বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শুরু হয়নি করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা : দ্বিতীয় তরঙ্গ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : অক্টোবর, ২৫, ২০২০, ১:১৩ অপরাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

তিন মাস আগে অ্যান্টিজেন নীতিমালা প্রণয়ন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। মধ্য সেপ্টেম্বরে দেশে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তারপরও দেশে অ্যান্টিজেনভিত্তিক করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়নি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি মহামারী নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত করবে।

জানা গেছে, এ পর্যন্ত বেশ কিছু অ্যান্টিজেন কিট দেশে এসেছে। যেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটকে (আইইডিসিআর) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একটি কিটের ভ্যালিডেশন নিয়ে কাজ করছে। তবে সেখানে বেশ সময় লেগেছে। কারণ প্রথম বাইরে থেকে নমুনা এনে কিটটি ভ্যালিডেড করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে কিটের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। পরে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ স্থান থেকেই তা নিয়ে কিট ভ্যালিডেড করা হয়েছে। এতে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কিটের সক্রিয়তা ও সংবেদনশীলতা পাওয়া গেছে।

মার্চে বাংলাদেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে দেশে করোনা পরীক্ষা চলছে। এতে সময় বেশি লাগে এবং অর্থ ব্যয়ও অধিক। নমুনা পরীক্ষায় গতি আনতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পক্ষে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। ১৭ সেপ্টেম্বর করোনা শনাক্তে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দেয় সরকার। পরীক্ষাটি অল্প সময়ে করা যায়, ব্যয়ও হয় কম। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে অ্যান্টিজেনভিত্তিক টেস্ট শুরুর অনুমতি দেয়া হয়। এর আগে ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন নীতিমালার খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। নীতিমালা অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিটের অভাবে এখনও এ পরীক্ষা শুরু করা যায়নি।

মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, কিট সরবরাহের জন্য ইউএনএফপিএকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ১ সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। কিন্তু এরপর ১ মাস পেরিয়ে গেছে, তারা কিট সরবরাহ করতে পারেনি। এছাড়া সিএমএসডির মাধ্যমে কেনার একটি প্রক্রিয়া শুরু হলেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের কিট ভ্যালিড হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ওই প্রক্রিয়ায়ও কেনা হয়নি। এসব কারণে দেশে অ্যান্টিজেনভিত্তিক কিট পরীক্ষা পিছিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন  বলেন, অ্যান্টিজেন কিটের সঙ্গে আরটি-পিসিআরের ভ্যালিডেশন করতে হয়। অর্থাৎ কিটের কার্যকারিতা ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করতে হয়। পিসিআর পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে এ কিটের পরীক্ষার ফলাফল কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেটি দেখতেই ভ্যালিডেশন করতে হয়। নীতিমালা অনুযায়ী যদি ফল পাওয়া না যায় তবে কিট অনুমোদনযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, সম্ভবত দুটি কিটের ভ্যালিডেশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর না করে ভ্যালিডেশনের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনকে দিলে সময় কম লাগত। তারা একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজটি করিয়ে নিতে পারত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাইয়ের ১২ তারিখ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেখানে বলা হয়, ‘ইউএস এফডিএসহ পৃথিবীর অন্যান্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অনুসরণ করে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কিটের ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন (জরুরিকালীন ব্যবহার) বা এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সেনসিটিভিটি কমপক্ষে ৮০ শতাংশ এবং স্পেসিসিটি ১০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি পারফরম্যান্স স্টাডি রিপোর্টসহ ইউএস এফডিএর ‘অ্যান্টিজেন টেমপ্লোট ফর মেনুফ্যাকচারার’ অনুসরণ করে পণ্যের তথ্যাদি ডোসির আকারে জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে ক্রস রিঅ্যাক্টিভিটি রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, যেসব স্থানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ নেই সেসব জায়গায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কিট ব্যবহার করা যেতে পারে। এ পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল পাওয়া গেলে আরটি-পিসিআরে অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে। এ পরীক্ষা কিটগুলোর অপব্যবহার রোধে শুধু সরকার অনুমোদিত ল্যাবরেটরি ও ল্যাবরেটরি সুবিধাযুক্ত ক্লিনিক্যাল সেটআপ পয়েন্ট অফ কেয়ারে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পরীক্ষা রিপোর্ট অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাতে হবে।

সেখানে বলা হয়, কিট আমদানিতে মেডিকেল ডিভাইস সি ও ডি’র ক্ষেত্রে ‘ইন ভিট্রো ডায়াগনস্টিকস (আইভিডি) উৎপাদনকারী দেশ যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে কোনো দেশ অথবা ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান হতে হবে। সেটি না হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’র ফ্রি সেল সার্টিফিকেটের (এফএসসি) কপি ভুক্ত যে কোনো দেশ হতে হবে। অথবা সিই মার্কিং সার্টিফিকেট কপি আইএসও-১৩৪৮৫ ও আইএসও-৯০০১:২০১৫ সনদ দাখিল করতে হবে।

দেশীয় কোম্পানির অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিট অনুমোদনের জন্য জমা দেয়। যা সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে মান যাচাই বিষয়ক রেসিপি মূল্যায়ন ও মতামত প্রদান করে। কমিটিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধি ছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এমআইএসটি, ফার্মাসিউটিক্যালস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিএমএ, ঔষধ শিল্প সমিতির প্রতিনিধিরা ছিলেন।

২৪ জুন এ টেকনিক্যাল সাবকমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উক্ত কমিটির সদস্যরা কিটের পারফরম্যান্স স্টাডি রিপোর্ট পর্যালোচনা করেন। কিন্তু কিটের সেনসেটিভিটি ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ দেখতে পান। যা গ্রহণযোগ্য ভ্যালু ৯০ শতাংশের কম। কাজেই তারা অনুমোদন না দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেন।

এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান  বলেন, অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি কিট এক ধরনের মেডিকেল ডিভাইস। যা সি ও ডি ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত। আমরা ২০১৫ সালে মেডিকেল ডিভাইস সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করি। সেখানে আমদানির ক্ষেত্রে সি ও ডি ক্লাসের ডিভাইস হিসেবে আরটি-পিসিআর কিট, অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট জরুরি সময়ে ব্যবহারে এনওসি প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত আছে। শর্ত অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যে কোনো দেশ অথবা ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া অথবা জাপান- যে কোনো একটি দেশের ফ্রি সেল সার্টিফিকেটের কপি বা আইএসও সনদ দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব উৎপাদনের ক্ষেত্রে থার্ড পরীক্ষায় নির্ধারিত মাত্রায় সেনসেটিভিটি ও স্পেসিসিটি উত্তীর্ণ হতে হবে। এ শর্ত পূরণের মাধ্যমে আমদানি বা উৎপাদন করা যেতে পারে। দেশি-বিদেশি সবার ক্ষেত্রেই এ নীতিমালা সমভাবে প্রযোজ্য।

টি.কে ওয়েভ-ইন