শফিক সাহেব অফিস থেকে ফেরার পথে গৌরীপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফরম মাড়িয়ে বাড়ির পথ ধরেন। যাওয়ার পথে প্লাটফরমে বিপ্লবের দোকনের রং চা পান করেন। খোকনের দোকান থেকে এক খিলি পান চিবিয়ে একটি গোল্ডলিফ টানতে টানতে পুরোনো বাংলা সিনেমার একটা গান গুনগুনিয়ে গাওয়া যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে। আজো তাই করছেন। তবে আজ রং চায়ের বদলে দুধ চা পান করছেন। সম্ভবত বনরুটি চুবিয়ে খাওয়ার জন্যই দুধ চা নিয়েছেন। হঠাৎ চোখ পড়ে অদূরে রেল লাইনে বসে থাকা ৮/১০ বছরের একটি বালকের উপর। বালকটির নাম রন্জু। এর বেশি পরিচয় জানা যায়নি কোনদিন। সে অপলক দৃস্টিতে চেয়ে আছে
শফিক সাহেবের দিকে। ঠিক তার দিকে নয়, তার চা খাওয়ার দিকে। হ্যাঁ,বালকটি তার শুষ্ক দুটো ঠোট জিহ্বা দিয়ে চাটছে। শফিক সাহেব অস্বস্তি বোধ করছেন। চায়ের কাপটি একটু এগিয়ে রন্জুকে ইশারয় ডাকলেন। রন্জু ধির পায়ে এগিয়ে গেল।
–কিরে দুপুরে কিছু খাসনি? চা খাবি?
রন্জু চুপ থাকে।
— বিপ্লব, রন্জুকে চা দে।
বিপ্লব চা দেয়।
বনরুডি খাইবি? শফিক সাহেব জানতে চায়।
রন্জু নির্বিকার অথচ লাজুক। চোখে ুধা কিন্তু লোভ নেই, চালাকি নেই। কোন অভিযোগ নেই তবুও সততার দৃঢ় চেতনা শফিক সাহেবের দৃষ্টি এড়ায়নি। কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে শফিক সাহেবের।
— বিপ্লব বনরুটি এগিয়ে দেয়।
রন্জু হাত বাড়িয়ে নেয়। তারপর মাথা নিচু করে চায়ের কাপে রুটি ভিজিয়ে খেতে থাকে।
খাওয়া শেষ করে হঠাৎ ভো দৌড়। একবারও পিছন ফিরলো না। এমন দৌড়ের মানে কি? শফিক সাহেব বুঝতে পারেন না। তিনি আরেকটি সিগারেটে আগুন ধরিয়ে বাড়ির দিকে হাটতে থাকেন।