শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শবে বরাত ২০২২: এই দিনটির ইতিহাস এবং গুরুত্ব জেনে নিন

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০২২
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক : || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : মার্চ, ১৯, ২০২২, ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সৌভাগ্যের রাত হিসাবে পালন করেন। এই রাতে ধর্মপ্রাণদের জন্য কৃপার দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ। তাই এই রাতটি পবিত্র শবে বরাত হিসাবে পালিত হয়।
শবে বরাত শব্দের অর্থ:

ফারসি ভাষায় ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত। আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে একে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আল্লাহ এই রাতে তাঁর বান্দাদের গুনহা (অপরাধ) মাফ (ক্ষমা) করে দেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।পবিত্র এই রাতে তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কোরান তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ–অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করার সময়ও এটি। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

অনেকেই এদিন রোজা রাখেন এবং গোপনে দান-খয়রাতের কাজ করে থাকেন। অনেকে, এই রাতে তাঁদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন। এই পবিত্র রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলীমরা আত্মীয়-প্রতিবেশী-দুঃস্থ মধ্যে হালুয়া, ফিরনি সহ নানারকমের খাবার বিতরণ করে থাকে। রাতে মসজিদ, কবরস্থান এবং মাজারে গিয়ে চলে প্রার্থনা।
শবে বরাতের ইতিহাস:

শবে বরাত পালনের প্রচলন হয় হিজরি ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তাইনের নাবলুস শহরের ইবনে আবিল হামরা নামে একবায়তুল মুকাদ্দাস আসেন। তার তিলাওয়াত ছিল সুন্দর ও মধুর। তিনি শাবানের মধ্যরাত্রিতে নামাজে দাঁড়ালে, তাঁর পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ান। তার পরে তাঁর সঙ্গে তৃতীয় জন এসে যোগ দেন। এর পরে চতুর্থ জন। তিনি নামাজ শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। পরবর্তী বছর এলে, তাঁর সঙ্গে অনেকেই যোগ দেন ও নামাজ আদায় করেন। এতেই মাসজিদুল আক্‌সাতে এই নামাজের প্রথা চালু হয়। কালক্রমে অনেকেই একে সুন্নাত মনে করতে শুরু করেন।
কোথায় কোথায় শবে বরাত পালন করা হয়:

ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দিনটি পালন করা হয় গোটা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আজারবাইজান, তুরস্ক, উজবেবিস্তান, তাজাকিস্তান, কাজাকিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান, কিরগিজস্তান জুড়ে চলে শবে বরাতের উৎসব। আরব বিশ্বে কেবলমাত্র সুফি ঐতিহ্যের আরব ও শিয়া মুসলিমরা এই উৎসব পালন করেন। স্থানভেদে এই উৎসব ভিন্ন নামে পরিচিত। ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শাবান, তুরস্কে বিরাত কান্দিলি, ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বা নিফসু শাবান।
শবে বরাতের খাওয়াদাওয়া:

পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে নানা রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটি-সহ দারুণ খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান। আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন তাঁরা।
রমজানের শুরু:

পবিত্র শবে বরাত মুসলিমদের কাছে এককথায় রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে, কারণ আরবি ক্যালেন্ডার অনুসারে শাবান মাসের পরেই আসে রমজান মাস। তাই শবে বরাতের রাত থেকে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় পুরোদমে।