শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকল বন্ধে …. কার লাভ কার ক্ষতি? : -ওবায়দুর রহমান

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : জুলাই, ৯, ২০২০, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

এক সময়ের সোনালী আঁশ পাট। আমাদের সময় ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয় বা বৃত্তি পরীক্ষাতেও ইংরেজীতে জুট রচনা লিখতে হতো। ছোটবেলায় দেখছি আমাদের এই এলাকায় অর্থাৎ ময়মনসিংহ অঞ্চল ছিলো পাটের জন্য বিখ্যাত। শুধু ময়মনসিংহেও নয়, কুমিল্লা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল ছিলো এই উপমহাদেশের অন্যতম পাটবলয় এলাকা। কৃষকদের উৎপাদিত পাট বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বেই খদর ছিলো, ছিলো রপ্তানির শীর্ষ পণ্য হিসেবেও।

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারী সারা বিশ্বে এক অমানবিক চিত্র দেখিয়েছে। এর মধ্যে আমাদের সরকার কতটা শ্রমিকবান্ধব যে রাষ্ট্রয়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বলেছেন, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রায় ১ বছর আগের, এই সিদ্ধান্তের সাথে করোনা ভাইরাস মহামারীকে গুলিয়ে ফেলবেন না। প্রশ্ন হ”েছ যেখানে বেসরকারী কোম্পানীগুলো শ্রমিক ছাঁটাই করছে, সেখানে সরকারও কেন এই পথে হাঁটছে ? তিনি এও বলেন, এসব পাটকলগুলোতে গোল্ডেন হ্যান্ডশ্যাকের মাধ্যমে শ্রমিকদের যত দ্রুত বিদায় করা হবে তত তাড়াতাড়ি পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে) দিয়ে পাটগুলোর আধুনিকায়ন করা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারীভাবে কেন আধুনিকায়ন করা গেলো না? ২০০২ সালে যখন বিএনপি এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিত আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দিয়েছিলো সেদিন আপনারাই বিরোধীদলে থেকে মায়াকান্না করেছিলেন কেন? ২০০৫ সালে খুলনার খালিশপুরে যখন ৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো তখন কেন আপনারা ক্ষমতায় বসে ২০০৯ সালে তা রাষ্ট্রয়ত্তখাতে চালু করেছিলেন? পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পাটকল শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করছে, আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছে। পাশাপাশি সারা বাংলাদেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, বক্তৃতা, সেমিনার করছে, তখনও সরকারের ঠনক নড়ছে না। এই ২৫টি পাটকলে ¯’ায়ী ২৫ হাজার শ্রমিক, যাদের উপর প্রায় তাদের পরিবারের লক্ষাধিক সদস্য নির্ভরশীল ছিলো। সরকারের গোল্ডেন হ্যান্ডশ্যাকের মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা, কিš‘ পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন করতে খরচ হতো মাত্র ১২ শ কোটি টাকা। কেন করা হয় নি? এতে কাদের স্বার্থ জড়িত ? বিগত বিএনপি সরকার ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে আদমজী বন্ধ করে দিয়ে আমার দেশের পাটশিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিলো। আর বর্তমান সরকার যারা মুক্তিযুদ্ধের সরকার বলে দাবী করে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক দল হিসেবে বলা হয়, সেই দল ক্ষমতার লোভে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়ে পিপিপি’র হাতে তুলে দিতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে যখন একের পর এক রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকল বন্ধ করা হ”েছ, দেশের এই রপ্তানীকারক শিল্পকে ধ্বংসের শেষ পেরেকটি মারা হ”েছ, তখন অতীতের মতোই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়ে তার দেশে কাঁটাতারের ওপাড়ে বড়ো বড়ো পাটকল গড়ে তুলছেন। এই জন্য আসলে বিশ্বব্যাংককে দোষ দিয়ে কি লাভ! যেখানে রাষ্ট্রটি চলছে বেসরকারিকরণকে (পুঁজিবাদকে) প্রাধান্য দিয়ে।
আমাদের দেশের সোনালী আঁশখ্যাত পাট দিয়ে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপনন হ”েছ, তারা জানেই না এই পাট বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। আমাদের উৎপাদিত পাট নামমাত্রমূল্যে ভারতে রপ্তানি করা হয়। এতে করে পাটচাষীরা বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসছে আর বিপরীতে ভারত আধুনিক পাট পণ্য উৎপাদন করে ইউরোপসহ বাইরের দেশগুলোতে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমি মনে করি, সরকারের এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত পিপিপি (যারা নাম মাত্র মূল্যে পাটকলের মালিক হবে) ও পার্শ্ববর্তী দেশ ব্যাপক লাভবান হবে। এদেরকে লাভবান করা কেন? রাষ্ট্রীয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের পণ্যকে বেসরকারি খাতে এবং বাইরের দেশকে প্রমোট করার মাধ্যমে কেন বাংলাদেশের এতো বড়ো ক্ষতি করছেন? প্রত্যাশা থাকবে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে, গোল্ডেন হ্যান্ডশ্যাকের মাধ্যমে রাষ্ট্রয়ত্ত পাটকল বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বাতিল করে আবারো দ্রুত রাষ্ট্রয়ত্তখাতে পাটগুলোকে নিয়ে আধুনিকায়ন করে রপ্তানিমুখী পাটপণ্য তৈরী করে দেশকে লাভের দিকে নিয়ে যাবেন এবং এই খাতের উপর নির্ভরশীল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখবেন।

টি.কে ওয়েভ-ইন