আজ শনিবার ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আশরাফ তুঙ্গে ওমরা হজ্জে নেয়ার প্রলোভনে,প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২ তারাকান্দায় দু’মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত-১ মে দিবসে গৌরীপুরে ডেকোরেটর কারিগর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্ণিল শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে রাজ ওস্তাগার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণিল শোভাযাত্রা বিশ্ব শ্রমিক দিবসে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে গৌরীপুরে জাতীয় শ্রমিক লীগের বর্ণিল শোভাযাত্রা অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে: শেখ হাসিনা কৃষিবিদ ড. সামীউল আলম লিটনের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী গৌরীপুরে বিশ্ব নৃত্য দিবস পালিত
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ৬, ২০২০, ২:৩৪ অপরাহ্ণ




সজিনা পাতা ও শোলকা

কৃষিবিদ মোঃ নুরুল আজীজ:

সজিনা পছন্দ করে না এমন বাংলাদেশী বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমাদের দেশে সবজী হিসেবে সজিনা যতটা সমাদৃত ও জনপ্রিয় সজিনা পাতা শাক হিসেবে সেই অর্থে অনেক পিছিয়ে। কিন্তু আমরা যদি সজিনা পাতার গুনাগুন বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব তা সজিনার পুষ্টির চেয়ে কোন অংশে কম না।
এখন আসুন জেনে নেই সজিনা পাতার গুণাগুণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার। নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন।

পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনোসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।

এক টেবিল চামচ শুকনা সজিনা পাতার গুঁড়া থেকে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন-এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবর্তী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম। আফ্রিকান দারিদ্র পীড়িত দেশগুলোতে গর্ভবর্তী বা স্তনদাত্রী মায়েদের খাদ্য তালিকায় সজনে পাতার গুঁড়া রাখা হয়।

এখন আসি আমাদের উত্তরাঞ্চলের গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী বিশেষ তরকারী শোলকার কথায়। বাংলাদেশের অন্য কোন এলাকায় তরকারী তৈরিতে সজিনা পাতা ব্যবহার হয় কিনা আমার জানা নেই কিন্তু উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী,লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ঐতিহ্যবাহী শোলকা তৈরির অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ উপকরণ হ’ল সজিনা পাতা।

যারা জানেন না তাদের জন্যে শোলকা তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ ও পদ্ধতি তুলে ধরছি। শোলকা তৈরিতে সজিনা পাতা ছাড়াও আরো কিছু রকমারি শাকের পাতা যেমন- পাট , কচু , ডাটা ও পেইপোল শাকের কচি পাতা ও চাম ঘাস ইত্যাদি । এছাড়াও কাঁঠাল বিচি,কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন, পানি, লবন ও খাবার সোডা ব্যবহার করা হয়। মজার ব্যাপার হলো শোলকা তৈরিতে কোন তেল ব্যবহার করা হয় না। শোলকায় শাক জাতীয় উপকরণগুলি আমাদের মা,দাদী ও নানীরা হাত দিয়ে মুঠি করে ধরে পরম মমতা দিয়ে বিশেষ চাকুদিয়ে এমন মিহি চিকণ ভাবে কাটতেন যেন তা রীতিমত একটা হস্তশিল্প। যদিও মা মারা যাওয়ায় অনেক শখ আহ্লাদ মরে গেছে।

শোলকা তৈরির জন্যে ডেকচি/পাতিলে পানি দিয়ে তাতে রুচিমত কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন, লবন ইত্যাদি দিয়ে তাপ দিতে হয় । কেউ যদি কাঁঠালের বিচি শোলকাতে দিতে চান এই সময় দিতে পারেন । পানি বলক দিলে অর্থাৎ ফুটে বাস্প হওয়ার পর্যায়ে এলে মিহি চিকণ করে কাটা শাকজাতীয় উপকরণ গুলি দেওয়া হয় এবং এই সময় দ্রুত সিদ্ধ করার জন্যে ডেকচি/পাতিলের মুখ ঢেকে দিতে হয়। শোলকা তৈরির শেষ পর্যায়ে তাতে খাবার সোডা দিতে হয়।

শোলকার কথা লিখতে বসে আমার ছেলেবেলার একটা গল্পের কথা মনে পরে গেল। আমাদের সময় ভাই- বোন, বন্ধু-বান্ধব এদের মধ্যে ‘ট’ দিয়ে কথা বলার একটা অভ্যেস ছিল। অপরিচিত কারো সামনাসামনি হলেই শুরু হয়ে যেত ‘ট’ দিয়ে কথা বলা।

যাই হোক, এরূপ ‘ট’ দিয়ে কথা বলা একটি পরিবারের মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে । বাবার কড়া নির্দেশ পাত্র পক্ষের সামনে যেন তার কোন ছেলে মেয়ে কথা না বলে। মেয়ের বাড়ীতে পাত্র পক্ষ এলে কেউ আর কথা বলে না এদিকে পাত্র পক্ষ মেয়ের পরিবার বোবা বলে মনে মনে ভাবতে থাকে যদিও ঘটক মেয়ের পরিবার লাজুক বলে এরূপ রহস্যময় আচরণ ঢাকবার চেষ্টা করে। এরপর যখন মেয়েকে পাত্রের সামনে আনা হল তখন পাত্রের পরিবার পাত্রীর অতিরঞ্জিত চুলের প্রশংসা শুরু করল। এরূপ অবস্থায় অতিরঞ্জিত প্রশংসার চাপ/ ঠেলা সহ্য করতে না পেরে পাত্রী মুখ ফসকে ‘ট’ দিয়ে বলে ফেলে ‘মাথায় তো তেল দেইয়ি নাই’

এই গল্পটি এ কারনেই বললাম যে, শোলকা তৈরির একটিমাত্র উপকরণ সজিনা পাতা সম্প্রতি আবিষ্কৃত এর যে গুনাগুন তাতেই যে অবস্থা পুষ্টিবিজ্ঞানীরা যদি আমার এই অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের যুগ যুগ ধরে ভক্ষিত গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী বিশেষ তরকারী শোলকার গুনাগুন পুরোপুরি আবিস্কার করেন তাহলে না জানি কি হত? এই তরকারীটি হয়ত সারাবিশ্বে পুষ্টির ‘এটম বোমা’ হিসেবে স্বীকৃত পেতে পারত।

শেষ করব, তার আগে আপনাদের একটি রংপুরী গীত শোনাই।
কইন্যার বাপের/দাদার শোলকা খাওয়া দাঁত ওকি ছিকরে ছিক
বাইর বারুনের কাটি দিয়া খিরল করে দাঁত ওকি ছিকরে ছিক

রংপুরী বাপ/ দাদারা যদি দাঁত পরিস্কার করার ভয়ে শোলকা খাওয়া ছেড়ে দেন তাহলে তারা নিশ্চিত একটি অতি পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই বলব, গীতের কথা বাদ দেন তো বাহে হামরা ঐতিহ্যবাহী তকাই শোলকাক হারাবার চাই না, এক সারাবিশ্বে নিগাবার/ছড়াবার চাই …।




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১