এম এ আজিজ, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥
ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে দায়িত্ব হস্তান্তরে গত ৬ জুলাই ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ০৫.৪৫.৬১৯৪.০১৪.০১.০০২.১৯৩৬৫ স্মারকমূলে মাদ্রাসার সৃষ্ট অচল অবস্থার জন্য নূর জাহান আক্তারের বিধি বর্হিভূত দায়িত্ব পালন কে দায়ী করে ০৩ কার্য দিবসের মধ্যে জৈষ্ঠ্য সহকারী অধ্য/প্রভাষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করে তিন কার্যদিবসের পরও স্বপদে বহাল আছেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালের অন্যতম বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসাটি এখন ধ্বংসের মুখে। ভারপ্রাপ্ত অধ্য নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় শিার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক সময় সেরা ফলাফলে ময়মনসিংহের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হলেও কয়েক বছর ধরে একজন শিার্থীও এ প্লাস পাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে শিার্থী কমে এখন শিার্থীহীন হয়ে পড়ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। অভিভাবকরা মাদ্রাসা থেকে শিার্থী সরিয়ে নিচ্ছেন। ২০১৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানে এক হাজার একশ’র বেশী শিার্থী থাকলেও ২০২০ সালে এসে ২শ শিার্থী।
এলাকাবাসী প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে একটি সৃজিত রেজুলেশনের মাধ্যমে নূরজাহান আক্তার ভারপ্রাপ্ত অধ্য হিসেবে আভির্ভুত হলে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও মাদ্রাসার অধিকাংশ জমি বেখল হয়ে আছে দিনের পর দিন। বেদখল হয়ে থাকা জমিগুলোও উদ্ধারে তৎপরতা না থাকায় অনেকে জমি বিক্রি করতে পায়তারা করছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৫ সালে বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠত হয়। এর পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মাদ্রাসাটি টিকে আছে। ২০০৩ সালে মাদ্রাসার অধ্য মাওলানা আসাদুল হক অবসরে চলে যান। ঐ সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাহার আলী সকল শিকদের সাথে আলোচনা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্য হিসেবে আনোয়ার সাদতকে দায়িত্ব দেন। ঐ বছর মাদ্রাসাটি শিার্থীর সংখ্যা ছিল একশ এর কম। ২০০১ ও ২০০৩ সালে আলিম পরীায় কোন শিার্থীই পাশ করেনি। ছিলনা অবকাঠামো। ভারপ্রাপ্ত আনোয়ার সাদত দায়িত্ব নেয়ার ২০০৪ ও ২০০৬ সালে উপজেলায় সর্বপ্রথম একমাত্র এ প্লাস পায় এই প্রতিষ্ঠানের শিার্থী। এরপর থেকে এই মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছরই দাখিল ও আলিম পরীায় একাধিক শিার্থী এ প্লাস সহ শতভাগ শিার্থী পাশ করতে থাকে। ধীরে ধীরে শিার্থী বেড়ে এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভাল ফলাফলের কারনে মাদ্রাসা শিা বোর্ড এখানে পাবলিক পরীার কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়। আলিম বিজ্ঞান শাখা, এইচ.এস.সি (বি.এম), শাখা ও দাখিল (ভোকঃ) চালুর অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। জেলার মধ্যে সেরা শিা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করে। ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে শিার্থীরা এসে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের কারণে বাগান গ্রামটিও আলোচিত হয়ে ওঠে উপজেলার মধ্যে।
২০১৬ সালে পরিচালনা কমিটি ও শিকদের মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়। ১৮/০২/২০১৭ তারিখে কমিটি না থাকায় নূর জাহান আক্তার কিছু শিকের সহযোগিতায় নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্য দাবী করেন। কিছু শিককে নিয়ে নিজেই একটি রেজুলেশন করে মাদ্রাসা শিা বোর্ড থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে এই রেজুলেশন যে ভুয়া প্রমানিত এবং শিককের স্বার করার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ০৪/১০/২০১৬ তারিখে মাদ্রাসার জৈষ্ঠ্য প্রভাষকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য মাদ্রাসা শিা বোর্ড থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু নূরজাহান আক্তার জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ৬ষ্ঠ ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্য নিয়োগ নিয়ে জটিলতা থাকায় মাদ্রাসার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। নূর জাহান আক্তার নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্য দাবী করলেও মদ্রাসায় অনুপস্থিত এবং অদতার জন্য গত ৫ বছরে আলিম বিজ্ঞান শাখায় একজন ছাত্র/ছাত্রীও পাশ করতে পারেনি। শিার্থীরা ভারপ্রাপ্ত অধ্যকে অপাসারন চেয়ে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচী পালন করে। তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় জটিলতা আরো বেড়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব নিয়ে মাদ্রাসার এফ ডি আর হিসেবে একল টাকা ২১ মার্চ/ ২০১৮ সালে জমা দিয়ে ওই বছরের ৮ এপ্রিল তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে মাদ্রাসার কোন এফ ডি আর নেই। ১৪/০৬/২০১৭ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিা অধিদপ্তর জৈষ্ঠ শিককে ভারপ্রাপ্ত অধ্য নিয়োগের জন্য চিঠি দেয়। জৈষ্ঠ্য শিকের কাছে তিনি দায়িত্ব না দিয়ে বহাল থাকেন। ১১ মার্চ/১৯ সালে মাদ্রাসা শিা অধিদপ্তর নূর জাহানকে অব্যাহতি দিয়ে জৈষ্ঠ্য শিককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগ তদন্ত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিা কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমানের প্রতিবেদন দাখিল করেন। গত ৪ ফেব্র“য়ারী/২০ জেলা প্রশাসক দপ্তর থেকে বিধি বহিভূত ভারপ্রাপ্ত অধ্যরে দায়িত্ব পালনকারী নূর জাহান আক্তারকে অধ্যরে পদ থেকে অব্যাহতি পূর্বক জৈষ্ঠ্য সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন।
পরবর্তীতে ৬ জুলাই ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ০৫.৪৫.৬১৯৪.০১৪.০১.০০২.১৯৩৬৫ স্মারকমূলে মাদ্রাসার সৃষ্ট অচল অবস্থার জন্য নূর জাহান আক্তারের বিধি বর্হিভূত দায়িত্ব পালনকে দায়ী করে ০৩ কার্য দিবসের মধ্যে জৈষ্ঠ্য সহকারী অধ্য/প্রভাষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন।
টি.কে ওয়েভ-ইন