মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৮শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন :আমাদের মাদার অর্গানাইজেশান

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৬, ২০২০, ৬:৫৯ অপরাহ্ণ
এমদাদুল হক মিল্লাত :
ছাত্র ইউনিয়ন করা কালিন সময়ে কারো কাছে সহায়তা চাইতে গেলে প্রশ্ন করতো আপনাদের ফাদার পার্টি কি? আমরা বলতাম, আমরা যে সংগঠন করছি, এটাই আমাদের পরিচয়। তারা খুশী হতেন না, কিংবা কমিউনিস্ট আদর্শ এ বিষয়ে হয়তো বিস্তৃত জানতে চাইতেন। কেউ তর্ক অথবা কূট তর্ক করে আটকিয়ে দিতে চাইতেন। কিন্তু আমরা চেষ্টা করতাম, গনসংগঠন,রাজনৈতিক দল,তার মধ্যকার প্রভেদ, অভিন্নতা, আদর্শের সংহতি ইত্যাদি তুলে ধরার জন্য। সব সময় সফল হওয়া যেত না,সময় বাধ সাধতো অথবা কুট তার্কিক দের চটুলতা ও।
ছাত্র আন্দোলন আমাদের ইতিহাস এর এক বিশাল অংশ জুড়ে গৌরব জনক, সংগ্রামের অধ্যায় রচনা করেছে। ভাষা আন্দোলন, তার প্রথম সোপান। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লড়াই। এ সংগ্রামের চরিত্র ছিলো, সাম্রাজ্যবাদ,সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী। ১৯৫২ সনের ২৬ এপ্রিল এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্র ইউনিয়ন এর জন্ম। মুসলিম লীগের শাসন কে মাটি চাপা দিতে ঐক্য বদ্দ্ব রাজনৈতিক জোট জরুরী হয়ে উঠে। যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন তার প্রমাণ। মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে। কিন্তু ইস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান, মিলিটারি শাসন জারি করে প্রতিক্রিয়াশীল ভাবধারার জুলুম বাজী রাজত্ব পোক্ত করে তুলে। শিক্ষা, সংস্কৃতি,গণতন্ত্রের লড়াই তখন আরো জরুরী। শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী সংগ্রাম দিয়ে শুরু।
সেই ষাটের দশকের কালজয়ী সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল ছাত্র ইউনিয়ন। প্রকাশ্য,অপ্রকাশ্য, রাজপথের মিছিল সেই সাথে মানুষ কে গড়ে তোলা,নির্মাণ করা। শিক্ষিত তরুণী -তরুন মানেই দ্রোহী, মুক্তমনা প্রজন্ম। বিপ্লবের তাজা স্বপ্ন চোখে চোখে। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ১১দফার সংগ্রাম।
একাত্তরের সশস্ত্র সংগ্রাম তার ধারাবাহিকতায় চলে আসে। গেরিলা বাহিনী গড়ে উঠে। সম্মুখ সমরে বেতিয়ারায় প্রান দেন যোদ্ধারা। লক্ষ লক্ষ শহীদের সাথে মিশে আছে সে রক্ত স্রোত। মুক্তি পাগল মানুষ নতুন চিন্তায় অভিষিক্ত হয়।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই। সদ্য স্বাধীন দেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে জীবন দান। কঠিন ও জটিল লড়াই। তর্ক,বিতর্ক, নানা টালমাটাল সময়।
৭৫এর সামরিক অভ্যুত্থান। পাকিস্তানি ভাবধারার অভ্যুদয়। পিছনে চলে আসা।আবার নতুন নির্মাণ কাল।স্বৈরশাসক এর বিরুদ্ধে ৮০,৯০দশকের সংগ্রাম। জীবন দান,তাজুল হওয়া, কারাগারে যাওয়া, স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়া। স্বপ্ন দিয়ে গড়ে তোলা। টুক,টুক করে রিক্রুট করা, নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই গড়ে তোলা। কে করে এগুলো?ছাত্র ইউনিয়ন।
বন্ধা সময়। সবাই যখন সুবিধা, অর্থ,চাক চিক্যের কাছে সমর্পিত। আর কি ছাত্র আন্দোলন হবে? এমন হতাশা জনক মন্তব্য নিয়ে যবনিকা টেনে দিচ্ছেন। সে সময়ে অবাক করে দিয়ে একজন মানব, সামরিক তত্তাবধায়ক এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠে, কারানির্যাতন ভোগ করা।
মূল্যবোধ যখন পতনোন্মুখ, তখন একদল লিটন, দাড়িয়ে যায় নারী আর সভ্যতার সম্ভ্রম রক্ষায়।মানবতা বিরোধী অপরাধী যখন মুক্ত হয়ে যায়-যায়,একদল লাকী, মাসুম,তারেক, শুভ,তখন কোটি শ্লোগান এ গণ জাগরিত করে তুলে মুখ থুবড়ে যাওয়া স্বদেশে। এরা কারা?
বিশ্ব আজ থমকে আছে করোনা ভাইরাস এ। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ধান কাটা, খাদ্য পৌঁছে দেয়া। অনেকের সাথে, কারা আছে বিরামহীন পথ চলায়?
দীর্ঘ ইতিহাসে,শহীদের তালিকার লিস্ট অনেক লম্বা,নির্যাতনের নিষ্পেষিত হওয়া, দ্রোহী, মুক্ত সমাজের প্রান পাওয়া, বিপ্লবী যোদ্ধা, সাহসের সাথে কাজ করা যে অগণন, তার প্রেরণার উৎস মূল ছাত্র ইউনিয়ন। অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে, বলা হয়নি। সময় সুযোগ হলে লিখবো।
যারা লাল টুক টুকে স্বপ্ন দেখে এখনো এর অনেক টাই দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কোন ভুল নেই তা বলব না। কিন্তু কোন অন্যায় নেই,। ন্যায়, নিষ্টা,বিপ্লব, এর পথে আমরা অবিচল। আদর্শিক মানুষ গড়ায় ছাত্র ইউনিয়ন আমাদের মাদার অর্গানাইজেশন।
……………………..
কমরেড এমদাদুল হক মিল্লাত
সভাপতি, সিপিবি জেলা কমিটি, ময়মনসিংহ।