নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে মুক্তি বর্মণ (১৬) নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বখাটে কাউছার মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার বিকাল ৩টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউছারকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রেস বিফিং করেছে জেলা পুলিশ।
কাউসারকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে মুক্তি রানী বর্মনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো কাউসার মিয়া। দিয়েছিল প্রেমের প্রস্তাবও। কাউসারের সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি মুক্তি। প্রেমের প্রস্তাবের কথা বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছিল সে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে কাউসার।
জানা যায়, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে কাউসারকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তিকে হত্যার পর থেকে কাউসার ওই ধানক্ষেতে লুকিয়ে ছিল।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা এলাকায় মুক্তি রানীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কাউসার মিয়া। মুক্তিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুক্তি রানী বর্মন উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মণের মেয়ে ও প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর অভিযুক্ত কাউছার মিয়া একই গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে।
কাউসারকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বিকাল সাড়ে ৪টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে নিহত স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো কাউসার। এ ঘটনা মুক্তি তার পরিবারকে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে কাউসার। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে কাউসারকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। পরে অভিযান চালিয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ বাড়ির পাশের ধানক্ষেত থেকে তাকে আটক করে। এ ঘটনায় বারহাট্টা থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। কাউসার বর্তমানে ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে মুক্তিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
আজ বুধবার দুপুরে বারহাট্রা উপজেলার ঈদগা মাঠের সামনের সড়কে নারী প্রগতী সংঘসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে নিহত মুক্তি বর্মণের চাচা লিটন বর্মণ বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে তার ভাতিজিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিলেন কাউছার। বিষয়টি তার পরিবারকেও জানানো হয়েছিল।
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন কুমার সাহা বলেন, অভিযুক্ত বখাটে কাউছারকে বুধবার বিকালে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত মুক্তি বর্মণের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।