রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাস্তবধর্মী একটি ছোট্ট গল্প “ভূতের ভয়”

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ১৫, ২০২০, ২:৪৭ অপরাহ্ণ

লেখকঃ হাফেজ রাকিবুল ইসলাম ভুঁইয়া

এক রাতের কথা। আমি তখন নরসিংদী জেলার বালুয়াকান্দি মাদরাসায় লেখাপড়া করি। হেফযখানায় খতম শুনাচ্ছি। সেই সময়টা ছিল গরমকাল। লেখাপড়ায়ও ছিলো অনেক চাপ। সেজন্য আমাদেরকে প্রতিদিন প্রায় অনেকরাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে পড়তে হতো। আমরা নিয়মিত ৮-১০ জন মিলে ২য় তলার বারান্দায় বসে পড়তাম। কেউ নামাজে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতো,কেউ মুখস্থ তেলাওয়াত করতো। আবার অনেকেই কোরআন শরীফ দেখে তেলাওয়াত করতো।
কিন্তু আমি বেশিরভাগ সময় নামাজে তেলাওয়াত করতাম।

সে রাতে দ্বিতীয় তলায় সহপাঠীদের পড়ার আওয়াজে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো। তাই ভাবলাম তৃতীয় তলায় গিয়ে নামাজে তেলাওয়াত করবো। কিন্তু সেই দিনই আমাকে পড়তে হলো ভূতের খপ্পরে।

ঘটনাটা তোমাদের খুলেই বলি!
তৃতীয় তলায় গিয়ে মাত্র দুই রাকআত নামাজ পড়েছি। হঠাৎ কানে গাছের পাতার মরমর শব্দ ভেসে আসছে। আমি ভাবলাম,বাতাসের কারণে পাতায় মরমর শব্দ হচ্ছে। তাই আমি কোন ভয় পাইনি। কিন্তু আস্তে আস্তে আওয়াজটা বাড়তে শুরু করলো। তখন আমার মনে কিছুটা ভয় জাগলো। নামাজ শেষ করে তাকিয়ে দেখি,পুরো গাছ থরথর করে কাঁপতে শুর করলো। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এলাম। নিচে এসে দু,চারজনকে ডেকে বললাম,একটু উপরে আসো।
‘কি হয়েছে?’ তারা বললো।
‘ভূত’! আমি বললাম।
“কোথায় ভূত?”
গাছে।

তারপর আমরা তৃতীয় তলায় গেলাম। গিয়ে দেখি গাছ এখনও কাঁপছে। এটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলাম এবং দৌড়ে নিচে নেমে এলাম। তারপর আমরা একটা টর্চ নিয়ে সেই গাছের কাছে গেলাম। একজন গাছে টর্চ মারলো। সাথে সাথে গাছে একখন্ড আগুন জ্বলে ওঠলো। আমরা আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। কি আশ্চর্য! গাছে আগুন কোথ্যেকে আসলো!

তখন আমি বললাম,কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। চলো আমরা অযু করে শুয়ে পড়ি। সবাই আমার সাথে একমত হয়ে বললো,ঠিক আছে,চলো তাহলে শুয়ে পড়ি।

তারপর সবাই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে। শুয়ে শুয়ে ভাবছি,কি দেখলাম? যা হবার হয়েছে,ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর ৪টায় সবাই বলাবলি করতে লাগলো,রাতে কি হয়েছিলো?

আমি বললাম,যা শুনেছো ঠিক তাই হয়েছে। তারপর ফজরের নামাজের জন্য মসজিদে গেলাম। নামাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ঐ গাছের কাছে আসলাম। কি অবাক কান্ড! গাছের নিচে একটি খড়ের আঁটি পড়ে আছে। আঁটির মাথা কিছুটা পোড়া ছিলো। গাছের উপর তাকিয়েতো আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। গাছে একটা অর্ধেক কাটা মৌচাক। তখন আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে,ভূতের ভয়ে আমরা রাতে আতংকিত ছিলাম,তা কোনো ভূত ছিলোনা ছিলো একটা মধু চোর। আর যে আগুন খণ্ড আমরা গাছে দেখেছিলাম তা ছিলো গাছের নিচে পড়ে থাকা ঐ খড়ের আঁটির আগুন। আহ্! মধু চোরকে ভূত ভেবে আমার সারাটারাত ভয়ে ভয়ে কাটলো। ভয়ের কারণে আমার ঘুমও ভালোভাবে হয়নি। আগে যদি জানতাম,গাছে মধু চোর ছিলো,তাহলে তাকে ধরে জনমের মাইর দিতাম।