বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে পিবিআইয়ের অভিযানে ত্রিশালের গার্মেন্টে দুঃসাহসিক চুরির রহস্য উদঘাটন ॥ গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ২৬ মে, ২০২১
||
  • প্রকাশিত সময় : মে, ২৬, ২০২১, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ

এম এ আজিজ, স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥

ত্রিশালের বহুল আলোচিত গার্মেন্টেসের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা চুরির প্রায় দেড় বছর পররহস্য উদঘাটন করল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভির অস্পষ্ট চলনভঙ্গি নানা পর্যালোচনাশেষে তাদেরকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়। গার্মেমেন্টের সহকারী সিকিউরিটি ইনচার্জকে ত্রিশাল থেকে ভালুকায় বদলী করার ক্ষোভে এই দুঃসাহসিক চুরি হয়। সোমবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে তারা আদালতে স্বিকারোক্তিমূলক জবনাবন্দি দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মোফাজ্জল হোসেন ওরফে জুয়েল মিয়া, মোঃ হানিফ, সেলিম হোসেন।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, ত্রিশালের বাগান এলাকার টেক্সটাইল সিটি (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) এর ৫নং বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষ থেকে ২০১৯ সালের এক ডিসেম্বর রাতে তালা খুলে এবং পরে লকার ভেঙ্গে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় গার্মেন্টেসের সিকিউরিটি ইনচার্জ বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় অজ্ঞাতনামা চোরদের বিরুদ্ধে মামলা নং-০৬, তাং-০২/১২/২০১৯ তারিখে দায়ের করেন।
মামলাটি ত্রিশাল থানা পুলিশ ৭ মাস তদন্ত করে। এ অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ের উপর অর্পণ করা হয়। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরো জানান, ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় তার সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পংকজ কুমার আচার্য মামলাটি তদন্ত করেন।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরো জানান, আসামী জুয়েল টেক্সটাইল সিটি (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) গার্মেন্টেসে সহকরী সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিল। সে ও তার স্ত্রী একই সাথে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেস, ত্রিশালে চাকরি করত এবং টেক্সটাইলের কাছেই বাগান এলাকায় ভাড়া থাকত। তাকে সেখান থেকে কনজ্যুমার নিটিং গার্মেন্টেস ভালুকায় বদলী করা হলে তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভের সে স্থানীয় টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে সিকিউরিটি গার্ড সেলিম, স্থানীয় বালুর ট্রাকের হেলপার হানিফ ও ডিসের লাইনম্যান আজিজের সাথে মিলে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী গত ০১/১২/২০১৯ তারিখ দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে হানিফ ও জুয়েল মিয়া কালো বোরকা পড়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসের দক্ষিণ পাশের প্রাচীর টপকে ভিতরে ঢুকে। এ সময় হানিফের কাছে বিশাল একটি শাবল ছিল। অপরদিকে সিকিউরিটি গার্ড সেলিম ঐ দিন ঘটনার আগে ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষে ঢোকার ফায়ার এক্সিট দরজার চাবি এনে জুয়েলকে দেয়। এদিকে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেস এর দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাহিরে সেলিম ও আজিজ পাহারায় থাকে। হানিফ ও জুয়েল কৌশলে টেক্সটাইল সিটি (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) এর ৫নং বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষের কাছে পৌছে আগেই সংগৃহিত চাবি দিয়ে ফায়ার এক্সিট দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে এবং হানিফের কাছে থাকা শাবল দিয়ে লকার ভেঙ্গে ভিতরে থাকা বেতন ভাতাদির ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার বাক্সটি নিয়ে চলে আসে। পরবর্তীতে তারা চারজন বাক্সে থাকা টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।

পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস আরো বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর গার্মেন্টেসে চুরির ঘটনা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হলে মামলার প্রকৃত আসামীদের সনাক্তের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষে জব্দকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বারংবার পরীক্ষা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে বোরকা পড়া একজন পুরুষের বিশেষ ভঙ্গিমায় মেয়েলী ভঙ্গিতে হাটার দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টস এ কর্মরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদসহ গোপনে অনুসন্ধান করা হয়। এক পর্যায়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মূলহোতা জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত হানিফ ও সেলিমকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদেরকে সোমবার আদালতে পাঠানো হলে তারা প্রত্যেকেই নিজেকে জড়িয়ে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

 

টি.কে ওয়েভ-ইন