বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

গৌরীপুরে নতুন ভোটার প্রণয়নে তথ্য সংগ্রহকারীর জন্মনিবন্ধনের জাল সনদ দেয়ার প্রতিবাদ বিক্ষোভ

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : আগস্ট, ১৯, ২০২২, ৯:০৫ অপরাহ্ণ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণ কর্মসূচীর জাতীয় পরিচয়পত্রে জাল ও ভুয়া জন্মনিবন্ধন প্রদানের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৯ আগস্ট/২০২২) ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা এ ঘটনায় জড়িত তথ্য সংগ্রহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার সজল চন্দ্র সরকার আন্দোলকারীদের শান্ত করেন। তিনি বলেন, যেকোনো উপায়ে হোক বা রাত যতই হোক আপনাদের জন্মনিবন্ধন করে হলেও হালনাগাদ ভোটার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তথ্য সংগ্রহকারী মো. হাবিবুর রহমান জানান, একটি চক্র আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে। আমি যে কয়েকজনের জন্মনিবন্ধনের কাজ নিয়েছি তাদেরগুলো করে দিয়েছি। দু’একটায় ভুল ধরা পড়েছে, সেগুলো ঠিক করে দিচ্ছি। তিনি আরো জানান, এটা তার দায়িত্ব ছিলো না, সহযোগিতা করতে এসে এখন বিপদে পড়েছেন।
উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের পূর্ব শালীহর গ্রামের রোমেলা খাতুন জানান, ভোটার হওয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহকারী বাড়িতে যান মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমার জন্মনিবন্ধনে ভুল আছে, এ কথা বলে ২শ টাকা নেন। তবে জন্মনিবন্ধন, অরজিনিয়ালটা নিয়ে এখন ‘ডুপ্লিকেটটা; দিয়েছে। ভোটার হওয়ার জন্য কম্পিউটারে ছবি তোলার পর বলে আপনার জন্মনিবন্ধন জাল! একই পরিস্থিতিতে পড়েন ইউনুস আলীর কন্যা মোছা, মর্জিনা খাতুন, আব্দুল মুন্নাফের কন্যা মোসা. বিউট আক্তার, আব্দুল কাদিরের পুত্র মো. জায়েদুর রহমান, মৃত হোসেন আলীর পুত্র সাব্বির মিয়া, মো. জমির উদ্দিনের পুত্র মো. রইছ উদ্দীন, মো. বাচ্চু মিয়ার পুত্র রাকিবুল হাসানসহ ৩শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী।
শালিহর গ্রামের মো. সুমন মিয়া জানান, প্রত্যেকের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহকারী ২/৩শ টাকা করে নিয়েছে। তারপরে সবার হাতে জাল-ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ডিজিটাল করেছেন, তাই অনলাইনে এসব চোরদের বাটপারি ধরা পড়েছে। চোরেরা এখন ডিজিটাল হতে পারেনি।
রাকিবুল হাসান জানান, তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। এখন ছবি তোলার পর জানলেন, তথ্য সংগ্রহকারীর দেয়া জন্মনিবন্ধন সনদ জাল। তিনি আরো জানান, এই তথ্য সংগ্রহকারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ও সাবেক ইউপি সচিব আব্দুল আউয়ালের সীল ও স্বাক্ষরও জাল করেছেন। পূর্বশালিহর গ্রামের ঝুমা আক্তার জানান, তার নিকট থেকে জন্মনিবন্ধনের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী ৩শ টাকা নিয়েছেন। জাল সনদ দেয়ার কারণে এখন প্রতিবাদ করায় টাকা ফেরত দিছে। তিনি আরো জানান, আমি সাভারে থাকি। সেখান থেকে ভোটার হওয়ার জন্য এসেছি। আজ ভোটার না হতে পারলে চাকুরীতেও ঝামেলা হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ কর্মসূচীর দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার নাসরিন বিনতে ইসলাম জানান, আমি যখন ঘটনা শোনেছি, তাৎক্ষনিক বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়কে অবহিত করেছি। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ জানান, ৩নং ওয়ার্ডের বেশকিছু জন্মনিবন্ধন কম্পিউটারে অনলাইন ডিভাইজে কোনো তথ্য দেখাচ্ছে না। আসলে এগুলো জাল। এর সংখ্যা কতো তা বলা যাচ্ছে না। এ ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক জানান, অসংখ্য মানুষ আজ জন্মনিবন্ধনের জন্য হয়রানির শিকার হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার সজল চন্দ্র সরকার জানান, তথ্যসংগ্রহকারী শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করবেন, সেখানে জন্মনিবন্ধন করে দেয়া তার দায়িত্ব নন। এ দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, যাদের জন্মনিবন্ধন জাল-ভুয়া ধরা পড়েছে, সেগুলো আজ রাতের মধ্যেই অনলাইনে নিবন্ধন করে তাদের ভোটার হওয়ার জন্য ছবি ও তথ্য প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।