বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

প্লিজ বাবা, কাছে আসো, আরো কাছে-মোঃ রইছ উদ্দিন

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ১০, ২০২০, ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

মোঃ রইছ উদ্দিন :

বাবা। প্রিয় বাবা। তোমাকে পেতে চাই, খুব কাছে, আগের চেয়ে অনেক কাছে! হৃদয়ের একবারে ভিতরে- যেখানে তোমার স্বপ্ন, তোমার স্পর্শ আমাকে তাড়া করে, ঠিক সেখানে তোমাকে চাই। কি বাবা! আজ তোমায় কেন পাচ্ছি না; অভিমান তো তুমি কখনও করো না, প্লিজ বাবা, কাছে আসো, আরো কাছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তুমি বারবার আমার বুকে আমাকে জড়িয়ে যেখানে ছিলে ঠিক সেইভাবে আবারও চলে এসো। এবার আর তোমাকে ছাড়বো না!
সত্যিই কী! তুমি চলে গেছো, না ফেরার দেশে। সেটা ভাবতেই অশ্রু’র জলকণায় ভিজে যায় দু’চোখের পাতাগুলো। মনে হয়, এই তো তুমি আছো, কাছে আসবে- ডাকবে, দুষ্টুমিটাও করবে, প্লিজ বাবা চলে এসো! সেই যে গেলেন ১০ সেপ্টেম্বর। সনের বছর ২০১৮। এখন কুড়ি কুড়ি, বারবার আপনাকে খোঁজে ফিরি। হে আল্লাহ, আমার বাবাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করুন, আমীন।


আমরা তোমার মতো মহৎ হতে পারবো না। বছরের পর বছর দেয়া যন্ত্রণা, এক মিষ্টি হাসিতে ক্ষমা করে দিতে পারবো না। আমরা তোমার মতো নই; যন্ত্রণা’র প্রতিটা মুর্হুতের দিনক্ষণ আমাকে তাড়া করে, ধ্বংসাত্বক চালাতে মন চায়, হিংসাত্বক আর পশুত্ব ভরও করে। তারপরেও পারি না, ত্রিসড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে উচ্চশব্দে তোমার প্রত্যেকটি সত্যবাণী- সেদিন আমাদেরকে পরাজিত করেছে, ধ্বংস করেছে মোদের পরিকল্পনাকে। তুমি বাবা; তুমি শীতলছায়ার বটতলা, তুমি শুধু বাবা নও, একজন মানুষ। আমরা শুধু বাবা ভেবে তোমার প্রতি অভিমান করেছিলাম, মানুষ হিসাবে নয়! সে মামলাটি আর চললো না, গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কথা রেখেছিলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তাও অভয় দিয়ে ছিলেন। শুধু আপনি সেই মামলাটিকে গলাটিপে মেরে ফেলেছেন। শাসন করেছেন, বারণ করেছেন। জেনেশুনে অন্যের ক্ষতি না করতে মানা করেছেন। আমরা মানলেও ওরা কী! কখনও মেনেছে? যদি মানতো, তাহলে মিথ্যে মামলায় আমাদের কেন বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো! শ^াসকষ্টে নতজানু আপনাকেও ওরাতো রেহায় দেয়নি, তাহলে আপনি কেন এতো ক্ষমা করে গেলেন!
হ্যাঁ, ক্ষমা মহৎ, ক্ষমা সুন্দর। সেইদিন বুঝি নাই, আজ হারেহারে টের পাচ্ছি। আপনি আমাদেরকে বারবার চেয়েছেন জঞ্জালমুক্ত রেখে যেতে। কলহমুক্ত আর শান্তিময় এক জগত উপহার দিতে। আমরা আপনার দেখানো পথেই হাঁটছি, ন্যায়ের পথে লড়ছি। হে বাবা আপনি আমাদের জন্য আর্শীবাদ করুন।
ক্ষমা চাই, ক্ষমা করুন। হে বাবা আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার সন্তানদের ক্ষমা করুন। সেদিন ছিলো সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮। একেএকে সবাইকে ডেকে এনে শাসক-উপদেশ সবই দিয়ে গেছেন। বিদায়রজনী এমনভাবে হবে বাবা সেদিন ভাবতেই পারিনি। এখন বারবার মনে হয়, কেন; কেন, সেদিন আপনার কাছে সর্বক্ষণ থাকতে পারেনি। আপনি ডেকেছেন, সাড়া দিয়েছি, কিন্তু আপনার মনের অনুভূতিটা কখনও ভাবতে পারি নাই।
আমার বাবার নাম আলাল উদ্দিন। আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ঘড়ির কাটা দ্রুত এগিয়ে চলে- আমাদের গণনায়। মহান রাব্বুল আল আমীন এর নিকট প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ আপনি আমার বাবাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ শান্তিময় স্থানে তাঁকে রাখুন, তিনি যেভাবে আমাদেরকে তার বুকে আগলে রেখেছেন, ঠিক সেইভাবে বাবাকে সুখে রাখুন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা। আমীন।