শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ডঃ গাজী হাসান কামালের পুণঃনিয়োগ লাভ

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২
এম. এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
  • প্রকাশিত সময় : জুন, ১৫, ২০২২, ৮:১৮ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ গাজী হাসান কামালকে পুনরায় চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৪ জুন,২০২২ তারিখে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচচ শিক্ষা বিভাগ, সরকারী কলেজ-২ এর উপ সচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন এই আদেশ জারী করেছেন। আদেশে উল্লেখিত কর্মকর্তাকে ( প্রফেসর ডঃ গাজী হাসান কামাল) ভূতাপেক্ষভাবে ২৮/১২/২০২০ তারিখ হতে কার্যকর করে পি আর এল-এ গমনের পূর্ব দিন পর্যন্ত (০৯/০১/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত) পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নিজ বেতন ও বেতনক্রমে চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহে প্রেষণে) বদলী করা হয়েছে। এর আগে তিনি ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর নব প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

নব প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ঘর নেই, দরজা নেই, নেই জনবল, নেই যানবাহন। এই অবস্থায় ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের দুটি রুমে নবনিযুক্ত বোর্ড চেয়ারম্যান ডঃ গাজী হাসান কামাল গুটি কয়েকজনকে নিয়ে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে নগরীর কাঠগোলা এলাকায় দু’টি ভাড়া বাড়িতে স্বল্প সংখ্যক জনবল ও সরঞ্জামাদি নিয়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও কার্যক্রম চালিয়ে যান। সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষাবোর্ড হওয়া সত্বেও মাধ্যমিক-২০২১ সালে পাশের হারে দেশে প্রথম হয় ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। দেশসেরা ফলাফলের গৌরব অর্জন করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ শিক্ষা বোর্ডের ৯০ ভাগেরও বেশি কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে। চলে ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম। বোর্ড চেয়ারম্যান ডঃ গাজী হাসান কামাল বলেন, বোর্ডের কার্যক্রম প্রায় দেড় শতাধিক লোকজনের চাহিদা রয়েছে। এর মাঝে মাত্র ৩৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারী এবং দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক ৪/৫ জন লোক রয়েছে। এই অল্প সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। উদ্বৃত বাজেট নিয়ে রোর্ডের তহবিল পরিচালিত হচ্ছে। মিতব্যয়িতার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই বোর্ডের জমি ও নিজস্ব ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অনেকক্ষেত্রেই পরীক্ষার্থীরা এডমিট কার্ড হারিয়ে হয়রানীর স্বিকার হন। অর্থ ও সময় উভয়ই নষ্টের পাশাপাশি পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মানষিক চাপ বেড়ে যায়। পরীক্ষার্থীদের এ হয়রানী দুর করতে ডিজিটাল পক্রিয়ার মাধ্যমে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড সকল এডমিট কার্ড প্রতিটি কেন্দ্রে পৌছে দেয়া হয়েছে। ফলে কোন ধরণের ডিজি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই আধ ঘন্টার মধ্যে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে হারানো এডমিট সংগ্রহ করতে পারছে পরীক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে। যা সারা দেশে রেকর্ড। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষা গ্রহণকারী পরীক্ষকদের সম্মানী নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ঠেকাতে পরীক্ষকদের সম্মানী তাদের নিজ নিজ একাউন্টে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেয়া হচ্ছে।

ডঃ গাজী হাসান কামাল ময়মনসিংহ সদরে ১৯৬৫ সালের ১০ জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরের পেরিয়ে ১৯৮১ সালে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সহিত প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ময়মনসিংহ সরকারী আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট (আইএইচএসএস) থেকে তিনি এমএস ডিগ্রী লাভ করেন। ১৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৯৩ সালে বেগম রোকেয়া কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা ও পেশার প্রতি অনুরাগের কারণে শিক্ষা বিভাগ তাঁকে ২০০১ সালে সহকারী প্রফেসর, ২০০৫ সালে এসোসিয়েট প্রফেসর এবং ২০১৩ সালে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন । তিনি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের একজন গর্বিত সদস্য। আইবিএস থেকে ২০০৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে সরকারী আনন্দ মোহন কলেজে উপাধক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি আনন্দ মোহন কলেজে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।
উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি ৪ বার শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কলেজের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে মনমুগ্ধকর সফল অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন তিনি। কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে এনএইএম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং ডিএসএইচ ই থেকে একাধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁর চারটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রবন্ধ স্বনামধন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। টীমওয়ার্কে আত্মবিশ্বাসী খ্যাত সহকর্মীদের মতামত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন এবং তাঁদের মূল্যায়ন করেন তিনি।

তাঁর সহকর্মীরা জানান, সারের উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়ে কর্মক্ষেত্রে পরিশ্রম ও সময়কে তুচ্ছজ্ঞান মনে হয়। শিক্ষাজীবনে তিনি ক্যাব স্কাউট এবং রোভার স্কাউটের সদস্য ছিলেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে স্কাউটের চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্ব ও যতেœর সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। ময়মনসিংহ নগরীর বাউন্ডারি রোডে’র (বিশেষ শিশুর জন্য) ওয়েলফেয়ার স্কুলের মতো সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সাথেও যুক্ত এ গুণীজন। দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে তিনি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সফর করেন। অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অধিক প্রসার ও গুণগত মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেন তিনি। তিনি সততা, ধৈর্য্য ও নিরলস পরিশ্রমী হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে সফলতা ও সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহের মুসলিম ইনস্টিটিউটের একজন সম্মানিত সচিব। তিনি অত্যন্ত দয়ালু সর্বদা তাঁর সহকর্মীর তথা ছাত্রদের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেন। বিশেষ করে জন কল্যাণকর শিক্ষা ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করতে পেরে গর্ব বোধ করেন তিনি।
সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড নিজস্ব স্থাপনা প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ এবং সরঞ্জামাদি সমৃদ্ধ হলে ফলাফলে আরো চমক আনতে পারবেন দায়িত্বশীল এই বোর্ড চেয়ারম্যান।