রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

“জীবন প্রবাহ” -এবিএম আল আমিন

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১
||
  • প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৩, ২০২১, ১০:০০ অপরাহ্ণ

 

জীবন প্রবাহ
এবিএম আল আমিন

ঐ দেখা যায় একটি রেইন ট্রি। দূরে একটি বাড়ি। বাড়িটির সামনে জোড়াপুকুর। পুকুরের প্রশ্বস্থ পাড়ে সমান্তরালে অনেকগুলো নারকেল গাছ। একলা একটি বাড়ি। সামনে খাল, পিছনে নদী।

একদিন, বাড়িটির অনেক যশ ছিল। ছিল অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। রোজ সকালে লাইন ধরে লোকজন কাজ করতে আসত বাড়িটিতে।

একদা বাড়িটিতে কিছু মানুষ বাস করত। তাঁদের ছিল অনেক জ্ঞান, অনেক সম্মান। আজ তাঁরা নেই। মারা গেছেন। বাড়িটিও আর আগের মত নেই। জোড়াপুকুর মজে গেছে। নারকেল গাছগুলোও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে খাল ও নদীর পানি। ভাটা পড়েছে বাড়ির প্রভাব প্রতিপত্তিতেও। তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে বাড়ির সম্মান।

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কী জানি, হয়ত বাড়ির জীবিত মানুষগুলো বদলাতে পারেনি। হতে পারেনি মরে যাওয়া মানুষগুলোর মতো। মরে যাওয়া মানুষগুলো কিন্তু এদের বদলানোর সব আয়োজনই করে গেছেন। তবুও কেন যে বদলাতে পারেনি এরা!

এক যুগ আগেও বাড়িটির মধ্যমণি ছিলেন এক দাদী। দাদীকে ঘিরে আবর্তিত হতো তাঁর সন্তানেরা। আর তাঁর চারদিক ঘিরে নাতি-নাতনির দল অবসরের রাতে মেতে উঠত গল্পে-আড্ডায়। প্রতিটি পূর্ণিমায় কিংবা অমাবস্যায়। হৈ-হুল্লোর, চিৎকার-চেঁচামেচি, খুনসুটি-ঝগড়া ইত্যাদি যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যেত, ছেলে-মেয়েদের মারতে তেড়ে আসত বুড়ির বৌমারা। ঢাল হয়ে দাঁড়াত বুড়ি। কী জানি হয়ত বুড়ির ভালো লাগত এসব। সবই এখন স্মৃতি।

ঐ দেখা যায় একটি রেইন ট্রি। দূরে একটি বাড়ি। বাড়িটির সামনে এখন মজাপুকুর। নারকেল গাছগুলো নেই। নদীটিতে পানি কমে গেছে। শুকিয়ে গেছে খালটি। ইতিহাস – এখন বাড়িটির সম্মান আর প্রভাব-প্রতিপত্তি।

একদিন এ বাড়িটিতে সব ছিল। শিক্ষার আলোটা ছিল একটু বেশি মাত্রায়। এর ঠিক বিপরীতমুখী ছিল ইসলামের আলো। ইসলামিক আচারগুলো ছিল
প্রায় অনুপস্থিত। কী জানি, হয়ত এজন্যই বাড়িটির আজ এ পরিণতি!!

পূর্ব পুরুষদের বিত্তের সবটুকু না হলেও অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বেশির ভাগটা ধরে রেখেছেন মেজো চাচা, রাগ করে তিনি এখন সপরিবারে আমেরিকা প্রবাসী। নাতি-নাতনিদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চাকুরিজীবীর সংখ্যাটাও নেহাৎ কম নয়। অর্থ আর বিত্ত মিলে এখনও এ একক বাড়িটি পুরো গ্রামের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছনে পড়ে যাওয়ার কথা না। তবুও……।

তবুও, ঐ দেখা যায় একটি রেইন ট্রি। দূরে একটি বাড়ি। নারকেল গাছগুলো নেই। নদীটিতে পানি কমে গেছে। শুকিয়ে গেছে খালটি। বাড়িটি এখন আগাছায় ভর্তি।

বাড়ির সামনে এখনও আছে জোড়াপুকুর। পুকুর পাড়ে নারকেল তলায় শুয়ে আছেন বাড়ির কর্ণধার দাদারা। নদীর ধারে জঙ্গলে ঘুমায় আরেক কর্ণধার বড় চাচা। অন্য কর্ণধার বাবা ঘুমাচ্ছেন বাড়ির পিছনে। বাড়িটি ইদানিং আমাকে খুব টানে। আমার পিতার কবর লুকিয়ে আছে যে সেখানে!!!

বেঁচে থেকে না বদলালেও মরে যাওয়ার পর ঐ কর্ণধারদের মতই একদিন আমাদের সবাইকে পঁচতে হবে। পূর্বসূরীদের মত একেক জন একেক জায়গায়। এটা ভাবতেই দাদীর চারপাশে বসে আড্ডা দেয়া দিনটার কথা খুব মনে পড়ে। আর স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে।

স্বপ্ন দেখি…… ঐ দেখা যায় একটি রেইন ট্রি। দূরে একটি বাড়ি। বাড়িটির সামনে জোড়াপুকুর। পুকুরের প্রশ্বস্থ পাড়ে সমান্তরালে অনেকগুলো নারকেল গাছ। একলা একটি বাড়ি। বাড়িটির আছে অসংখ্য যোগ্য জনগোষ্ঠী। অর্থ-বিত্ত, যশ-প্রভাব-প্রতিপত্তি। সামনে খাল, পিছনে নদী। নদীর পাড়ের উঁচু জায়গায় অনেকগুলো কবর। একসাথে, সারি সারি – সবাই ঘুমিয়ে আছে। পাশেই একটি মসজিদ। সেখানে আযান হচ্ছে।