আজ শনিবার ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

||
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ৬, ২০২০, ১:৫৯ অপরাহ্ণ




অমর নায়ক সালমান শাহ নেই আজ দুই যুগ- বেঁচে আছেন লাখো ভক্তদের অন্তরে

 

মোখলেছুর রহমান,(গৌরীপুর)ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ 

“তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা”, “ও আমার বন্ধুগো চিরসাথী পথ চলার” এ জাতীয় শত শত জনপ্রিয় গানের বাস্তব জীবনধর্মী অভিনয়  নিয়ে আবির্ভাব ঘটেছিলো বাংলা সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ’র। বাংলা চলচিত্রে তাঁর আগমন হয়েছিল খুব রাজসিকভাবে। তিনি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন, হঠাৎ করেই অতৃপ্ত বাসনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন অদেখা ভুবনে। তিনি আর কেউ নন, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ অমর নায়ক সালমান শাহ।

আশির দশকে হানিফ সংকেতের ‘কথার কথা’ নামে একটা অনুষ্ঠানে মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবে মিডিয়াতে সালমান শাহ যাত্রা শুরু করেন। এছাড়া কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেন তিনি। কেন্দ্রীয় চরিত্রে না থাকলেও সালমান শাহ’র অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল বিটিভি’তে প্রচারিত ‘সৈকত সারস’ নাটকের মাধ্যমে। কে জানতো কেন্দ্রীয় চরিত্রে সুযোগ না পাওয়া ছেলেটাই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে রাজত্ব করবেন, আর দর্শকদের হৃদয়ে গভীরে জায়গা করে নিবেন?

১৯৯৩ সালে জনপ্রিয় হিন্দি ছবির স্বত্ত্ব কিনে নিয়ে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দিয়ে নির্মাণ করলেন ′কেয়ামত থেকে কেয়ামত’.রোমান্টিক জুটি হিসেবে শাবনাজ-নাঈমের তখন বেশ জনপ্রিয়তা, কিন্তু দুজনের কেউই পরিচালককে সময় দিতে পারলেন না। মৌসুমী তখন জনপ্রিয় মডেল, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান নায়িকা হিসেবে বেছে নিলেন তাকে। নায়িকা পাওয়া গেলেও নায়ক সমস্যা’র কোন সমাধান হচ্ছিলো না। তৌকির, নোবেল সবার কাছেই অফার গিয়েছিল, ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। ভাগ্যিস ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, এমন সময়ই সোহানুর রহমান সোহানের সাথে পরিচয় হলো এক তরুণের। তরুণের নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। পরিচয়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই সোহান সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন এই তরুণই হবে তাঁর সিনেমার নায়ক। এই ইমনই পরবর্তীকালের সালমান শাহ। কোন জনপ্রিয় নায়ক বা নায়িকা নয়, একদম নবাগত দুজনকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আধুনিক রোমিও-জুলিয়েটের গল্পে সিনেমায় সালমান শাহ- মৌসুমী জুটি বাজিমাত করলেন প্রথম ছবিতেই। কেয়ামত থেকে কেয়ামত হয়ে গেলো বাংলা সিনেমার ইতিহাসেই অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি।

এর পরে সালমান শাহ কে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি, নিজের স্বভাবসুলভ চাহনি, আর আধুনিকতায় নিজেকে সুপরিচিত করে তুলেছিলেন। ক্যারিয়ারে করেছিলেন মাত্র ২৭ টি ছবি, যার বেশিরভাগ সিনেমাই জনপ্রিয় হয়েছিল, কালের প্রবাহে ছবিগুলোর চাহিদা দর্শকদের কাছে বাড়ছেই। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে চাহিদা থাকলেও বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, কখনো বিক্ষোভ কিংবা মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসারের মত ছবি দিয়ে। ‘কন্যাদান’ সিনেমায় সেই সময়ের রোমান্টিক ইমেজ ছেড়ে বাবার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের চমকে দিয়েছিলেন। ′কেয়ামত থেকে কেয়ামত′, ′স্বপ্নের ঠিকানা′ ও ′সত্যের মৃত্যু নেই′,এই তিনটা ছবিই ব্যবসায়িকভাবেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে তার অভিনয়ের পাশাপাশি ‘চিঠি এলো জেলখানা’র গানের দৃশ্যে সবাই কেঁদেছেন।তোমাকে চাই, অন্তরে অন্তরে, রঙীন সুজন সখি, আনন্দ অশ্রুর মত রোমান্টিক ছবিতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। আরো আছে দেনমোহর, জীবন সংসার, স্বপ্নের পৃথিবীর মত দারুণ ব্যবসাসফল ছবি।

