আজ রবিবার ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আশরাফ তুঙ্গে ওমরা হজ্জে নেয়ার প্রলোভনে,প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২ তারাকান্দায় দু’মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত-১ মে দিবসে গৌরীপুরে ডেকোরেটর কারিগর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্ণিল শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে রাজ ওস্তাগার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণিল শোভাযাত্রা বিশ্ব শ্রমিক দিবসে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে গৌরীপুরে জাতীয় শ্রমিক লীগের বর্ণিল শোভাযাত্রা অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে: শেখ হাসিনা কৃষিবিদ ড. সামীউল আলম লিটনের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী গৌরীপুরে বিশ্ব নৃত্য দিবস পালিত
||
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ৪, ২০২১, ১২:০৮ অপরাহ্ণ




প্রতিশ্রুতি অনেক, নির্দেশনায় ঘাটতি

বাহাদুর ডেস্ক :

গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশের ১২ হাজার ৭২৪ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখের বেশি। সারাবিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩৭ লাখ এবং আক্রান্ত ১৭ কোটির বেশি। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অতিমারি এবং দুর্যোগের এ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করলেন, তাতে করোনা মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে তিনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়নের স্পষ্ট নির্দেশনা এবং রোডম্যাপ বা পথনকশার ঘাটতি আছে। বদলে যাওয়া সময়কে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি করোনাকালীন বাজেট। সময়ের দাবি পূরণে গতানুগতিকতার খুব একটা বাইরে যেতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।

আমরা দেখি- সময়ের দাবি কী ছিল। প্রত্যাশা ছিল- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। অর্থমন্ত্রী মুখে এসব খাতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেও নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ বাড়েনি। মোট বাজেটের অংশ হিসেবে এবং জিডিপির অংশ হিসেবে বরাদ্দ আগের মতোই। স্বাস্থ্য খাতে নতুন বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের কমই রয়ে গেছে। কৃষি এবং সামাজিক সুরক্ষায়ও কিছু বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ দুটি খাতেও বরাদ্দ জিডিপি ও মোট বাজেটের বিচারে আগের মতোই। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য আগামী অর্থবছরে সরাসরি নগদ অর্থ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী অবশ্য তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি গতানুগতিক ব্যবস্থা থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে এ বাজেট। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জীবন রক্ষার কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হলে কী কী নতুন ধরনের পদক্ষেপ থাকবে; স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষায় সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্ক সরবরাহ করা হবে কিনা; এগুলোর জন্য বরাদ্দ আছে কিনা খোলাসা করেননি অর্থমন্ত্রী। কত হাসপাতাল বাড়ানো হবে, আইসিইউ বেড কী সংখ্যক বাড়বে, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির কী হবে তা উল্লেখ করেননি। সংক্রমণ বাড়লে চিকিৎসা পেতে আগের মতো সংকটময় পরিস্থিতি হবে না- সে আশ্বাস তিনি দেননি। অবশ্য টিকা সংগ্রহে যত টাকাই লাগুক তা খরচ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম দিয়েছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। জীবন-জীবিকার স্লোগান শুনলে প্রথমে সবার মনে পড়বে করোনার কথা। করোনা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকার গত এক বছরে যা যা করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ আছে। তবে আগামী এক বছরে সরকার কী কী করতে চায় তার সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই। করোনার কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যয়ের দিক থেকেও দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে। অর্থমন্ত্রী প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন হালচিত্র তুলে ধরেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আগামী অর্থবছরে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানাননি। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি বড় অংশই কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার ওপর। সে তুলনায় নতুন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার তথ্য কম।
এ কথা ঠিক, করোনাকালীন সরকারের আয় করার সক্ষমতা খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের নতুন অনেক ছাড় দিতে হয়েছে। ব্যক্তি শ্রেণির আয়করও বাড়ানো হয়নি। তবে এ সময়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যয় বাড়াতে হবে এবং সরকার সেদিকেই হেঁটেছে। যদিও ব্যয়ের পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি, তবে তা অর্থনীতির আকারের অনুপাতে চলতি অর্থবছরের চেয়ে কম। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য আয় তেমন না বাড়িয়ে বেশ বড় অঙ্কের ঋণ করে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা পেশ করেছেন, যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল।

অর্থমন্ত্রী অবশ্য এবারের বাজেটকে অনেকটা ব্যবসাবান্ধব করেছেন। করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব করেছেন। কর অবকাশ সুবিধার সম্প্রসারণ করেছেন। স্থানীয় উৎপাদনে উৎসাহ দিতে কর, শুল্ক্ক ও ভ্যাটে অব্যাহতি ও ছাড় বাড়িয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রিম কর কমিয়েছেন। করোনা সুরক্ষা সামগ্রী, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আগের সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি নতুন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার নানা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়িয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর এসব প্রস্তাব সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। স্থানীয় উৎপাদনকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ভোগ্যপণ্য এবং ডিজিটাল সামগ্রী। তবে দেশীয় উৎপাদনকে সুযোগ করে দিতে এসব পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ চেইন এবং গুণগত মানের পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি ততটা বিপর্যয়ের মধ্যে যায়নি বলে তিনি মনে করেন। যদিও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, নতুন করে দুই থেকে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। নতুন দরিদ্রদের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির কথা অর্থমন্ত্রী বলেননি। আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা কিছুটা বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়েনি।

আয় ও ব্যয়ের পরিসংখ্যান :আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা আগের মতোই তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের বাইরের কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা ৪৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে তিন লাখ ৫১ হাজার হাজার ৫৩২ কোটি টাকা করা হয়েছে। মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের যে প্রবণতা রয়েছে, তাতে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা এনবিআরের ১০ মাসের অর্জন দুই লাখ কোটি টাকার কম।
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ৬৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ বাবদ ছিল ৬৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৬৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। সংশোধিত বাজেটে যা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট :আগামী অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা (অনুদান ছাড়া) হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অনুদানসহ ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এর আগের বছরগুলোতে ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতির পরিকল্পনা ছিল না। এবার বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার একটু বেশি ঋণ করে হলেও অর্থনীতিকে সচল রাখতে চায়। সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে চায় ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিতে চায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বেশি নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটে এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। বিদেশ থেকে সরকার ঋণ নিতে চায় ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অনুদানের প্রাক্কলন রয়েছে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

টি.কে ওয়েভ-ইন




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১