প্রধান প্রতিবেদক :
করোনাকালীন দুর্যোগে এবার ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হিসাবে এসেছে ‘তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল’। মে মাসের মধ্যে পরিশোধ না হলে গুনতে হবে সুদের ‘মাশুল’। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এক সঙ্গে দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমসিম খাচ্ছেন। হতদরিদ্র, নিম্নআয়ের মানুষের পড়েছেন বিপাকে। রোববার (১৭ মে/২০২০) ছিলো পৌর শহরের কিছু এলাকার বিল পরিশোধের শেষ দিন।
পৌর শহরের কম্পিউটার ব্যবসায়ী তাসাদদুল করিম জানান, লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ, এখন এক সঙ্গে ৩মাসের বিল। ত্রানের চেয়ে জানের ওপর শাস্তিটা বেশি হয়ে গেলো। বন্ধকালীন সময়ে ৫ কেজি চাল, এক কেজি আটার একটি ত্রাণের প্যাকেট পেয়েছেন। অপর দোকানী মোঃ মাসুদ মিয়া জানান, দোকানের বিল ২হাজার ৬শ আর বাসার বিল ৫হাজার, এটা এখন করোনাকালের বিল। মধ্যবাজারের আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের বিলতে কখনও বলি নাই, দিবেন না, তাহলে একসঙ্গে এখন কেন? শালীহর গ্রামের আফাজ উদ্দিন জানান, বিদ্যুৎ বিলও করোনার মতো বাড়ছে, করোনা মরণ নাই; বিদ্যুৎ বিলের কারণে এখন মরণ হইছে! তিন মাস বিল দেয়নি, এ দায় কার? প্রশ্ন ছুঁড়েন ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রাহকদের ওপর এটা নির্যাতন!
এ দিকে হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো এখনও বন্ধ! এসব বন্ধ দোকানেও আসছে বিদ্যুৎ বিলের কাগজ! পাটবাজার শেখ জালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, কর্মচারীরা উপোস, ছুটছে ত্রাণের জন্য! আমাদের দোকান বন্ধ, বিল দিবো কিভাবে? মনোহারী ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া জানান, করোনাকালে বিল দিতে হবে না, মওকুফের কথা শুনেছি, এখন জরিমানা, মাফ পাইলাম না, এখন জরিমানা কেন? এমন নানা প্রশ্ন আর ক্ষোভে ফুঁসছে বিদ্যুৎ গ্রাহক! এছাড়াও লকডাউনের কারণে শহরের সিংহভাগ বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন যেতে পারেনি। মিটার দেখা বা বিলও পৌঁছাতে পারেনি। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা বিল নিয়ে গেলেও বাসাবাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
অপরদিকে জানা যায়, গত ২২ মার্চ জ্বালানি বিভাগের উপসচিব আকরামুজ্জামান স্বারিত এক আদেশে বলা হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা আতঙ্কের কারণে বাংলাদেশে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল দেয়ার প্রয়োজন নেই। গ্যাস বিল দেয়ার েেত্র আগামী জুন পর্যন্ত এবং বিদ্যুৎ বিল দেয়ার েেত্র মে মাস পর্যন্ত বিলম্ব মাশুল বা জরিমানা মওকুফ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ।
এ দিকে রোববার (১৭ মে/২০২০) বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েও দেখা যায়, গ্রাহকের এমন চিত্র। শালীহর গ্রামের এক গ্রাহকের ৩মাসের বিল ১৪হাজার টাকা। অপর গ্রাহক আরশেদ আলীর বিল ৯হাজার টাকা। বিল্লাল হোসেনের বিল ৪হাজার ৩৮০টাকা। এক সঙ্গে এতো টাকা দিতে পারবেন না-এমন আকুতি নিয়ে তারা হাজির হচ্ছেন উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে।
গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নিরঞ্জন কুন্ডু জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এখনও অনেক এলাকায় কর্মচারীরা বিল প্রদান ও মিটার দেখতে যেতে পারছে না। গ্রাহকরা এ মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে সুদ (মাশুল) দিতে হবে না। তাই সকল গ্রাহকের নিকট বিদ্যুৎ বিল পৌঁছানো হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্তের বাহিরে আমাদের কিছু করার নেই।