ইসলাম ও জীবন ডেস্ক :
নামাজ মুসলিমদের অথ্যান্ত গুরুত্ব পূর্ণ একটি ইবাদত ইসলাম গ্রহন করার সাথে সাথেই বালেগ পুরুষ ও নারীর উপর নামাজ পড়া ফরজ তাই প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির নামাজ পড়ার নিয়ম জানা থাক আবশ্যক।
নামাযের স্থান ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর নামাযের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন, অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে আপনি কোন নামাজ পড়ছেন মনে মনে এতটুকু থাকাই নিয়্যতের জন্য যথেষ্ট। তবে তার সাথে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম, তারপর কিবলা অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে যাবেন যেন- দুই পায়ের গুড়ালি বরাবর থাকবে এবং দুই পায়ের মাঝে চার আংগুল বা আধা হাত ( জামাতে একজন আর একজনের পায়ে-পা ও কাঁধে – কাঁধ লাগিয়ে ) পরিমাণ ফাকা থাকবে এবং নিম্নবর্ণিত কর্মগুলো করবেন:
১। সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রেখে তাক্বীরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।
( এ ক্ষেত্রে হাতের আংগুলগুলো সাভাবিক অবস্থায় ক্বিবলা মুখি থাকবে আর উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের লতি বরাবর থাকবে। তারপর হাত নামিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বরা হালকা বানিয়ে বাম হাতের কবজি ধরবে আর বাকী আঙ্গুলগুলো বাম হাতের উপর রাখবে। অতঃপর নাভির নিচে বাধবে। দাড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে সেজদার জায়গায় । ‘ইমাম আবু হানিফার মতানুসারে’ )
৩। তাকবীরের পর নামায শুরুর একটি দু’আ পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দু’আটি ( ছানা) নিম্নরূপ:
উচ্চারণ:
সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: “প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি। আপনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই”।
ইচ্ছা করলে উক্ত দু’আর পরিবর্তে এই দোআ পড়া যাবে:
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মা বাইদ্ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা’আত্তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কামা য়ুনাক্কাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্সিল্নী মিন্ খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্ ছালজি ওয়াল বারাদি”।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমাকে ও আমার গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন”। (বুখারী ও মুসলিম)
৪। তারপর বলবেন:
উচ্চারণ:
“আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম”।
অর্থ:
“আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।” এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:
উচ্চারণঃ
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন আররহমানির রহীম মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়্যাকানা’বুদু অইয়্যাকানাসতাইন। ইহদিনাছছিরতল মুসতাকীম। ছিরতল্লাযিনা আনআ’মতা আলাইহিম গইরিল মাগধুবি আলাইহিম। অলাদ্দল্লিন। আমীন
অর্থ:
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।”
৫। তারপর কুরআন হতে মুখস্থ যা সহজ তা পড়বেন। যেমন:
উচ্চারণঃ
ইজাযা আনাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ। ওয়ারা আইতান্নাসা ইয়াদখুলুনা ফি-দ্বীনিল্লাহি আফওয়াজা। ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগফিরহ। ইন্নাহু কা’না তাওয়্যাবা।
অর্থ:
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালককর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।”
৬। তারপর
আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে ( হাতের আংগুলগুলো ফাকা রেখে দুই হাত দ্বারা উভয় হাটুকে ভালভাবে আকড়ে ধরবে) মাথা, পিঠ ও মাজা সমান থাকবে কোন উঁচু নিচু থাকবে না। রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি থাকবে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে। তারপর রুকুর তাসবীহ পড়বেন-
উচ্চারণ:
“সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম”
(পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি) তাসবীহ’র পর অতিরিক্ত দোয়া পড়া উত্তম। যেমন
আরবি উচ্চারন –
বাংলা উচ্চারন –
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।”
অর্থ :
হে আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব! তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি, তুমি আমাকে মাফ কর।
এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার পাঁচ বার , সাত বারও বলা সুন্নত।
৭। তারপর বলবেন:
উচ্চারণ:
“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ”
(আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা করল) বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে বলতে হবে:
”رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ مِلْءَ السَّماَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ ما بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ“
উচ্চারণ:
রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান তাইয়্যেবান মুবারাকান ফীহ, মিল্ আস্সামাওয়াতি ওয়া মিলআলআরযি, ওয়ামিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শী’তা মিন শাইয়িন বা’দু”।
অর্থ:
“হে আমার প্রতিপালক! প্রশংসা আপনারই জন্য, প্রচুর প্রশংসা, যে প্রশংসা পবিত্র-বরকতময়, আকাশ ভরে, যমীন ভরে এবং এ উভয়ের মধ্যস্থল ভরে, এমনকি আপনি যা ইচ্ছে করেন তা ভরে পরিপূর্ণরূপে আপনার প্রশংসা”।
আর যদি মুক্তাদী হয় তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে উপরোল্লেখিত দু’আ رَبَّنَا ولَكَ الْحَمْد …. (রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদু…) শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
