রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৬শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাবা, তুমি অম্লান চির ভাস্বর – এ.বি.এম. আল আমিন

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২১
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ৭, ২০২১, ১২:১১ অপরাহ্ণ

′′বাবা,তুমি অম্লান চির ভাস্বর” এ.বি.এম.আল আমিন

বাবা আমার চলে গেলেন না ফেরার দেশে – আজ প্রায় পাঁচ মাস! অনেকটা অসময়ে!! আমার জন্য তো সেটা অসময়ই!!! কেননা তখনও যে তাঁর সাথে আমার মতদ্বৈততার অবসান হয়নি!!!!
মতদ্বৈততা। আজ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি – আমি ছিলাম পুরোটাই ভুল। কেননা, বাবার যা অর্জন তার হাজার ভাগের এক ভাগও আমার নেই। বাবা গ্রামকে খুব ভালবাসতেন – খুব। তিনি এমন একটা স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে দিন-রাত চলত জুয়োর আড্ডা। তা’ও এমন একটা সময়ে যখন ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করাটা ছিল অনেকটাই সহজ। আজ সে বিদ্যালয় এবং এলাকা দু’টোই উন্নতির এতটাই হাইওয়েতে যা সেদিন ছিল কল্পনাতীত। লিখছি সহজ করে কিন্তু কাজটা যে কতটা কঠিন ছিল সেটা আজ চাকুরি করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাঁর কতটা ত্যাগ, শ্রম, মেধা আর যোগ্যতার বিনিময়ে আজ বিদ্যালয় ও এলাকার এ অবস্থান!
কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছেন আমার বাবা!? এ প্রশ্নে বাবা বলতেন আমি ব্যবসায়ী নই, আমি শিক্ষার ফেরিওয়ালা। আমার ফেরি করা আলোর বিনিময়ে তুমি অর্থ বা অন্য কিছু আশা করলে আমাকে বুঝে নিতে হবে যে, আমি আমার সন্তানের কাছেই ঠিকমত ফেরি করতে পারিনি – আমি ব্যর্থ। না বাবা, না। তুমি ব্যর্থ হতে পারনা, ব্যর্থ হতে পারে না তোমার মতো একজন মহান মানুষ – তাহলে যে জগতটাই মিথ্যে হয়ে যায় বাবা। দেরীতে হলেও, এই দেখ, তোমার এলাকায় গিয়ে, তোমার রক্ত ঘাম করা শ্রমের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টার দিকে তাকিয়ে, আমি আজ ঠিকই বুঝতে পারছি তোমার ফেরি করা জিনিসটার মূল্য কত!!!! এলাকার যে মানুষগুলোর জুয়োর গুটির সাথে চিরসখ্যতা ছিল/থাকার কথা, সেই মানুষগুলোর আর তাদের সন্তানদের অবস্থানের দিকে তাকিয়ে আজ আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছি – তোমার প্রচেষ্ঠা ব্যর্থ হয়ে যায়নি। বৃথা যায়নি তোমার ত্যাগ, তোমার পরিশ্রম। বিলীন হয়ে যায়নি তোমার সততার তেজ।
বাবা যেখানে শুয়ে আছেন চিরনিদ্রায়, সেখান থেকে তাঁর স্বপ্নের বিদ্যালয়টির দূরত্ব খুব বেশি নয়। ওখান হতে বিচ্ছুরিত হতে থাকা আলোর ছটায় নিশ্চয়ই রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আলোকিত থাকবে আমার বাবার কবর – এটাই আমার বিশ্বাস, আমার সমস্ত অস্তিত্বের প্রার্থনা।
তাঁর আরও কিছু স্বপ্ন ছিল। যেগুলো আপন অস্তিত্বে লালন করা বা ফেরি করা আমার রক্তের ঋণ। কিন্তু কাজগুলো যে কতটা কঠিন সেটা, যে কখনও ওপথ মাড়ায়নি তার পক্ষে বুঝে ওঠা অসম্ভব। বারবার মাথাছাড়া দিয়ে উঠে প্রতিশোধস্পৃহা, ভেতর থেকে উথলে উঠতে চায় অহংকার। পেরে উঠাটা খুব কষ্টের, খুব কষ্টের। প্রয়োজন অনেক ধৈর্যের । যে পিতার রক্ত আমার শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায়, সে রক্ত বলে – আমি পারব। আমাকে পেরে উঠতেই হবে – আমি পারব, ইনশাল্লাহ। কেননা এটাই যে জীবিত বাবার সাথে করা কৃত ভুলের প্রায়শ্চিত্ত বা ক্ষমা পাবার একমাত্র উপকরণ।
যাদের সহযোগিতায়, ত্যাগে আর শ্রমে বাবার অসমাপ্ত স্বপ্নগুলোর প্রথমটা বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়টা শুরু করতে পেরেছি তাদের সকলকে ধন্যবাদ। সফলতার প্রত্যাশায় দোয়াপ্রার্থী।