শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

নতুন বৌকে নিয়ে স্বপ্নের বিল্ডিং ঘরে থাকা হলো না কামালের!

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ২৭, ২০২০, ১১:৪৪ অপরাহ্ণ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
ইটের পর ইট গেঁথে প্রস্তুত বাসভবন। নতুন বৌ’কে নিয়ে এ ছিলো স্বপ্নের ঠিকানা। সেই ঠিকানায় যাওয়ার আগেই চির বিদায় নিলেন মনিরুজ্জামান কামাল। তার মা হালিমা খাতুনের বুকফাটা আর্তনাদ; সন্তানের শেষ ইচ্ছেটা আর পূরণ হলো না! দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর/২০২০) সকাল সাড়ে ১১টায় কামালের জানাযার নামাজ বেলতলী কবরস্থান মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। মুমিনুলের জানাযার নামাজ শনিবার সন্ধ্যায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। দু’জনকে এ কবরস্থানে পাশাপাশি শায়িত করা হয়।
পরোপকারী মানুষ ছিলেন মনিরুজ্জামান কামাল। অন্যের বিপদে-আপদে এগিয়ে যাওয়া মানুষটি নিজের জীবন দিয়ে তা প্রমাণ করে গেলেন। তিনি বেলতলী গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের পুত্র। ৪ ভাই আর ৪ বোনের মাঝে সে ছিলো সবার আদরের। ভাইদের মাঝে সে ছিলো কনিষ্ঠ। ভাই-বোনদের মাঝে ৭ম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০০৭সালে যোগ দেয়। মাত্র ৩বছর চাকুরী করে শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০১০সালে চাকুরী ছেড়ে দেয়। পরিবারের সহায়-সম্পত্তি দেখভালের সঙ্গে প্রধান কাজ হয়ে উঠে বিপদগ্রস্থ মানুষকে সহযোগিতা করা। তার ভাই মোঃ কামরুজ্জামান মাস্টার জানান, ছোট ভাইয়ের জন্য বউ দেখাদেখি হচ্ছিলো, ইচ্ছে ছিলো ঘর নির্মাণের নতুন বউকে নিয়ে নতুন ঘরে উঠবে তার ভাই।
অপরদিকে রাজমিস্ত্রী মোমেনিুল ইসলামও ছিলেন কর্মপ্রিয় সবার প্রিয় মানুষ। সৎ, সততা আর আদর্শের কারণে এলাকার প্রতিটি ঘর নির্মাণে ছিলো তার ছোঁয়া। পাকাভিটি সহস্র পরিবারের থাকার বসতঘর নির্মাণ করেছেন তিনি। পাকাবসত নির্মাণ করতে গিয়ে এবার মাটির ঘরে শায়িত হলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামে শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর/২০২০) বাথরুম ও পানির সেফটি ট্যাংকির স্যান্টারিংয়ের বাঁশ-কাঠ উঠাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘরে। হাসপাতালে নেয়ার পত্রে রাজমেস্ত্রী ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মালিকের মৃত্যু হয়। বেলতলী গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের পুত্র মনিরুজ্জামান কামাল (৩০) নিজবাড়িতে বিল্ডিং ঘরের সাথে বাথরুম ও পানির ট্যাংকি তৈরি করেন। সেই ট্যাংকি কাজ করেন একই গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র মোমিনুল ইসলাম (রাজমেস্ত্রী) ও এরশাদ আলী (রাজমেস্ত্রী)। শনিবার পানির ও বাথরুমের ট্যাংকির সেন্টারিং এর মালামাল (বাঁশ-কাঠ) উত্তোলনের জন্য নিচে নামে রাজমেস্ত্রী মোমিনুল ইসলাম। এরপর তার আর কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় সহযোগী এরশাদ বাসার মালিককে খবর দেন। বাসার মালিক মনিরুজ্জামান কামাল তখন ভাত খেতে বসেন। ভাতের প্লেট রেখেই ছুটে আসেন। তিনিও ডাকাডাকি করে রাজমিস্ত্রী মোমিনুলের হদিস পাননি। অবশেষে রাজমিস্ত্রিকে বাঁচাতে সে নিজেই ট্যাংকির ভিতরে ঢুকেন। মুর্হূতের মাঝে সেও অজ্ঞান হয়ে ট্যাংকির ভিতরে পড়ে যান। এরপর পরিবার ও প্রতিবেশী লোকজন ট্যাংকির ভিতর থেকে বিশেষ কৌশল করে দু’জনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যে মোমিনুল ইসলামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামান কামাল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত মনিরুজ্জামানের ভাই মোঃ কামরুজ্জামান মাস্টার জানান, সেফটি ও পানির ট্যাংকির ভিতরে অক্সিজেনের অভাবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গৌরীপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, ট্যাংকির কাজ শেষে দীর্ঘদিন যাবত যাতে কোন শিশু পড়ে না যায় তার জন্য ঢাকনা লাগানো লাগানো অবস্থায় ছিলো। সেই ট্যাকিংর ভিতরের থাকা কাঠ-বাঁশ উত্তোলন করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় গৌরীপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।