প্রথম ছবির পর মৌসুমীর সাথে জুটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে তা দীর্ঘায়িত হয়নি, পরবর্তীতে শাবনূরের সাথে জুটি গড়ে তোলেন, যা রুপ নেয় বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় জুটিতে। চলচ্চিত্রের গানেও রয়েছে এক বিস্ময়কর ঘটনা, উনার প্রায় সব ছবিতেই রয়েছে একাধিক জনপ্রিয় গান। সেই তালিকায় রয়েছে ও আমার বন্ধু গো, জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি, একাত্তরের মা জননী, এখানে দুজনে নির্জনে থেকে এইদিন সেইদিন, শুধু একবার, তোমাকে চাই, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনাসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

চলচ্চিত্রের দারুন ব্যস্ততার মাঝেও নাটকে অভিনয় করতেন, ′′নয়ন” নামের একটি নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। নাটকে, টেবিলের উপরে হাত প্রসারিত করে আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ছুরি দিয়ে গাঁথার একটা দৃশ্য ছিল। কথিত আছে, শুধু সালমান শাহ’র কারণে এই দৃশ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় তরুণদের ক্রেজ হয়ে গিয়েছিলো টেবিলের উপরে হাত প্রসারিত করে আঙ্গুলের ফাঁকে ছুরি গাঁথা। এতোটাই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। এমনকি তিনি যেদিন মারা যান, শোনা যায় সারা বাংলাদেশে প্রায় ২১ জন মেয়ে এই খবর শুনে আত্মহত্যা করে, আর তাই তো তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দর্শকদের আলাদা স্থান করে নিয়েছেন।

সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাঁকে খুন করা হয়েছিলো তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। মৃত্যুর এতদিন পরেও তাঁর অধিকাংশ ভক্ত মনে করেন তিনি খুন হয়েছিলেন। এ ধারণার পিছনে কারণও আছে যথেষ্ট। এমনিতেই সালমান শাহ’র সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সামিরা’র সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। মৃত্যুর পরে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছিলো সালমান আত্মহত্যা করেছেন। এই রিপোর্ট সালমানের পরিবার তো বটেই, ভক্তরাও কখনো মেনে নেয় নি, সম্প্রতিও আদালতের রায় আত্বহত্যার দিকে । মাত্র ৪ বছরের ক্যারিয়ারেই তিনি যে ঝড় তুলেছিলেন বাংলাদেশের সিনেমায় সে ঝড় হয়তো থেমে গেছে অনেক আগেই। দিন দিন বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমার অবনতি ঘটেছে, সালমান শাহ থাকলে বাংলা সিনেমা কোথায় যেতো কে জানে। অনেক কিছু হতে পারতো। কিন্তু হয়নি কিছুই। সালমান শাহ’র ভক্তদের সারাজীবনই এই আক্ষেপ বয়ে বেড়াতে হবে।

বেঁচে থাকলে সালমান শাহ্‌ আজ কোথায় থাকতেন? কেমন থাকতেন? মারা যাওয়ার সময় তাঁর যে ইমেজ ছিল তা কি তিনি ধরে রাখতে পারতেন? নাকি দর্শকদের হৃদয়ে যে জায়গাতে ছিলেন সেখান থেকে পতন ঘটতো তাঁর? নাকি সে নিজেকে প্রতিষ্টিত করতেন সেরা নায়ক হিসেবে?

অনেক প্রশ্ন? এসব প্রশ্নের উত্তর নাহয় অজানাই থাক।

সালমান শাহ যখন মারা যান, তখন আমাদের প্রজন্ম নিতান্তই ছোট, বড় হয়ে তাঁর সিনেমা দেখে তাকে ভালোবেসেছেন, প্রিয় নায়কের আসনে বসিয়েছেন। কিংবা, আমাদের পরবর্তী দশকে যাদের জন্ম, তাঁরাও ভক্ত হয়েছে, উনার সিনেমা দেখে, মাধুর্যতায় মুগ্ধ হয়ে।

বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নায়ক এসেছেন, জনপ্রিয় হয়েছেন, ভবিষ্যতেও আসবেন, এর মাঝেও সালমান শাহ অনন্য ছিলেন।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০