৮। তারপর
(আল্লাহু আকবর) বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা রেখে সেজদা করবেন। সেজদায় যাওয়ার সময় দুই হাতে হাটু ধরে সর্বপ্রথম উভয় হাটু একত্রে জমীনে রাখবে। তারপর হাতের আঙ্গুলগুলো মিলানো অবস্থায় দুই হাত জমীনে একত্রে রাখবে। এবং চেহারার চওড়া অনুযায়ী দুই হাতের মাঝে ফাঁকা রাখবে।তারপর দুই হাতের মাঝে সেজদা করবে প্রথমে নাক তারপর কপাল রাখবে উভয় হাতের শধ্যখানে বৃদ্ধ আঙ্গুলদ্বয়ের বরাবরে নাক রাখবে । নজর নাকের উপর রাখবে । পুরুষের পেট রান থেকে বাহু পাজর থেকে হাতের কনুই জমীন থেকে পৃথক রাখবে। পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করে রাখবে এবং দুই পায়ে গুড়ালি মিলিয়ে না রেখে বরং টাকনু কাছা কাছি রাখবে। যথা সম্ভব পায়ের আঙ্গুলগুলো জমীনের সাথে চেপে ধরে আঙ্গুলের অগ্রভাগ ক্বিবলার দিকে রাখবে। সেজদা পরিপূর্ণ হয় সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা তিন বারেরও বেশি এই দুআ পড়বেন।
উচ্চারণঃ
“সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা ”
(পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান প্রতিপালকের) বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দু’আ করবেন। যেমন –
এছাড়া দুই সেজদার মাঝখানে বসে পড়লে খুবই উত্তম একটি দোয়া যা হাদীস থেকে প্রমাণিত।
উচ্চারণ :
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ-ফিরলী।
অর্থ :
হে আল্লাহ! তুমি পাক পবিত্র, হে আমাদের রব! তোমার প্রশংসা সহকারে ফরিয়াদ করছি। তুমি আমাকে মাফ কর।
৯। তারপর
(আল্লাহু আকবার) বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। প্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠাবে। তারপর বাম পা জমীনে বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর ডান পা দার করিয়ে রাখবে । পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে জমীনে রাখবে। দুই হাত উভয় রানের উপর রাখবে। হাতের আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁকা রেখে আঙ্গুলের মাথার অগ্রভাগ হাটুর কিনারা বরাবর রাখবে। তারপর এই দুয়া বলবেন,
অথবা
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মাগর্ফিলী ওর্য়াহামনী ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহ্দিনী ওয়াজবুরনী ওয়ারফানি”।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন”।
১০। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সেজদা করবেন এবং প্রথম সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।
১১। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন। (এই ভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ হবে।)
১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু করবেন এবং দুই সেজদা করবেন, অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই করবেন।
১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজ্দা থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজ্দার মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্হুদের এই দু’আ পড়বেন:
উচ্চারণ:
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সলাওয়াতু ওয়াত্তাইয়েবাতু, আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সলেহীন, আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ”।
অর্থ :
“সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
( তাশাহ্হুদ পড়ার সময় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা হালকা গোল বৃত্য এর মতো বানাবে এবং ( শাহাদাত অঙ্গুলি প্রতিনিয়ত নাড়াতে হবে হাদিসে এসেছে যে এভাবে শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়ালে শয়তান খুব কষ্ট পায় ‘শাফেই , মালেকি ও হাম্বলি মতে এমনটাই বলা হয়েছে’)
اشهد الا اله
বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি উঠাবে الا الله বলার সময় নামিয়ে ফেলবে। বাকী দুটি আঙ্গুল তালুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। )
তবে নামায যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়। যেমন: ফজর, জুমআ, ঈদ তাহলে আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ….. পড়ার পর একই বৈঠকে এই দরূদ পড়বেন:
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।” আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত”।
তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।
উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।
তারপর চারটি জিনিস থেকে এই বলে পানাহ চাইবেন:
উচ্চারণ:
“‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বিল কাবরি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিৎনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত, আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিনাল মা’ছামী ওয়াল মাগরাম |” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি অবশ্যই আপনার নিকট জাহান্নাম ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। দজ্জালের ফিত্না এবং জীবন মৃত্যুর ফিত্না থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
উক্ত দু’আর পর ইচ্ছেমত দুনিয়া ও আখিরতের কল্যাণ কামনার্থে মাসনুন দু’আ পড়বেন। ফরয নামায হোক অথবা নফল সকল ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য।
আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখখারতু, অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু, অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী; আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা’ ,মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
অন্যান্য দুআ :
