নেতৃত্বে ওই দলটির সদস্যরা রোযা রেখে বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের ধান কাটা শুরু করে। এরপর একটানা ১৩ দিন বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টগড়, স্বল্পপশ্চিমপাড়া, পাঠানটুলা,ত্রিশঘর, গড়পাড়া, বালুচরা,তেলিহাটি, মাইজহাটি,খাজান্দর, বাঘবেড় সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ জন দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে মাড়াই করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে ছাত্রলীগের এই দলটি।
তবে ধানকাটার কাজে অনভিজ্ঞ হওয়ায় কাঁচি দিয়ে হাতের আঙুল কেটে আহত হয়েছেন কয়েকজন। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে-পুড়ে ধান কাটায় শারীরিক ভাবে অসুস্থ্য হয়েছেন কয়েকজন। কিন্ত তারপরও থেমে নেই তাদের ধান কাটা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো কৃষকের ধান কাটা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
বোকাইনগরের বাসিন্দা কৃষক আক্কাস আলী বলেন আমি গরিব মানুষ। টেকা দিয়া ধান কাটানির খেমতা ছিলনা। চোখের সামনে সোনার ধান খেতেই নষ্ট হইতাছিলো। খবর পাইয়্যা শাহীন লোকজন লইয়্যা ধান কাইট্যা দিয়ে গেছে।
বোকাইনগরের অপর বাসিন্দা হাসিনা বেগম বলেন এমনিতেই ধান কাটানির কামলা পাইনা। পাইলেও লাগে দুই/ তিন ডবল মুজুরি। হেরমইধ্যে বান -তুফানে ধান খেতেই নষ্ট হইতাছিন। শাহীনরা আইয়া পড়ে ধান কাইট্যা দিয়া গেছে।
আল মুক্তাদির শাহীন বলেন করোনা পরিস্থিতিতে
সবাই ঘরবন্দী হলেও কৃষক কিন্ত ঘরে বসে থাকেনি।
তারা হাড়ভাঙা কষ্ট ও পরিচর্যা করে ধান উৎপাদন করেছে। তাই বৈরী আবহাওয়া কিংবা শ্রমিক সঙ্কটে দরিদ্র কৃষকের ধান যেন নষ্ট না হয় তাই আমরা রোযা রেখে তাদের ধান কেটে মাড়াই বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। দরিদ্র কৃষকের ধান ঘরে উঠা না পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।