রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরে মেয়র প্রার্থী আলোচিত শুভ্র হত্যাকান্ডের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১
প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ১, ২০২১, ৮:৩৭ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র আলোচিত হত্যাকান্ডের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সহকারী সচিব মো. মফিজুল ইসলাম পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

৩০ নভেম্বর পত্রাদেশের মাধ্যমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ (২০০২ সনের ২৮ নং আইন) এর আওতায় মামলা স্থানান্তর সংক্রান্ত গেজেট প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচি ফৌজিয়া খানের স্বাক্ষরে গৌরীপুর থানার মামলা নং ২২, তারিখ ১৯ অক্টোবর/২১ মামলাটি ময়মনসিংহের ৪নং জিআর আমলী আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ ঢাকায় স্থানান্তরের গেজেট ২২ নভেম্বর প্রকাশিত হয়।
মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার জন্য পরিবার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি জানিয়ে আসছিলো। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের খবরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন শুভ্র’র মা খালেদা আক্তার। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এই শুভ্রকে কোলে নিয়েছিলো, সেই শুভ্রকে যারা লাশ করে আমি তাদের ফাঁসির দাবির জানাচ্ছি।

আর তার স্ত্রী তাহরিমা আক্তার চুমকী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি স্বামী হত্যার দ্রুত বিচার চাই। তিনি বলেন, প্রিয় স্বামীকে হারিয়ে অনেকটাই দিশেহারা। প্রতিটি রাত নির্ঘুম কাটে, পুরো জীবনটায় ঝড় বইছে। স্বামীর সঙ্গে সে বছরের ২৫ আগস্ট ছিলো শেষ বিবাহবার্ষিকী উদযাপন। এই দিনের স্মৃতিটুকু বুকে জড়িয়ে প্রতিকৃতিতে স্পর্শ করে স্বামীকে খোঁজে ফিরেন।
পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন মাসুদুর রহমানা শুভ্র। ৯টি ওয়ার্ডে নিজস্ব কর্মী-সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। কিন্তু ২০২০সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শুভ্রকে পৌর শহরের মধ্যবাজার বাজার পান মহালে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্ত বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। শুভ্র গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষা সৈনিক ডাঃ এম.এ সুবাহানের নাতি। কালিপুর দৈনিক বাজার এলাকার হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খালেদা আক্তারের পুত্র। দু’পুত্রের মাঝে শুভ্র ছিলো বড় সন্তান।

হত্যাকা-ে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে শহরে টানা ২১দিন প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ বছরের ৫ মে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী অফিসার ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ কামাল আকন্দ। প্রতিবেদনে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির (একাংশের) যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ, গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ ১৯জনকে অভিযুক্ত করে এ প্রতিবেদন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪নং আমলী আদালতে দাখিল করেন। হত্যাকা-ের ৬মাস ১৭দিন পর এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনে চার্জশীটভুক্ত ১৪জন ছাড়াও মামলার তদন্তকারী অফিসার ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ কামাল আকন্দ অনুসন্ধানে আরো ৫জনের সম্পৃক্ত পাওয়ায় ১৯জনকে অভিযুক্ত করে এ প্রতিবেদন দেয়া হয়। তারা হলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ (২৯), তার ভাই মাসুদ পারভেজ কার্জন (২৭), উত্তরবাজার পশ্চিম লাইনের জুলমান রেজা অলির পুত্র সাকিব আহম্মেদ রেজা (২৮), পশ্চিম লামাপাড়ার আব্দুল হেলিমের পুত্র মোজাম্মেল হক (৩০), পশ্চিম কাউরাটের মৃত লাল মিয়ার পুত্র খাইরুল ইসলাম (৩০), পশ্চিম ভালুকার মৃত মাহবুর রহমান মাস্টার কাদেরের পুত্র রিফাত (২৫), পশ্চিম কাউরাটের মো. মোস্তফার পুত্র মো. হানিফ ওরফে আবু হানিফা (৩০), ইউনুছ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (২৮), মৃত আব্দুল খালেকের পুত্র মজিবুর রহমান (৩০), আইনুল হকের পুত্র শরীয়তউল্লাহ সমুন (৩৩), গৌরীপুর পৌরসভার ৩বারের নির্বাচিত মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, তার ভাই সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম (৪৮), অপর ভাই সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম জুয়েল (৩৮), পশ্চিম কাউরাটের চান মিয়ার পুত্র রাসেল মিয়া (৩২), কাউরাট মধ্যপাড়ার মৃত ঈমান আলীর পুত্র কামাল মিয়া (৩৫), আব্দুল হেলিমের পুত্র মো. মাঈন উদ্দিন (২০), পশ্চিম লামাপাড়ার মৃত নজরুল ইসলামের পুত্র শরীফুল ইসলাম নাঈম (২২), পশ্চিমকাউরাটের মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র রুহুল আমিন (২৮) ও পৌর শহরের রিস্কাপট্টি কচিকাচার মৃত আছির উদ্দিনের পুত্র শাহজাহান মিয়া (২৫)।

অপরদিকে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট প্রদানের পর ৬ মে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই আবিদুর রহমান প্রান্তকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (৭ মে/২০২১) গৌরীপুর থানার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রধান আসামী বিএনপি নেতা মইলাকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামসহ ২৬জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী যুগান্তরকে জানান, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশীট (প্রতিবেদন) জমা দেয়া হবে।
এ দিকে স্বামীর স্বপ্ন পূরণের জন্য ও স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে শুভ্র’র স্ত্রী তাহরিমা আক্তার চুমকী মেয়র পদে গৌরীপুর পৌরসভায় প্রার্থী হন। ‘জগ’ প্রতীক মাঠে নামেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তিনি তার নিজ প্রতীক ‘জগ’ ছেড়ে দিয়ে অবশেষে নৌকা বিজয়ী করতে মাঠে নামেন। তবে তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম তৃতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।