শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৫শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ইসলামের শিক্ষা শান্তি ও সমঝোতা

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১
||
  • প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ২২, ২০২১, ৩:৫০ অপরাহ্ণ

বাহাদুর ডেস্ক :

ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে বিশৃঙ্খলার কোন স্থান নেই।

অথচ সমাজের একটি বৃহৎ শ্রেণি এমন রয়েছে যারা ছোটখাট বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে যায়। কখনো কখনো এই ঝগড়াবিবাদ আবার হত্যা পর্যন্ত গড়ায়।

বর্তমান প্রায় পত্রিকার পাতায় দেখা যায় সামান্য বিষয় নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে মারামারির সংবাদ।

দুই গ্রুপের এই মারামারি শুরু হয়ে তা রক্তপাত এবং পরস্পরের বাড়িঘরও জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। অনেকে হয়তো জানেও না যে কি কারণে তারা এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

ইসলামের শিক্ষা হলো-কারো সঙ্গে কোন বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে তাদের মাঝে যেন সমঝোতা করিয়ে দেয়া হয়।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘সন্ধি সর্বাবস্থায়ই উত্তম।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত: ১২৮) কিন্তু বর্তমান দেখা যায় উভয়ের মাঝে সমঝোতা না করিয়ে বরং বিষয়টিকে আরো কঠিন করা হয়।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: আর মুমিনদের দু’দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদের মাঝে তোমরা মীমাংসা করে দিও। এরপর তাদের মাঝে একদল অন্যদলের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করলে যে দল সীমালঙ্ঘন করে তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এরপর তারা (আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে) ফিরে এলে তোমরা উভয়ের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে মীমাংসা করে দিও এবং সুবিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা আল হুজরাত, আয়াত: ৯)

আল্লাহতায়ালা আরো ইরশাদ করেন: লোকদের গোপন সলাপরামর্শে প্রায়ই কোন কল্যাণ নিহিত থাকে না। অবশ্য কেউ যদি গোপনে কাউকে দান করার জন্য উপদেশ দেয় অথবা কোন ভালো কাজের জন্য অথবা লোকদের পরস্পরের কাজকর্মের সংশোধন করার জন্য কাউকে কিছু বলে তবে তা নিশ্চয়ই ভালো। (সুরা আন নিসা, আয়াত: ১১৪)

হাদিসে উল্লেখ হয়েছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন মহানবী (সা.) বলেছেন: প্রতিদিন, যেদিন সূর্য উদিত হয়, মানবদেহের প্রতিটি গ্রন্থির (জোড়া) সাদকা আদায় করা প্রয়োজন। দুই ব্যক্তির মাঝখানে সুবিচার সহকারে সমঝোতা স্থাপন করে দেয়া সাদকা হিসেবে গণ্য। কোন ব্যক্তিকে সওয়ারীতে আরোহণ করতে সহায়তা করা অথবা তার মাল-সামান তার সওয়ারীর পিঠে তুলে দেয়া সাদকারূপে গণ্য।

পবিত্র ও উত্তম কথাবার্তা সাদকা হিসেবে পরিগণিত। নামাজে যাওয়ার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকা হিসেবে গণ্য, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করাও সাদকারূপে গণ্য। (বোখারি ও মুসলিম)

এ থেকে বুঝা যায় পরস্পরের মাঝে বিরোধ দূর করে দেয়া আল্লাহর দরবারে সাদকা হিসেবে গণ্য হবে।

তাই আমাদের উচিত হবে, কোন কারণে কারো সাথে যদি মনোমালিন্য দেখা দেয় তাহলে দ্রুত সমঝোতা করে ফেলা।

এছাড়া আমাদের কোন ভাইয়ের মাঝে যদি ঝগড়াবিবাদ থেকে থাকে তা মেটানোর জন্যও আমাদেরকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

কেননা হাদিসে এসেছে হজরত সাহল ইবনে সা’দ সায়েদী নবীর এ হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখকষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যাথ্যা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমাদ)

আমি যে সমাজে বসবাস করি সেখানে যদি কোন ঝগড়াবিবাদ দেখা দেয় তাহলে একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য তা মেটানোর চেষ্টা করা। একই সাথে এই চেষ্টাও করতে হবে কোনভাবেই যেন দু’জনের ঝগড়ায় পুরো গ্রাম সামিল না হয়ে যায়।

হাদিসে এসেছে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না।

কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (মুসনাদে আহমাদ)

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

টি.কে ওয়েভ-ইন