2. গৌরীপুর, ময়মনসিংহ জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগ
3. স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গৌরীপুরে আ’লীগের পৃথক সভা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গৌরীপুরে আ’লীগের পৃথক সভা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুক্রবার (২৬ মার্চ/২০২১) উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পৌর শহরের ধানমহালে জনসভায় প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি। একইদিনে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পুরো শহর ছিলো পুলিশ বেস্টনিতে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ ধানমহালের জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রয়াত স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এমপি নাজিম বলেন, বেহেশতে যাওয়া সহজ, গৌরীপুরে রাজনীতি করার তারচেয়েও কঠিন। তিনি আরো বলেন, বিগত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। তাতেও আমার দুঃখ ছিলো না। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর যে নির্যাতন সেই দুঃখ মানতে পারছি না। আজকের জনসভা করতে দেয়া হবে না সেই হুমকি-ধামকিও দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আপনি কৌশলে পাস করেছেন। তিনবারের মেয়র হয়েছেন ওজনটা সহ্য করতে পারছেন না। এমপি হিসাবে আহবান জানাবো গৌরীপুরের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিন। আমরা জেলা আ’লীগ আপনাকে বহিস্কার করে পত্র কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। শেখ হাসিনা যদি মনে করেন মাফ করে দিবেন, তাহলে পদ ফিরে পাবেন, অন্যথায় আপনার পদ থাকবে না।
সুবর্ণজয়ন্তীর এ উৎসবে শুভ্র হত্যার বিচার দাবি করে বক্তব্য রাখেন নিহত শুভ্র’র মা খালেদা আক্তার। তিনি বলেন, ৬মাস হলো আমার পুত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই মামলাটি এখনও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যায়নি, মামলার চার্জশীটও দেয়নি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিধু ভূষণ দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল মুন্নাফ। বক্তব্য রাখেন প্রধান বক্তা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক ডক্টর সামীউল আলম লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন, দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিন্টু, সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম হবি প্রমুখ।
অপরদিকে গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ রফিকুল ইসলাম দিপু, জেলা পরিষদ সদস্য এইচ এম খায়রুল বাসার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, পৌর কাউন্সিলর আব্দুর রউফ মোস্তাকিম, দেলোয়ার হোসেন বাচ্চু, মাসুদ মিয়া রতন, সাদেকুর রহমান, পৌর যুবলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মিথুন, ছাত্রলীগ নেতা রাফসান জানি অভি প্রমুখ। এ সভায় পৌর মেয়র সৈয়দ রফিক পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত তাকে বারবার বাঁধা দেয়া হচ্ছে। বাধার কারণে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আজকের আলোচনা সভা করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসতেও বাধা দেয়া হয়েছে।
৩০ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমপি ও মেয়র দ্বন্দ্বের উত্তেজনা ঢামাডোল বেড়েই চলছে। নিরাপত্তার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এলাকা থেকে পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের জনসভার মঞ্চ সরিয়ে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়ে নেয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জনসভার বিশৃঙ্খলা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো।
জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম ধাপের নির্বাচনের দিনেই নবনির্বাচিত (টানা ৩বার) মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রী করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি। এ জিডি প্রত্যাহারের দাবিতেও আন্দোলনে নামে মেয়র সমর্থক।
অপরদিকে ঐতিহাসিক ৭মার্চ উদযাপনের দিনে পৌর ভবনের সামনে পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে গুলিবর্ষণের অভিযোগে এনে তিনি গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এর গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে এনে তারপক্ষে উপজেলা তাঁতীলীগের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। পাল্টাপাল্টি মামলার কারণে পৌর নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে ময়মনসিংহের গৌরীপুর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সংবাদ সম্মেলনের পরবর্তীতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য যে, গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আ’লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী সৈয়দ রফিকুল ইসলাম নারিকেল গাছ প্রতীকে ৭হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীক নিয়ে শফিকুল ইসলাম হবি পান ৭হাজার ২৬৬ ভোট। গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনের আগাম প্রচারণা চালাতে গিয়ে গত ১৭ অক্টোবর সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র খুন হন। এ হত্যা মামলায় পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন নিহত শুভ্র’র ছোট ভাই আবিদুর রহমান। মামলাটি ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে।

Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর