আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৪, ২০২০, ৬:৫৭ অপরাহ্ণ




রমজানের চাঁদ দেখার খবর শুনেই যে দোয়া পড়তে হয়

ইসলাম ডেস্ক

চাঁদ দেখার খবর শুনেই- শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র রমজানের শুভ সংবাদ লাভ করে মুমিন মুসলমান। আর এদিন সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ তালাশের নির্দেশনাও এসেছে হাদিসে।

রমজানের চাঁদ দেখার খবর শুনেই হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহর কাছে মুমিনের আকুতিভরা প্রার্থনা হবে এমন-

اللَّهُمَّ سَلِّمْنِي لرمضان، وسلم رمضان لي، وتسلمه مني مُتَقَبَّلاً

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান, ওয়া সাল্লিম রামাদানা লি, ওয়া তাসলিমাহু মিন্নি মুতাক্বাব্বিলা।’ (তাবারানি)

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে শান্তিময় রমজান দান করুন। রমজানকে আমার জন্য শান্তিময় করুন। জন্য রমজানকে শান্তিময় করে দিন। রমজানের শান্তিও আমার জন্য কবুল করুন।

বৈশ্বিক মহামারি ক’রো’না ভা’ইরা’স মুক্ত শান্তিময় রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতই চাই তোমারে কাছে হে প্রভু!

চাঁদ দেখা সাপেক্ষেই শুরু হবে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। যারা রহমতের মাস রমজানের নতুন চাঁদ দেখবে তারা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পড়া সেই দোয়াটিও পড়বে। যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা রয়েছে।

হজরত তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন বলতেন-

اَللهُ اَكْبَرُ اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়াত্তাওফিকি লিমা তুহিব্বু ওয়া তারদা রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ মহান, হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদয় কর। আর তুমি যা ভালোবাস এবং যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও, সেটাই আমাদের তাওফিক দাও। আল্লাহ তোমাদের এবং আমাদের প্রতিপালক।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

প্রত্যেক চন্দ্র মাসের শেষ দিন নতুন চাঁদ তালাশ করে চাঁদের সন্ধান পেলে বা দেখলেই এ দোয়াটি পড়বে মুমিন। আর এতে ওই বান্দা আল্লাহর কাছে বিশেষ শান্তি ও নিরপত্তা ও শিরকমুক্ত ঈমান লাভ করবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের খবর শোনা ও চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখিত দোয়া দুইটি পড়ার তাওফিক দান করুন। পুরো রমজানের প্রশান্তি ও নিরাপত্তা দান করুন। আমিন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী মুমিন মুসলমান বিশেষ চারটি আমল পালন ও জিকির-দোয়া করার মাধ্যমে মাসটি ইবাদতের বসন্তকালে পরিণত করবে। আমল চারটির মধ্যে দুটি মহান আল্লাহর জন্য আর দুটি বান্দার জন্য। হাদিসে এসেছে-

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্য এ মর্মে বক্তব্য দেন যে- ‘হে লোক সকল! অবশ্যই তোমাদের সামনে মহান মাস, বরকতময় মাস উপস্থিত। এ মাসে তোমরা ৪টি আমল বেশি বেশি আদায় করবে। এর মধ্যে দুইটি কাজ আল্লাহর জন্য আর দুইটি কাজ তোমাদের নিজেদের জন্য।’

কালেমা পাঠের কারণ–

এ কালেমা মানুষকে এক আল্লাহর স্বীকৃতি তথা তাওহিদের দিকে ধাবিত করে। মানুষ সবচেয়ে বড় অপরাধ শিরক থেকে মুক্ত থাকে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ যুগে যুগে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। আর আমাদের জন্য দিয়েঠেন মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। তাই কুরআন নাজিলের মাসে মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দিতেই একনিষ্ঠতার সঙ্গে সঙ্গে বেশি বেশি কালেমার তাসবিহ পাঠ করা।

ইসতেগফার করার কারণ–

আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইসতেগফার কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ ইসতেগফারের কারণে আল্লাহ তাআলা অনেক কঠিন অবস্থা থেকে মানুষকে হেফাজত করবেন।

– দেশে যদি খড়া বা বিপর্যয় তৈরি হয় তবে- আকাশ থেকে মেঘ বর্ষণ করবেন। দেশ মরুভূমি হবে না। বরং সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।

– নিজেদের আয় রোজগার বেড়ে যাবে। কখনো অভাব আসবে না।

– সন্তান-সন্তুতি না থাকলে আল্লাহ সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।

– পরিবেশেকে সবুজময় করে দেবেন।

– পরিবেশকে সুন্দর করতে নদি-নালা প্রবাহিত করাবেন।

– নিজেদের দুই আমল
– আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা।

– জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।

জান্নাত চাওয়ার কারণ–

জান্নাত তো মুমিনের আসল ঠিকানা। যে ঠিকানায় বসাবাসে মুমিন কখনো বৃদ্ধ হবে না। ব্যবহারের কোনো জিনিসপত্র পুরনো হবে না। যেখানে বিরাজমান থাকবে মধুমিশ্রিত নদী। মদের ফোয়ারা। যে মদ পানে দুনিয়ার মতো মাতাল হবে মানুষ। সেখানে শেষ হবে না মানুষে যৌবন।

– আল্লাহর জন্য দুই আমল

– কালেমার সর্বোত্তম তাসবিহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله পাঠ করা।

– আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।

হাদিসে পাকে এ জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চায় না আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রাগান্বিত হন।’ তাই জান্নাত লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আকুতি জানাতে হবে।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া–

আল্লাহর কোনো বান্দা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে, এটা মহান আল্লাহ নিজেও পছন্দ করেন না। পরকালের চিরস্থায়ী জীবন যেন আল্লাহর ভয়াবহ আজাবে পরিণত না হয় সে জন্যেই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে। আর ক্ষমা প্রার্থনাকারী মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটিতে ঘোষিত ৪টি আমলের যথাযথ বাস্তবায়নে এ দোয়াগুলো পড়া জরুরি। যা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-

– বেশি বেশি কালেমার এ তাসবিহ পড়া

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

– বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা। সাইয়্যেদুল ইসতেগফারসহ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।

অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’

উচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।’

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী, দয়াবান।’

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতিত কোনো ক্ষমাকারী নেই।’

– জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আদখিলনাল জান্নাতা ওয়া আঝিরনা মিনান নার।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান নার।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।’

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ঘোষণা করেন- ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার জান্নাতের আশা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবে, জান্নাত-জাহান্নামও আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তির দোয়া কবুলে সুপারিশ করবে।

হে আল্লাহ! পুরো রমজান মাসজুড়ে উল্লেখিত বিশেষ চারটি আমল ও দোয়াগুলো যথাযথ পালনে আপনার তাওফিকের বিকল্প নেই। যে আমলগুলো করতে শাবান মাসের শেষ দিন বিশ্বনবি সাহাবায়ে কেরামকে নসিহত পেশ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পুরো রমজান মাসজুড়ে রোজা পালন, ফরজ ও নফল নামাজ, জিকির-আজকারের পাশাপাশি বিশেষ ৪ আমল ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দোয়াগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০