বাহাদুর ডেস্ক :
‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে আকাশমণ্ডলী, পৃথিবীর সৃষ্টি, তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে’ (সূরা রুম, আয়াত ২২)।
ভাষা আল্লাহর দান ও কুদরতের নিদর্শন। ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব ভাষাই সমমর্যাদার অধিকারী। কোনো ভাষা অন্য ভাষার ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার নয়। নবীজি মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’
ভাষার এ সমমর্যাদার জন্যই আল্লাহতায়ালা সব নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন তাদের স্বজাতির ভাষায়। কুরআন শরিফে তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা দেয়’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪)।
হাদিস শরিফে আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে- নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন’ (মুসনাদে আহমদ)।
কুরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেছেন, ‘আমি কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পরো’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২)। অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবি নবী ও আরবি কিতাব নাজিল করা হয়েছে।
কারণ তাদের মাতৃভাষা আরবি; অনারবি ভাষায় নাজিল করলে, তাদের বুঝতে এবং অনুসরণ করতে সহজ হবে না।
তাফসিরে ইবনে কাসিরেও আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, ‘রাসূলরা মাতৃভাষাভাষী হওয়ার কারণ হচ্ছে, যেন তাদের জাতি রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং তারা কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, তা বুঝতে পারেন।’
সব নবী-রাসূল ছিলেন নিজ নিজ ভাষায় পাণ্ডিত্যের অধিকারী, বিশুদ্ধ ও আলংকারিক ভাষার কৃতিত্বধারী। নবীজি (সা.) ছিলেন ‘আফছাহুল আরব’ তথা আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী।
একইভাবে হজরত মূসা (আ.) তার ভাই হজরত হারুন (আ.)কে নবী ও রাসূল হিসাবে ঘোষণা করার জন্য আল্লাহর সমীপে আবেদন করে বললেন, ‘আমার ভাই হারুন সে আমার থেকে বাগ্মী, অতএব, তাকে আমার সাহায্যকারী রূপে প্রেরণ করুন, সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশঙ্কা করি, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’
আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। তারা তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পারবে না, তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শন বলে তাদের ওপর প্রবল হবে’ (সূরা কছাছ, আয়াত ৩৪-৩৫)।
ইসলাম মানুষকে তার মাতৃভাষায় বিশুদ্ধতার নির্দেশ দিয়েই থেমে যায়নি। বরং উৎসাহিত করেছে ভাষা ও সাহিত্যে উৎকর্ষ সাধনে। কারণ ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হয় ব্যক্তিত্বের শোভা ও সৌরভ। ব্যক্তির শব্দ ও বাক্য তার রুচি ও বোধের পরিচায়ক।
এ জন্য নবীজিসহ সাহাবায়ে কেরামের প্রত্যেকেই ছিলেন আরবি ভাষায় পারদর্শী ও সাহিত্যমনস্ক। আর ধর্ম প্রচারের কাজে শুদ্ধ ভাষা ও সুন্দর বর্ণনার প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই ইসলাম বলে, পরিশুদ্ধ হও জীবনে, শুদ্ধ করো তোমার শব্দ, বাক্য ও ভাষা। মধুর করো তোমার বাচনভঙ্গি ও ভাষার অবয়ব।
এমনি শত্রুর সঙ্গে বিতর্ক করার সময়ও সুন্দরতম ভাষায় বিতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কুরআনে। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী! আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে। আর তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন সর্বোত্তম পন্থায়’ (সূরা নাহল, আয়াত ১২৫)। ‘আর তোমরা মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বোলো’ (সূরা বাকারা, আয়াত ৮৩)।
সুস্থ, সুন্দর ও মার্জিতভাবে ভাষা ও সাহিত্যচর্চা ইসলামের বিধান। সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। কুরআনের বর্ণনা, ‘দয়াময় রহমান আল্লাহ! কুরআন পাঠ শেখালেন; মনুষ্য সৃজন করলেন; তাকে ভাষা বয়ান শিক্ষা দিলেন’ (সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪)।
লেখক : প্রাবন্ধিক
টি.কে ওয়েভ-ইন