শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় ৫ ডাকাত র‌্যাবের অভিযানে আটক

প্রকাশিত হয়েছে- রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
এম এ আজিজ || প্রধান প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
  • প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ২৬, ২০২১, ৯:১৫ অপরাহ্ণ

ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতিসহ দুইজনকে হত্যার ঘটনায় র‌্যাব-১৪ অভিযান চালিয়ে ৫জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো, আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন, মাকসুদুল হক রিশাদ, মোঃ হাসান, রুবেল মিয়া ও মোহাম্মদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত মোবাইল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। র‌্যাবের মিডিয়া অফিসার হান্নানুল ইসলাম রবিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন জামালপুর স্টেশনে পৌঁছলে যাত্রীরা ট্রেনের ছাদ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে ট্রেনের ছাদ থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘোষণা করে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, ডাকাতির মাধ্যমে তাদেরকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় মামলা নং-০৫/১৩ তারিখ- ২৪/০৯/২০২১খ্রিঃ ধারা- ৩৯৬ পেনাল কোড দায়ের হয়।
চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এ ঘটনায় র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ গোয়েন্দা তৎপরতা ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে। খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রবিবার রাতে ৫ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হলো, আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন, মাকসুদুল হক রিশাদ, মোঃ হাসান, রুবেল মিয়া ও মোহাম্মদ। তাদের সকলের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরীর শিকারীকান্দা ও বাঘমারা এলাকায় বলে র‌্যাব জানায়।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব আরো জানায়, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৪ জন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। এছাড়া আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন, মাকসুদুল হক রিশাদ, মোঃ হাসান টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যোগদেয় মোহাম্মদ সহ আরো একজন। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাত্রা শুরু করলে তারা (ডাকাতদল) ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির একপর্যায়ে যাত্রী সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সাথে ডাকাতদলের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে যাত্রী সাগর মিয়া ও নাহিদের মাথায় এলোপাথারীভাবে আঘাত করে। এতে সাগর ও নাহিদ ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়লে ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে প্রবেশের আগে সিগন্যালে ট্রেনেরগতি কমলে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
র‌্যাব আরো জানায়, ডাকাতচক্রটি নিয়মিত ট্রেনে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত। এছাড়া তাদের কতক সহযোগী গফরগাঁও, ফাতেমা নগর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত। অনেক সময় তারা ছোট ছোট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। ছোট ছোট উপ-গ্রুপগুলোর কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুন্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত। এছাড়া অন্যরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে পূর্ব-নির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত বলে র‌্যাব দাবি করে। ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় আটককৃত রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল। এছাড়া হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল, রুবেল লুন্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুন্ঠিত মালামাল স্বল্পমূল্যে উল্লেখিত ডাকাতদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বেশী মূল্যে বিক্রি করে। র‌্যাবের মতে ্এই রুবেল ডাকাতদলের পৃষ্ঠপোষক এবং রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা। রিশাদের নামে কোতোয়ালী মডেল থানা ও রেলওয়ে থানায় এশাধিক মামলা রয়েছে।