আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : মে, ২৯, ২০২০, ১:২৮ পূর্বাহ্ণ




কবি নুরুল আবেদীনঃ ছড়ায় ছন্দে যার পথ চলা-আনোয়ার হোসেন শাহীন

আমি যে কবি, মুখে নাই ছবি
প্রকাশের অভাব,অন্তরের ভাব
লিখিয়াছি কাগজে- এটাই স্বভাব।’
কবি নরুল আবেদীন এভাবে তার ‘ছন্দলতা কাব্যগ্রন্হের মুখবন্ধ সুচনাতে উল্লেখ করেন। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি তার ভিষণ আগ্রহ।স্কুলে অন্যান্য পাঠ শেখা না হলেও বাংলা ক্লাসে কোনো কোনো কবিতা মুখস্থ না করতে পারলেও অন্তত দু-চারবার পড়ে নিতেন।যৌবনে তিনি সংগ্রামী চেতনায় যা মনে আসতো তাই লিখে ফেলতেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধ শুরু করলো। এ সময় তিনি অস্ত্র চালানোর বিষয়টি রপ্ত করেন।শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের ন’মাস রণাঙ্গনের সাথী ভাইদের সাথে থেকে সহযোদ্ধা হিসেবে বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন। ভারতে যেতে পারেননি তাই তিনি কোনো সনদ সংগ্রহ করতে পারেননি।
নূরুল আবেদীন একাধারে কবি,নাট্যকার,গল্পকার। মুলত কবি হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।সত্তর দশক থেকে তিনি লেখালেখিতে কাব্য রচনার পাশাপাশি নাটকসহ বেশকিছু ছোটগল্প লিখেছেন। চলারপথে যা দেখেন তা কুড়িয়ে এনে ছন্দে তৈরি করেন। সমাজের নানা ঘটনা তাকে দারুণভাবে অান্দোলিত করে, আলোরিত করে এবং কাঁদায়।
নরুল আবেদীনের জন্ম ১৯৫০ সনে ময়মনসিংহে গৌরীপুর উপজেলার ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রমের এক সম্ভান্ত পরিবারের। পিতা ছিলেন মো.আব্দুল গনি, মাতা জুবেদাখাতুন। আজ কেউ বেচে নেই। গৌরীপুর থেকে প্রকাশিত সুবর্ণ বাংলা,সাপ্তাহিক রাজগৌরীপুরে পত্রিকায় তার অনেক লেখা ছাপা হয়। তার জীবনে স্মরনীয় মূহুর্ত বা স্মরনীয় ঘটনা প্রসঙ্গে কবি নরুল আবেদীন বলেন, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে বড়ই ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধু ট্রেনে চড়ে নেত্রকোনা আসবেন এটি জানতে পেরে আমি আমার সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই শেখ মুজিবকে দেখবো।এসময় আমি মোহনগঞ্জে লেখাপড়া করি।মোহনগঞ্জ থেকে নেত্রকোনাের দত্ত হাই স্কুলে নেতাকে দেখবো বলে আসি। আমরা তখন অপেক্ষারত। এক সময় বিশাল দেহের অধিকারী শেখ মুজিব আমাদের সামনে হাজির হন। মাঠে ছাত্র জনতাকে তিনি শপথ বাক্য পাঠ করান।
বঙ্গবন্ধু সকলকে হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে বলেন। তিনি শপথবাক্য পাঠ করান। এ মহান নেতার সেই শপথ বাক্য আমি আজও আমার হৃদয়ে লালন করে চলেছি আমি কোনোদিন লোভে মোহে পড়েনি। তাই বার বার জনককে নিয়ে শব্দের মালা গেথে কবিতা লিখতে চেষ্টা করি।।
‘১৯৭১ সালের২৬শে মার্চ সেদিন
পূর্ব বাংলার মুক্ত স্বাধীন
বজ্র কন্ঠে জাগ্রত ধ্বনি-
সংগ্রমী নেতার কন্ঠে শুনি’।
তার লেখা ক’টি চরণ আউরিয়ে কবি নরুল আবেদীন আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘ স্বাধীন বাংলা ‘ শিরোনামে এই কবিতাটি তার প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ ‘ছন্দ লতা’য় ছাপা হয়েছে।
কবির ৩২ টি কবিতা ও ৩২ টি ছড়া নিয়ে ‘ছন্দ লতা’।কবি নুরুল আবেদীন একেবারে পল্লীর সাদামাটা সরল মানুষ। তার মধ্যে প্রচন্ড দেশপ্রেমবোধ।একারণেই তার লেখাগুলোর মধ্যে সহজ-সরল ছন্দ, ভাব,ভাষা প্রয়োগের প্রমান পাওয়া যায়। দেশপ্রেমে, প্রকৃতির ফুল-পাখি,প্রেম- বিরহ এসব তার কাব্যের উপজীব্য বিষয়।দেশপ্রেম নিয়ে এভাবেই তিনি কাব্য তৈরি করেন- ‘ কি অপরূপ সবুজ বাংলা
তোমার তুলনা নাই
মৃতিকার উপর সবুজ গালিচা
বধুর বিছানা পাই’।
আবার তিনি জন্মভূমি নিয়ে লিখেন-‘বাংলা আমার জন্মভূমি
শ্যামল বরণ দেশ
সোনার ফসল মাঠে ফলে
শান্তির নাই শেষ।’
এভাবেই তিনি প্রকৃতির রূপের বর্ননা করেন- ‘ ঝলন জবা বার মাস।
সবুজ পাতার ছাউনি গাছে
ফাঁকে ফাঁকে ফুল নাচে।’
আবার তিনি প্রেম-বিরহ উল্লেখ করেন – ‘ অন্তর আমার তুষানলে পুড়ে,
তুমি আনেক দুরে,
তোমার কথা মনে হলে
বক্ষ ভিজে অশ্রুজলে।’
প্রেমের পরিনতি তিনি এভাবে বনর্ণা করেন,-‘ ভালবেসে পেলাম অামি
শুধু দুঃখ জ্বালা
চলার পথে দুঃখের সাথী
অশ্রু গলের মালা।’
কবি নরুল অাবেদীনের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্হ ‘ছন্দলতা’ ‘রূপসী বসুন্ধরা’ । প্রকৃতি ও দেশপ্রেম নির্ভর ৭৮টি কবিতা ছড়া নিয়ে ‘রূপসী বসুন্ধরা’ বেশ সুখপাঠ্য। তার লেখা সামাজিক নাটক ‘ যুগের চাকা’,’ ব্যাভিচার’,। কাল্পনিক নাটক ‘ বিশ্বাস- অবিশ্বাস ইত্যাদি। ছড়ার গন্থ ‘ ছন্দে ছন্দে গাঁথা কাব্য গ্রন্হ ‘কি আমি পেলাম’ । বইগুলোর পান্ডুলিপি প্রস্তুত ছাপার অপেক্ষা রয়েছে। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০