সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সমাজতন্ত্রের ফেরিওয়ালা ছিলেন কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ -ওবায়দুর রহমান

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : মে, ২৯, ২০২০, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল আন্দোলনের যে কয়জন অগ্রপথিক রয়েছেন তার মধ্যে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ ছিলেন অন্যতম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সৈয়দ মনোয়ার আলী ও সৈয়দা আমিরুন্নেসা খাতুনের কোলজুড়ে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ। সিলেটের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিতি মুখ ছিলেন, ছিলেন একজন কলম সৈনিকও। ছোট থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করে ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ১৯৭০ সালে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন ও পরের বছর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং মৌলভীবাজার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে দেশ মাতৃকাকে রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন। সিলেটে চা শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ করায় ১৯৭২ সালে তিনি প্রথম কারাবরণ করেন। জেল থেকে বের হওয়ার পরপরই ১৯৭৩ সালে আবারো কারাভোগ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র সপরিবারে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করায় ফের গ্রেপ্তার হন এবং বিনাবিচারে ১ বছর জেল কাটেন। তিনি দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে উচ্চতর পড়াশুনার জন্য ১৯৭৯ সালে জার্মানি যান। জার্মানি থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে মেহনতি মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করেন এবং শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণের জন্য ক্ষেতমজুর সমিতির সাংগঠনিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন এবং নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। গণতন্ত্রের উত্তাল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করায় বেশ কয়েকবার ওই সময় জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ১৯৯০ সালে মৌলভীবাজার থেকে অধুনা বিলুপ্ত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক মনুবার্তার সম্পাদক-প্রকাশক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট অঞ্চল থেকে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কমরেড বারীণ দত্ত। এরপর ২০১২ ও ২০১৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দশম ও একাদশ কংগ্রেসে কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রণী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির কাছে মাথানত না করে ও অপশক্তির সাথে আপোষহীন থেকে মানবমুক্তির লড়াইয়ে রাজপথে যেমন সোচ্ছার ছিলেন তেমনি সক্রিয় ছিলেন কলম সৈনিক হিসেবেও। তিনি ২০১৯ সালের (২৮ মে) রাত ১২.৩০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমৃত্যু গণমানুষের রাজনীতিক ও সমাজতন্ত্রের ফেরিওয়ালা সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ’র প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও লাল সালাম।