আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ১৭, ২০২০, ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ




সাহিত্যের সাথে ভাষার সম্পর্ক : লুৎফর রহমান

শুরুর সময়টাতে সাহিত্য লিখিত ছিলো না। কারণ লেখার জন্য বর্ণমালার প্রয়োজন ছিলো যার উৎপত্তি হয়েছিলো শ্রেণি বিভক্ত সমাজে। বর্ণমালা হলে সাহিত্য লিপিবদ্ধ হলো, শিল্পীর যেমন তুলি সাহিত্যিকের তেমন কলম হলো। কিন্তু এতে সাহিত্যের রূপকায়া বদলালো না। সাহিত্য ধরে রাখলো সেই ধ্বনিব্যঞ্জক শব্দ বা পদবিন্যাস। সাহিত্যের গতিশীলতা অব্যাহত রইলো কারণ জীবন গতিশীল।

আমরা জানি ভাষা দিয়ে সাহিত্যের সৃষ্টি। কিন্তু ভাষা আর সাহিত্য এক না। সমাজ গঠিত হতে কর্মের প্রয়োজন হয়েছে। মানুষকে জীবন এগিয়ে নিতে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করতে হয়েছে। ভাবের বিনিময় ঘটাতে অর্থবোধক শব্দ বা শব্দসমূহ দলবেঁধে ভাষার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়- মানুষ পশুস্তর থেকে সামাজিক স্তরে ওঠেছে শ্রমের মাধ্যমে।মানুষের চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছে মেহনত। তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে করেছে বিকশিত। মেহনত করতে গিয়ে মানুষকে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে হয়েছে।আর সহযোগিতার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে ভাষা। এই ভাষা, সমাজ ও মানবিক চিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। সাহচর্য ও ভাব বিনিময় ছাড়া জীবন ধারণের জন্য উৎপাদন সম্ভব ছিলো না, সম্ভব ছিলো না সমাজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। আবার এও সত্য সমাজ থেকে আলাদা হয়ে ভাষা টিকতে পারে না। সুতরাং ভাষা, সমাজ ও মানুষের ইতিহাস অবিচ্ছিন্ন। সমাজ ও জনগণ ভাষার অধিকারী। অন্যদিকে সমাজ ও জনগণ ভাষা-সৃষ্ট।

মানুষ ও মানুষের সমাজে পুষ্ট হয়ে ভাষা বিকশিত হয়েছে, পরিবর্তিত হয়েছে, পরিণত হয়েছে। নদীর মতো ভাষা বহমান। ভাষা বিশ্বজগতের বিকাশের সাথে, মানবসমাজের অভিজ্ঞতার বিস্তারের সাথে বিকশিত হয়েছে। মানুষের মানবীয় সম্পর্ক যেমন ক্রমাগত বিচিত্র ও উন্নত হয়েছে, ভাষার শব্দ ও পদের তেমন উন্নতি হয়েছে। সমাজ থেকে ভাষার যেমন উৎপত্তি হয়েছে ভাষাও তেমনি সমাজের পরিবর্তন ও বিকাশে সহায়তা করে আসছে।

বর্তমানে যে কোনো জাতীয় ভাষার শব্দভাণ্ডার বেশ বড়। কিন্তু আদিতে ভাষার শব্দভাণ্ডার ছিলো স্বল্প। কিন্তু স্বল্প হলেও সেদিন ভাষা মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে প্রকাশের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলো। জীবিকার জন্য হাতিয়ার যেমন সকলের সহযোগিতায় সৃষ্টি হয়েছিলো ভাষাও তেমনি সকলের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছিলো। জীবিকা আহরণের প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রত্যেকটি বস্তুর জন্য আলাদা শব্দ উচ্চারণ করেছিলো। ব্যাকরণগত পদ ব্যাবহার করেছিলো। এটা করেছিলো সে সংগঠিত উপায়ে। বাই বলা যায় মানবসমাজের অগ্রগতির উপাদান হিসেবে ক্রমবিকাশের ধারায় এসেছে ভাষা, শব্দ, পদ, ব্যকরণ। ভাষার বিশেষত্ব এই যে, সমাজ শ্রেণি বিভক্ত হয়ে গেলেও ভাষা তার সামাজিক রূপ হারায়নি।

আদি শিল্পকলার নানা উপকরণের মধ্যে ভাষা একটি। প্রকৃতিতে, জীবনযাপনে শিল্পকলায় ও সাহিত্যে ভাষার প্রয়োগ হয়েছে। শিল্পকলা বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে সুললিত ভাষা সাহিত্য সত্তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলো। সাহিত্য হচ্ছে শব্দ ও পদবিন্যাস। তবে এটাই সাহিত্যের একমাত্র পরিচয় না। সাহিত্য মূলত শিল্পকলা। শিল্পকলা মানে আটপৌরে কোনো কিছু নয়, মানুষের হৃদয়-রঙে রঙিন রূপ। মানবিকতা শিল্পের হাঁটার পথ। ভাষা ও সাহিত্যের সম্পর্ক সুগভীর। ভাষা উন্নত করেছে সাহিত্যকে আর সাহিত্য উন্নত করেছে ভাষাকে।

আমরা বলেছিলাম ভাষা ও সাহিত্য এক না। কারণ সাহিত্যের বিচার করতে গেলে শিল্পকলার বিষয়টি প্রথম আসে। আর ভাষা হচ্ছে বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও ভাবাদর্শের বাহন। সাহিত্যের সরাসরি সম্পর্ক শিল্পকলার সাথে। সব শব্দ ও পদবিন্যাসই সাহিত্য নয়। মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা শব্দ ও পদবিন্যাসে লেখলেই সাহিত্য হয় না। শিল্পকলা এসেছে জীবনের অগ্রগতির পথে সৌন্দর্য সাধনার প্রক্রিয়ায়। আর ভাষাকে আশ্রয় করে শিল্পকলা থেকে বেরিয়ে এসেছে সাহিত্য। তারপর আমরা প্রত্যক্ষ করেছি সাহিত্যের ব্যাপকতা। আজ সৃষ্টি হয়েছে সাহিত্যের বহু শাখা। এই শাখাগুলোর আধুনিক সংস্কার হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, টিভি নাটক প্রভৃতি। সুতরাং ভাষা ও সাহিত্যের পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড়। ভাষা ও সাহিত্য দ্বান্দ্বিকতায় আবদ্ধ। (চলবে)——–




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০