এম এ ওয়াহেদ (ওয়াজেদ)
হায় তিথি-
দূর গগনে আজ তুই
হয়ে গেলে অতিথি,
একবুক অভিমান নিয়ে
কুয়াশার শুভ্র চাদর মুড়ি দিয়ে
তুই কেনো উড়াল দিলে;
তোর জন্যে কাঁদছি কতো
দেখ,আমরা সবাই মিলে।
অভিমান ভুলে তুই ফিরে আয়,
বাড়াভাত নিয়ে ডাকে তোর মায়।
ঐতো ক’দিন বাদে শহীদ মিনারে
সবাই যাবে ফুল দিতে,
তুই কি যাবি না আর বান্ধবীদের সাথে
বিজয় চিহ্ন দেখাতে;
শুনছিস্ না মা বাবার আহাজারি,
সব ভুলে তুই হয়ে গেলি ফেরারি।
দেখ,তোর জন্যে আজ
শুধু গৌরীপুর নয়,
কাঁদছে সারা বাংলার আকাশ-বাতাস,
কুসুমবাগ, বন-বিথিকায়,
নদী-সাগর, ভোরের ফুল-পাখি,
চাঁদ-তাঁরা সুদূর অলকায়।
আত্মীয়-পরিজনের হৃদকেটলির জল
কত যে বলকায়!
তোকে হারানোর যে ক্ষতি
জনম জনমে তা মোটেও পূরণ হবার নয়,
যন্ত্র দানবের উন্মাদ চালকের
হবে কি কখনও বোধোদয়?
একটি স্বর্গীয় নিষ্পাপ আফোটা কলি
কোন পরানে দিয়ে গেলো বলি!
প্রস্ফুটিত গোলাপটি একদিন
ছড়াতো সুবাস সকলের তরে,
আজ রেখে গেলো কি এক
মহা বিভীষিকাময় হাহাকারে,
মিছিলে মিছিলে ঝরছে অশ্রু প্লাবন
তাের প্রিয় শিক্ষক, বান্ধবী, সকল সুহৃদের,
থামাতে পারবে কি এ সব
ঐ যত নরপিশাচ প্রেতাত্মাদের?
একবার কি পেছন ফিরে ওরা দেখবে,
“আমরা ফুল ফোটাতে এসেছি,
ঝরাতে নয়”,
আর কত প্রাণ মৃত্যুর মিছিলে শামিল হলে
ওরা এইটুকু বুঝবে?
হায়রে তিথি-
তোদের জন্যে বানাতে পারিনি নিরাপদ সড়ক,
না কোন শান্তির পৃথিবী,
পারিস তো আমাদের ক্ষমা করে দিস্;
প্রতি বছর এদিন তোরে
একটি করে ফুল দেবো সোহাগভরে,
রাগ অভিমান ভুলে গিয়ে
তুই তা তুলে নিস্।
আমি সইতে পারছিনা আর
তোর বিয়োগ বেদনার ভার,
প্রতিদিন সড়কে পিষে কত প্রাণ ঝরে
এ দায় কার?
সৎ সাহস আছে কি দায় নেবার?
জানি না এর বিচার হবে কিনা,
হলেও তো আর তুই ফিরে আসবি না,
ওদেরও কলিজায় অনিরাময় ক্ষত হোক,
অবিরাম যন্ত্রণার রক্ত ঝরুক,
আপাতত রই এই আশে;
আলো জ্বালাতে এসে পারলি না বলে,
তাঁরা হয়ে জ্বলিস্ তুই, ওই দূর আকাশে!
একদিন বজ্র হয়ে আচমকা তুই
ওদের বুকে পড়িস্,
তোর বিচারটা সেদিন তুই
নিজের হাতেই করিস্।
—-++++++———
কবি এম এ ওয়াহেদ (ওয়াজেদ), একজন সরকারি কর্মকর্তা