চা দোকানী মো. হারুন মিয়া এবার এইচএসসি পাশ করেছে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের অধিনে গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রী (অনার্স) কলেজ টিউটোরিয়াল সেন্টার থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নেন। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর/২৩) প্রকাশিত ফলাফলে চা বিক্রেতা হারুন মিয়া জিপিএ-২.৫৯ গ্রেড পেয়ে উর্ত্তীণ হন। হারুন একই বিশ^বিদ্যালয়ের অধিনে ২০২২সনে ১৫ ফেব্রæয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ- ২.৮৬ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন।
ডিজিটাল দুনিয়ায় ‘হারুন টি স্টল’ ব্যতিক্রমী আয়োজনে দেশেজুড়ে আলোচিত। পড়ালেখা ছেড়ে ১৪বছর যাবত চায়ের দোকান করে এই হারুন মিয়া। তবে এবার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সবাইকে তাক লাগিযে দিয়েছে। তার অদম্য ইচ্ছেশক্তির গল্পও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
হারুন মিয়া নিজের উদ্যোগে তার দোকানে প্রতিদিন স্থানীয় ও জাতীয় ৮/১০টি পত্রিকা রাখেন। গড়ে তোলেছেন হারুন পাঠাগার নামে একটি ব্যতিক্রমী পাঠাগার। চায়ের সঙ্গে বইপড়া ও পত্রিকার যোগান দিয়ে সারাদেশে পরিচিত মুখ হারুন। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্ধেক দামে চা, সেরা চা গ্রাহককে সম্মাননা ও মাদক বিরোধী প্রচারণায় নেমে তিনি প্রশংসিত হন। ব্যতিক্রমধর্মী এসব উদ্যোগের জন্য শহরে আলাদা পরিচিতিও পেয়েছে এই চা দোকানি। পাশাপাশি চা বিক্রি করে তার আয়ও ভালো।
কিন্ত অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা করতে না পারার একটা আক্ষেপ ছিল হারুনের ভেতর। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। চা বিক্রির পাশাপাশি পড়াশোনা করে চব্বিশ বছর বয়সে এসে এসএসসি আর ২৬বছর বয়সে এইচএসসি পাশ করেছেন। জানা গেছে হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা গ্রামের প্রয়াত আব্দুল জব্বারের পুত্র। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে ২০১০ সালে মাধ্যমিকে অধ্যয়নের সময় পড়াশোনার ইতি ঘটে তাঁর। সংসারের হাল ধরতে ২০১৪ সালে পৌর শহরের কালীখলা এলাকায় চা দোকান খোলেন তিনি। চা বিক্রির পাশাপাশি দোকানে বসে বিভিন্ন ধরণের বই পড়তেন হারুন। পড়ার প্রতি তার এই আগ্রহ দেখে শিক্ষক এমদাদুল হক, আব্দুল মালেক ও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম মিন্টুর অনুপ্রেরণাতে ২০১৯ সালে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি হন। চা বিক্রির পাশাপাশি রাতে পড়াশোনা করে এসএসসি পাশ করেন তিনি। তার মা রহিমা খাতুন একজন গৃহিণী। ছয়-ভাই বোনের মধ্যে হারুন পঞ্চম। এরমধ্যে চার ভাই- বোন বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। ছোট বোন গৌরীপুর সরকারি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। চা বিক্রি করে সংসারের হাল ধরার ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ যোগান হারুন। পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে উকিল হতে চায় হারুন।