সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ময়মনসিংহে কোতোয়ালির বিট পুলিশিংয়ে চার বছরের সাজায় ২৮ বছর পর গ্রেফতার

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১
এম. এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ।
  • প্রকাশিত সময় : অক্টোবর, ১১, ২০২১, ১০:০৮ অপরাহ্ণ

 ময়মনসিংহ আমীর হোসেন বয়স ৬২ বছর। পিতা-মৃত হাসেম দেওয়ান। ময়মনসিংহ সদরের কুষ্টিয়া বিদ্যাগঞ্জ মাটিয়ানতলা এলাকার বাসিন্দা। একটি মামলায় ৪ বছরের সাজা হয়েছে। এই চার বছরের সাজা পরেয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ২৮ ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

প্রায় তিন দশক পলাতক জীবনে আমীর হোসেন পরিবারের তেমন খোজ খবর না নিলেও মাঝে মধ্যে মোবাইলে পরিবারের সকলের খবর নিতেন। মাঝে মধ্যে পুলিশ আমীর হোসেনকে গ্রেফতার করতে আচমকা তার বাড়িতে উপস্থিত হতেন। পুলিশ শাসিয়ে আসতো পরিবারের সদস্যদের। এইভাবে ভয়ে ভয়ে চলে প্রায় তিন দশক। পরিবারের কর্মময় এই আমীর হোসেনের অনুপস্থিতিতে পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটন। পরিপাটি সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। ছন্নহারা হয়ে পরে প্রায় সকলেই। আমীর হোসেনের পলাতক জীবনে সংসার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন, পরিচিতজন এমনকি পরিবারের কোন সদস্য তাকে ভাল কোন পরামর্শ দেয়নি। মাত্র ৪ বছরের সাজা নিয়ে এভাবে তিন দশক কাটিয়ে দিলেও ফিরে তাকাননি কেউ। এরই মধ্যে কোতোয়ালী পুলিশের চৌকস, দায়িত্বশীল, ও মানবিকবোধ সম্পন্ন ওসি শাহ কামাল আকন্দ বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সচেতন মহল, সমাজ হিতৈষী, জনপ্রতিনিধি ও আমীর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এই সময়ে ওসি শাহ কামাল আকন্দ আমীর হোসেনের স্থানীয়বাসি এবং পরিবারের সদস্যদের বুঝাতে সম হন এইভাবে সারা জনম পলাতক থাকলেও তার জেল শেষ হবে না। এই বৃদ্ধ বয়সে এখানে সেখানে পলাতক জীবন অনেক কষ্টের। বরং আমীর হোসেনের কষ্ট, দুর্ভোগ আরে বেড়েই চলবে। অপরদিকে তার অনুপস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা ক্রমেই অন্ধকারে চলে যাচ্ছে। এর চেয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে আতœসমর্পন করা অনেক ভাল।

স্থানীয়বাসি ও আমীরের পরিবারের সদস্যদের সাথে ওসি শাহ কামাল আকন্দ আরো বলেন, আতœসমর্পণ করলে চার বছরের সাজায় হয়তবা তিন বছর বা সামান্য এদিক সেদিক সাজাভোগ করতে হবে। এর পরই উন্মুক্ত পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। ঐ পরিবারের সদস্যসহ তাদেরকে আশ্বস্ত করে ওসি আরো বলেন,বর্তমানে জেলখানা অনেক সুন্দর এবং উন্নত পরিবেশ। সেখানে থাকাবস্থায় পরিবারের সদস্যদের খোজ খবর নেওয়া সম্ভব। ওসি তাদেরকে আরো আশ্বস্ত করেন, আমীর হোসেন আত্মসমর্পণ করলে যদি আইনী কোন সুযোগ থাকে তাহলে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করব। চৌকস ও দায়িত্বশীল ওসি শাহ কামাল আকন্দের নানা পরামর্শ এবং আশ্বাসে স্থানীয়বাসি ও আমীর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা আশ্বস্ত হন। এক পর্যায়ে তারা আমীর হোসেনের সাথে দীর্ঘ কথা বলে তাকে আতœগোপন ছেড়ে পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দিতে বাধ্য করেন। স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘ ২৮ বছর পর রবিবার ১০ অক্টোবর রাতে আমীর হোসেনকে কোতোয়ালী মডেল থানার এসআই শুভ্র সাহা গ্রেফতার করেন।

চার বছরের সাজা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পলাতক আসামি আমীর হোসেনকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর ময়মনসিংহের সুযোগ্য পুলিশ সুপার সার্বিক দিক নির্দেশনায় কোতোয়ালী মডেল থানা এলাকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করছি। একইসাথে পুলিশকে নিয়ে জনগণের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করছে। যাতে পুলিশকে সাধারণ জনগণ বন্ধু ভাবতে শুরু করে। এ জন্য নিয়মিত বিট পুলিশিংয়ের সভা করা হচ্ছে। ফলে জনসাধারণ নিজ নিজ বিট এলাকার মাদক, সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, জুয়া সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে সার্বিক ভূমিকা নিয়ে পুলিশকে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। তিনি আরো বলেন, বিট পুলিশিংয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমের ফলে কুষ্টিয়া বিদ্যাগঞ্জ বিট এলাকার জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা এবং তথ্যের ভিত্তিতে ৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ২৮ বছর যাবৎ পলাতক আসামী মোঃ আমীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য এর আগে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দের পরামর্শে চরনীলীয়ার সাজাপ্রাপ্ত আরো ৫ পলাতক আসামি আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশের এ ধরনের উদ্যোগকে স্থানীয়বাসি সাধুবাদ জানিয়েছেন।