গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
পণ্যের বাজার মূল্য বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকদের মাঝে টিসিবি’র পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ক্রেতাদের মাঝে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল/২০২১) জোরপূর্বক পঁচা পেয়াজ কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৌরীপুরে সেহরী খাওয়ার পর থেকে উপজেলা পরিষদের ভিতরে টিসিবি’র পণ্যের জন্য ইট, চটের বস্তা, ব্যাগ আর জুতা দিয়ে চলে স্থান দখল। পণ্য বিতরণের নির্ধারিত তারিখ ও সময় না থাকায় ক্রেতারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সপ্তাহে ২/৩দিন মাল পেলেও, বাকী ২/৩দিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে খালি ব্যাগ নিয়ে বাসা ফেরতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লংঘন করে খোদ সরকারি সংস্থা টিসিবি প্রতিদিনই এমন পঁচা পেয়াজ বাজারজাত করার অভিযোগ স্বীকার করেন টিসিবি’র ডিলার গণেষ সরকার। তিনি বলেন, আমরা নিরুপায়, টিসিবি যে পণ্য সরবরাহ করবে আমরা গ্রাহকদের মাঝে সেই পণ্যই বিক্রি করছি।
এদিকে পঁচা পেয়াজ নিয়ে বিক্ষুব্দ ক্রেতা মাটিতে পেয়াজ ফেলে প্রতিবাদ জানায়। গোলকপুর মহল্লার সুরুজ আলী এ প্রতিনিধিকে বলেন, হারাদিন (সারাদিন) হ্যান্ডেলমাইর্যা (রিকশা চালিয়ে) ট্যাহা (টাকা) কামাই। নষ্ট পঁচা পেয়াজ নিবো না। এ ক্রেতার সুরে পুর্বদাপুনিয়ার আছিয়া খাতুন, মধ্যবাজারের আরিফ আহাম্মেদ, গাঁওগৌরীপুরে সবুজ মিয়া, বাড়িওয়ালাপাড়ার তালেব হুসেন মাটিতে পেয়াজ ফেলে দিয়ে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের দাবি, টাকা দিয়ে পঁচা পেয়াজ কেন; শর্ত দিয়ে টিসিবি’র মাল দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। ইসলামাবাদের আমির হোসেন বলেন, আমার বুটের প্রয়োজন নেই, চিনি আর তেলের প্রয়োজন অথচ আমাদেরকে বুট কিনতেও বাধ্য করা হচ্ছে। টাকা দিয়ে মালা নিবো, শর্ত কেন? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এ প্রতিনিধিকে!
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ। তিনি, বিক্ষুব্দ ক্রেতাদের পেয়াজ বদলে দেয়ার জন্য ডিলারকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি টিসিবিকে অবহিত করা হবে বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের আশ^স্ত করেন।
অপরদিকে তোয়া এন্টারপ্রাইজও অনুরূপ পেয়াজ বিক্রি করে যাচ্ছে। গাড়ীতে পেয়াজ বিক্রির সময় টিসিবি’র নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, পঁচা আনছি, পঁচাই দিমু। পঁচা পেয়াজ নিয়ে অবশ্য তোয়া এন্ট্রারপ্রাইজের ম্যানেজার সুব্রত রায় বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। ভালোটা দিতে, আসলে পেয়াজ খারাপ, আমাদের তেমন কিছু করার নেই। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ক্ষুব্দ ক্রেতাদের কিছু পঁচা পেয়াজ বদল করেও দেয়া হয়। আরেক ডিলার আলী এন্টারপ্রাইজের মালিক আলী হায়দার রবিন জানান, লাভ-লোকসানের জন্য ব্যবসা করি। পঁচাটা বাদ দিয়ে ভালোটা বিক্রি করে। টিসিবির অফিসপ্রধান (ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী) মো. বজলুর রশিদ জানান, কোন অবস্থাতেই ক্রেতাকে পঁচা বা নষ্ট পেয়াজ দেয়ার সুযোগ নেই। যেটুকু ভালো সেইটুকু বিক্রি করবে।
পঁচা পেয়াজ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী টিসিবি’র ডিলারদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, পঁচা পেয়াজ বিক্রি করেন এ আইনের ৪৫ধারায় উল্লেখ রয়েছে ‘কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ এছাড়াও ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোন সেবা প্রদানকারী অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসতর্কতা দ্বারা সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানী ঘটাইলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’