আজ শুক্রবার ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : জুলাই, ৯, ২০২১, ৯:৫৭ অপরাহ্ণ




স্বল্প ব্যয়ে, অল্প সময়ে অধিক লাভের ফসলের নাম ‘কন্দাল ফসল’

শ্যামল ঘোষ, স্টাফ রিপোর্টার :
স্বল্প ব্যয়ে, অল্প সময়ে অধিক লাভের ফসলের নাম ‘কন্দাল ফসল’। পরিশ্রমও কম ফসলও বেশি। রোগবালাইয়ের তেমন আক্রমণও নেই কৃষকবান্ধব এ সফল। বাড়ির চারপাশ; বাসা-বাড়ির পরিত্যক্ত জমি। স্যাতস্যাতে, ছায়াযুক্ত জমি’র অধিক ব্যবহারের মাঠে নেমেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এদিকে গৌরীপুরে উৎপাদিত কচু, লতিরাজ লতা ও মুখী কচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর যাচ্ছে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ও রাজধানী শহর ঢাকা। ব্যবসায়ী মো. আলতাফ হোসেন খান জানান, সিলেটেও গৌরীপুরের লতা ও মুখী কচুর কদর রয়েছে। কন্দাল ফসল মানে হলো লতি কচু, পানি কচু, মুখী কচু, মিষ্টি আলু, গোল আলু। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক কৃষক গড়ে ৩৫হাজার টাকা ফসল বিক্রি করবে। ফলে এ মৌসুমে ৯ কোটি ৬২লাখ ৫০হাজার টাকা কন্দাল ফসল উৎপাদন ও বিক্রি হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার জানান, এ মৌসুমে পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে ১৬০ হেক্টর জমিতে কন্দাল ফসল চাষ হয়েছে। এরমধ্যে লতি কচু ৭০ হেক্টর, পানি কচু ৫০ হেক্টর ও মুখী কচু ৪০ হেক্টর জমিতে। প্রায় ২হাজার ৭৫০জন কৃষক কন্দাল ফসল চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার অরুণিমা কাঞ্চি সুপ্রভা শাওন জানান, কন্দাল ফসল চাষে কৃষকের সার ও কীটনাশক প্রয়োগের তেমন কোন ঝামেলা নেই। জমিতেও বারবার পরিচর্যা করতে হয় না। তাই এফসল উৎপাদনে কৃষকও আগ্রহী। অচিন্তপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. হাবিবুর রহমান জানান, মুখী কচু ক্ষেতে ৬/৭হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রায় ৪০/৪৫হাজার টাকার মুখী কচু বিক্রি করা যাবে। শুধু তিনি নন, মুখীকচু করে আরো লাভবান হয়েছেন হযরত আলী, আব্দুল কদ্দুছ, মো. মোখলেছুর রহমান। কৃষাণী রাহিমা খাতুন জানান, আমি তো বাড়ির উঠানে করেছি। জঙ্গলের ছায়াযুক্ত স্থানেও কচু হয়েছে। এসব জমিতে ইতোপূর্বে কোন ফসল হতো না। পরিত্যক্ত ছিলো। কৃষাণী আছমা আক্তার পলি জানান, দু’তিটা চাষ করে একবার লাগালেই মুখী কচু হয়ে যায়। তেমন কাটাকাটনি নাই। ফসলও ভালো হয়। তাই প্রতিবছরই আমরা মুখী কচু ও লতি কচু চাষ করি। উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম জানান, মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য জমির অধিক ব্যবহার ও পরিত্যক্ত জমিকে চাষ্যযোগ্য জমিতে পরিণত করা হয় আমরা কাজ করছে। সে লক্ষ্যে প্রথমে কন্দাল ফসল উৎপাদন করা হয়। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় (মুখি কচু) প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগ খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতিউজ্জামান।
এদিকে রামগোপালপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে কৃষক আব্দুর রশিদও তার পরিত্যক্ত জমিতে মুখী কচু চাষ করেছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবত এ জমিতে কোন ফসল উৎপাদন না করায় অনুর্বর হয়ে পড়ে। স্থানীয় অনুর্বর এ জমির নাম ‘বাইঞ্জা’। এবার মুখী কচু করেছি ফসলও ভালো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কৃষি অফিসার নীলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, পরিত্যক্ত বাইঞ্জা জমিতে ফসল উৎপাদন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জে ফসল হয়েছি। ফসলও ভালো হয়েছে।
অপরদিকে উপজেলার কলতাপাড়ার ‘চল্লিশা আলু’ দেশের পরিচিত নাম। আগাম জাতের এ আলু চাষে প্রায় ৩হাজার কৃষক ভাগ্য বদলের হাতছানি দিয়েছে। এবার কৃষকরা লতি কচু, মুখী কচু চাষেও ঝুকছেন। উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, এ ব্লকে ৬৭জন কৃষক কন্দাল ফসল চাষ করছেন। তাদের প্রত্যেকের জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। কলতাপাড়া ব্লকের কৃষক আব্দুর হাই জানান, তিনি ৩৭শতাংশ জমিতে লতি কচু করেছেন। ইতোমধ্যে ২২হাজার টাকার লতি বিক্রি হয়েছে। লাখটাকা ছাড়িয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, বোরো মৌসুমের পর আমন রোপনের পূর্বমর্হুতের ফাঁকা সময়টাকে কৃষক কাজে লাগাছে। এই সময়টুকুর মধ্যেই তারা কন্দাল ফসল করতে পারায় কৃষক উপকৃত হচ্ছেন এবং জমির অধিক ব্যবহার হচ্ছে। কৃষকের জমি পরিদর্শন শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব সরকার। কৃষকের দোরগোড়ায় সার-কীটনাশক, বিদ্যুৎ, বীজ পৌঁছে দিচ্ছেন। অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারও করা হচ্ছে। কৃষকও পরিশ্রম করছেন। তাই কাঁদামাটির বিল এখন সবুজ আর সবুজে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০