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনান্না-র’ । (আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৮৬৫।)
আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র’ অথবা
আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া . বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; বাক্বারাহ ২/২০১; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯।
তারপর প্রথমে ডান পাশে এবং বাম পাশে (গর্দান ঘুরিয়ে) সালাম ফিরাবে । সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁধের দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে। ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশতাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশতাদের ।
উচ্চারণ:
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন।
আর নামায যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না ফিরিয়ে) “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি…. পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে প্রথম দু’ রাকাতের মত রুকু ও সাজদা করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ তাশাহ্হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নীচে রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ……, ও দরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দু’আও পড়বেন। এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, একই ভাবে বাম দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন। আর এভাবেই নামায সম্পন্ন হয়ে যাবে।
নামায শেষে তাসবীহ
হাদীসের আলোতে নামায শেষে তাসীহপাঠের ফযীলত :
১.হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-“দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের নিকটে এসে আরয করলেন, সম্পদশালীরা জান্নাতের সমুচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত লাভের আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেলেন!’ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিভাবে তারা অগ্রগামী হয়ে গেল? সাহাবীরা বললেন, ‘নামায-রোযা ইত্যাদি আমল আমরাও করি, তারাও করেন, কিন্তু সম্পদশালী হওয়ার কারণে তারা দান-সদকা করে থাকেন, ক্রীতদাস মুক্ত করে থাকেন, যা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় শিখিয়ে দিব যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামী হয়ে যাবে আর ওই আমল করা ছাড়া কেউ তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হতে পারবে না? তারা বললেন, ‘অবশ্যই বলুন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম! নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম ‘বললেন তোমরা প্রতি নামাযের পর তেত্রিশ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়বে’।”
বর্ণনাকারী বলেন, “কিছুদিন পর মুহাজির সাহাবীগণ পুনরায় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লুাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম! আমাদের সম্পদশালী ভাইরা এই আমল সর্ম্পকে জানতে পেরেছেন এবং তারাও তা করতে আরম্ভ করেছেন!’ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম তখন বললেন,‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করে থাকেন’।” (সহীহ মুসলিম)
২.হযরত কা’ব ইবনে ইজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম বলেন-নামায শেষে বাক্যগুলি যে পাঠ করে সে নিষ্কাম হয় না। বাক্যগুলো হল-তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ, চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার।’ (সহীহ মুসলিম)
নামায শেষে দোয়া
১. সালাম ফিরানোর পর ৩ (তিন) বার আস্তাগফিরুল্লাহ (َسْتَغْفِرُ اللَّهَا) এবং
২. একবার আল্লাহু আকবার (اَللهُ اَ كْبَرُ)
৩.এরপর-পড়তে হয়-
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلاَلِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাছ সালামু ওয়া মিনকাছ সালামু তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ : হে আল্লাহ! শান্তির উৎস তুমি, তোমার থেকেই আসে শান্তি। হে প্রতাপশালী মহা মর্যাদার অধিকারী।
তুমি বড়ই বরকতময়-প্রাচুর্যশালী।
দোয়ার পদ্ধতি :
দু’আর শুরু ও শেষে আল্লাহতায়ালার হামদ-ছানা ও নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করা উচিত। বিনয় ও ন¤্রতার সঙ্গে কেঁদে কেঁদে দোয়া করা উচিত এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহতায়ালা আমাদের দোয়া শোনেন এবং কবুল করেন। তিনিই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দান করেন এবং সকল প্রয়োজন পূরণ করেন। আল্লাহ ছাড়া দোয়া কবুলকারী ও বিপদ থেকে পরিত্রাণকারী আর কেউ নেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-“আমি নামাজ পড়ছিলাম। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন। যখন আমি বসলাম তো প্রথমে আল্লাহতায়ালার হামদ-ছানা করলাম এবং নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পড়লাম। এরপর নিজের জন্য দোয়া করলাম। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘প্রার্থনা কর, তোমার প্রার্থনা মঞ্জুর হবে। প্রার্থনা কর, তোমাকে দান করা হবে’।” (জামে আত-তিরমিযী)
সাহু সাজদা :
যদি ভুলক্রমে নামাজের কোনো ফরয আগ-পিছ হয়ে যায় কিংবা কোনো ওয়াজিব বাদ পড়ে যায় অথবা নামাযি রাকা’আত-সংখ্যা ভুলে যায় তাহলে সাহু সেজদা করলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজগুলো করলে নামায ভেঙ্গে যাবে এবং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।
সাহু সাজদার নিয়ম :
সাহু সাজদার পদ্ধতি হল, নামাযের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর একদিকে (ডান দিকে) সালাম ফিরিয়ে দু’টি সাহু সাজদা করবে। এরপর আত্তাহিয়্যাতু ও দরূদ শরীফ ও দোয়া পড়ে