আজ শুক্রবার ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ১৫, ২০২১, ৯:৪৪ অপরাহ্ণ




ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিব মৃত্যুর পর কেউ খবর রাখেননি! : বঙ্গবন্ধু’র ভাষ্কর্যের পাহাড়ায় গৌরীপুরের জামাই!

প্রধান প্রতিবেদক :
কাল বুধবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মোৎসব। সারাদেশ চলছে জন্মশর্তবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও। তবে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বঙ্গবন্ধু’র ভাষ্কর্যের পাহারাদারের ভাগ্যে জুটছে না বেতন-ভাতা! কনকনে শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন রাত আর চৈত্রের খড়তাও দিনরাত পাহাড়া দিচ্ছেন তিনি। রোববার রাতে পাহারারত এই জামাই দিলীপ চৌহানের সঙ্গে দেখা মিললো বঙ্গবন্ধু চত্বরে। ডানেবামে জাতীয় চারনেতা, মাঝে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান! ৭১’র পঞ্চমুখ। এই ভাষ্কর্ষ স্থাপন করেন প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি।

তিনিই নিয়োগ করেছিলেন এই দিলীপ চৌহানকে। ১২হাজার টাকা মাসিক বেতনে ভালোই চলছিলো তার সংসার। নিয়োগকর্তা না ফেরার দেশে চলে যান ২০১৬সালের ২ মে। এরপর থেকে কেউ খোঁজ রাখেননি এই দিলীপের। শুধু তার নয়, বিশাল এই ভাষ্কর্য কতটুকু অবহেলিত তার দেখা মিললো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। জুতা রেখে উপরে উঠার পর বেদিতে ময়লা আর বালুস্তপে অংকিত হলো ‘পায়ের ছাপ’।

প্রদীপ চৌহানের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার সদরের বুইজ্জা বাজারে। তার বাবা মৃত কানাই চৌহান আর মাতা রাধা বিন চৌহান। বিয়ে করেন গৌরীপুর কালিখলার গৌরাঙ্গ সিংয়ের কন্যা দিপালী সিংকে। দাম্পত্য জীবনের দু’সন্তানের জনক। বড় ছেলে জয়ন্ত চৌহান (৭) পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। আর রুদ্র চৌহানের বয় মাত্র ২বছর। এলাকায় জামাই বলে খ্যাত। বাসা ভাড়া আর সন্তানদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না তিনি। শুধুমাত্র বর্তমান এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এর অস্থায়ী কার্যালয়ে এমএলএসএস হিসাবে এই দিলীপ চৌহান পাচ্ছেন ২হাজার টাকা। সংসারের খোঁজ আর সন্তানদের নিয়ে কিভাবে চলছে, এ প্রশ্ন করতেই নিঃশব্দে দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবের নাম নিতে নিতে বারবার চোখ মুছেন তিনি। তিনি বলেন, এখানে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা রয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন এর দায়িত্ব নিবেন! সেদিন আমার চাকুরীটা স্থায়ী হবে। এমন আশা নিয়ে সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে রাতদিন বঙ্গবন্ধু চত্বরের পাহারা দিচ্ছেন এ জামাই।

এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য তাকে আমি যৎসামান্য দেই। এ স্থাপনাটি পর্যটনে নেয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা হলে এ সমস্যা থাকবে না।

বঙ্গবন্ধু চত্বরে চিত্রশিল্পী মৃণাল হক সোনালী রঙে তৈরি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। দু’পাশে রয়েছেন জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাম পাশে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, ডানপাশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও অর্থমন্ত্রী এম কামরুজ্জামান। একপাশে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুনন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো পরিবারের একটি গ্রুপ চিত্রায়ন করেন মৃৎশিল্পী মোহনগঞ্জের সুকেশ কুমার। পাথর কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে অপরূপ দৃষ্টির এ ছবিটি। অন্যপাশে চিত্রশিল্পী এম.এ মাসুদ পাথরে ফুটিয়ে তুলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, রুহুল আমিন, মুন্সী আব্দুর রব, সিপাহী হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নুর মোহাম্মদ। পামবীথি সড়কের প্রতিটি গাছের গোড়ায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের অমর সৃষ্টি চিত্রকর্ম। ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের দৃর্শ্যপটে অংকিত ছবি। রয়েছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনের প্রতিকৃতি। চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন বাহাদুর পাথর কেটে চত্বরটিকে আলপনা খুদায় করেছেন। এ চত্বরটি স্থাপন করেন প্রয়াত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি।
এ চত্বর নতুন প্রজন্মের দর্শনশক্তিতে দৃষ্টির তীক্ষ্ণতায় পৌঁছে দিবে ‘একাত্তর’। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সোনালী রঙের পিতলে মোড়ানো ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। যুগযুগ অনুসন্ধিৎসা মানুষের নিকট পঞ্চ-অবয়বের আদর্শ আর ইতিহাস পৌঁছে দিবে এ চত্বর। তবে এ চত্বর দেখভালের জন্য নানা কমিটি তৈরি হলেও সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি মৃত্যুর পর নিয়মিত পরিস্কারও হচ্ছে না। পিছনের গাইডওয়ালে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মূলবেধিতেও ফাটল। পিতলের আস্তরণের মরিচার জং করে মলিন হয়ে যাচ্ছে এ চত্বরের সৌন্দর্য্য। বর্তমান সরকারের আমলেই বঙ্গবন্ধু চত্বর হারাচ্ছে সৌন্দর্য্য, জাতির জনক ও জাতীয় চার নেতার প্রকৃতি সোনালী বদলে এখন কালচে! এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি জানান, চত্বরের সৌন্দর্য্যবর্ধন ও ভাঙনরোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মিত পাহাড়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে বলে ছিলাম, কেউ দায়িত্ব নেয়নি।

টি.কে ওয়েভ-ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০