আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ৫, ২০২০, ৯:০৩ অপরাহ্ণ




লেংটা বাবা -মোখলেছুর রহমান

 

বহু পুরনো ও বয়োবৃদ্ধদের মুখে শুনেছি, লেংটা বাবা নামে এক লোক ছিলো। সে নাকি সবসময়ই লেংটা থাকতো। তাঁর যে প্রকৃত একটা নাম আছে তা অনেকেই জানতো না। বহুলোকের মুখে প্রচলিত হওয়ায় তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নামটা অস্তমান চাঁদের ন্যায় কোনো এক কালো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। এবং সেজন্যই সকলে তাঁকে লেংটা বাবা বলেই ডাকতো। তবে এই লেংটা বাবার একটা স্বভাব ছিলো যে, সে কারো কোনো ক্ষতি করতো না। কেউ তাকে কোনো খাবার বা কাপড়-চোপড় সেধে দিলে নিতো না। আবার তার যখন ইচ্ছে হতো তখন যারতার কাছ থেকে চেয়ে নিতো। দেখা গেছে, অনেক বড়লোকের দেয়া খাবারও সে ফিরিয়ে দিয়েছে। আবার কোনো এক ভিক্ষুকের ঘরে গিয়েও খাবার চেয়ে খেয়েছে।

কোনো একদিনের ঘটনা। এই লেংটা বাবা খুব ক্ষুধার্ত অবস্থায় এক হোটেলে গিয়ে খাবার চাইলে হোটেল মালিক তাকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এতে ওই লেংটা বাবা রাস্তার উপরে পড়ে যায় এবং আহত হয়ে ফিরে আসার সাথে সাথেই ঐ দোকানে আগুন ধরে যায়। সেই আগুন মুহুর্তের মধ্যেই সারা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার লোকজন বহু চেষ্টার পরেও যখন আগুন নেভাতে ব্যর্থ তখন ঐ লেংটা বাবাই একটা বিধবা স্ত্রীলোকের মাধ্যমে এক জগ পানি পাঠায়। এবং বলে দেয়-
′′যারে মা, এই পানিটা জ্বলন্ত আগুনে ছিটায়ে দিয়ে আয়।”
কী তাজ্জব ব্যপার! পানি ছিটানোর পর পরই সারা বাজারের আগুন মুহূর্তের মধ্যে নিভে যায়।
তারপর বাজারের সকল লোক বুঝতে পারে যে, ওই লেংটা বাবাকে অবহেলা করার জন্যই তার অভিশাপ লেগে বাজারে আগুন লেগেছে।
আরেকদিনের ঘটনা। ওই লেংটা বাবা স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করছিলো। হঠাৎ করে একটি লুঙ্গির দোকানে গিয়ে বলে- ′′এই আমারে তাড়াতাড়ি করে একটা লুঙ্গি দে।”
দোকানদার জানে যে, এই লেংটা বাবাকে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো খাবার সেধে খাওয়াতে পারেনি, কখনও কোনো পোশাকও পরাতে পারেনি। তাই আজ যেহেতু লেংটা বাবা আপনি একটা লুংঙ্গি চেয়েছে তখন দোকানদার তাৎক্ষণিক একটা ভালো লুঙ্গি বের করে দেয়। আর লেংটা বাবাও লুঙ্গি পড়ে সারা বাজার ঘুরে কিছুক্ষণ পর লুঙ্গি ফেরত দেয়। তাতে দোকানদার আশ্চর্য হয়ে যায় এবং বিনয়ের সাথে বলে-
′′বাবা আমি আপনাকে এই লুঙ্গিটা এক্কেবারেই দিয়েলাইছি। এতে আমার কোনো দাবি নাই।”
তখন লেংটা বাবা দোকানিকে বলে-
′′আরে বেটা, আমি খুশি অইয়াই তোর দোকানের লুঙ্গি পরছি। কারণ বাজারের রাস্তা দিয়ে একটা মানুষ যাইতেছিলো, হেরলাইগ্যা তোর কাছ থাইক্যা একটা লুঙ্গি চায়া নিয়া পরলাম। মাইনষের সামনে তো আর লেংটা থাহা যায়না।”
এই কথা শুনে দোকানদার তো অবাক। লোকে লোকারণ্য এই বাজার। আর বাবা বলে কিনা, মাইনষের সামনে লেংটা থাকা যায়না। বিষয়টা কী? তখন দোকানদার মানসিকভাবে অনেক শক্তি সঞ্চয় করে লেংটা বাবাকে বলে-
′′বাবা কিছু মনে না করলে আফনেরে একটা কথা কই?
লেংটা বাবা দোকানিকে বলে-
′′ক”
দোকানি বললো-
′′বাবা, সারা বাজার ভর্তি মানুষ, আর আফনে কইতাছুইন একটা মানুষ গেছিলো। বিষয়ডা বুঝলামনা।”
তখন লেংটা বাবা দোকানিকে বললো- ′′আরে ধুর বেটা, বাজার ভর্তি মানুষ কই দেখলি, সবতো গরু-ছাগল। দোকানি তখন অবাক হয়ে বলে-
′′মানে! বাজারে সব গরু-ছাগল? এগুলো একটাও মানুষ না?”
লেংটা বাবা বলে-
′′কেনো, তোর বিশ্বাস অয় না? দেখতে চাস?”
এই বলে লেংটা বাবা তার ডান হাতের তালু দোকানদারের সামনে মেলে ধরলো। দোকানদার তো অবাক, সে দেখছে, সারা বাজার ভর্তি গরু-ছাগল ঘাস খাচ্ছে আর বাজারের প্রধান সড়ক দিয়ে একজন আলেম সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে উত্তরদিকে যাচ্ছে।
তখন দোকানি লেংটা বাবাকে জিজ্ঞেস করলো-
′′এইলা কেলা?”
লেংটা বাবা উত্তর দিলো-
′′এইলা অইছে একজন আলেম লোক। মদনপুরের শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমি মাজারের দিকে যাইতাছে।”




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০