বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

লিওনেল মেসির আজ ‘ম্যারাডোনা’ হওয়ার দিন

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২
বাহাদুর ডেস্ক || ওয়েব ইনচার্জ
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ২৬, ২০২২, ১:০১ অপরাহ্ণ

আজ হারলেই কাতার বিশ্বকাপ থেকে অনকেটা ছিটকে যাবে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে এ ম্যাচটিই হতে পারে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির শেষ ম্যাচ। তাই দলকে সামনে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কঠিন সময় থেকে উদ্ধার করার শেষ চেষ্টা চালাবেন বলে আশা করছেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। সেই সঙ্গে মেসি যে ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি সেটাও প্রমাণের একটি সুযোগ পাচ্ছেন।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের কথা মনে আছে? আর্জেন্টিনার যেই দলটিকে নিয়ে কেউ কল্পনাও করেনি সেই কাজটিই করেছিলেন ম্যারাডোনা। দলকে একাই নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জয় করেই বুয়েন্স আয়ার্সে ফেরেন ম্যারাডোনা-বাতিস্তুতারা। পরের আসরে অর্থাৎ ১৯৯০ সালে তো প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এরপর ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়ে নকআউট নিশ্চিত করে তারা। শেষ পর্যন্ত আসরে ফাইনালও খেলে। কিন্তু বিতর্কিত পেনাল্টিতে শেষ মুহূর্তে শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ হয় আলবিসেলেস্তেদের।

৩২ বছর পর আবার সেই অতীতের সামনে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনা। সেবারের মতোই এবারও প্রথম ম্যাচ হেরে বসেছে তারা। তাই পরের দু’ম্যাচে জয় ছাড়া কোনও কিছু দেখার সুযোগ নেই। তবে হারলে বা ড্র করলেও নকআউটের রাস্তা খোলা থাকবে, সে জন্য অবশ্য তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যের দিকে। তাই এমন সমীকরণে যেতে চাইবেন না স্কালোনি ও মেসিরা।

এবারের আসরটি হচ্ছে ম্যারাডোনাকে ছাড়া। পেলেও অসুস্থতার কারণে যোগ দিতে পারেননি। গতকাল গিয়েছে ম্যারাডোনার ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। এদিন কাতারে দিনভর হয়েছে ম্যারাডোনা স্মরণ। কিংবদন্তীর সতীর্থরাও কালকের দিনটিকে রেখেছিল পুরোপুরি শোকের আবহে। মেসির আর্জেন্টিনা দলের ছবিও একই। সেখানে শোক চলছে সৌদি আরবের কাছে হারের পর থেকে।

কিভেবে বিশ্বকাপে এসেছিল আর এখন কোথায় দাঁড়িয়ে। একটি হারে আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নটা সংকুচিত হয়ে এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। সেটা এমন এক চাপ যে মিলিয়ে গেছে মেসিদের মুখের হাসি। এরপর প্রায় প্রতিদিনই সমর্থকরা উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে কাতার ইউনিভার্সিটি মাঠে গিয়ে।

ওখানেই যে দলের আবাস। সমর্থকরা স্লোগান ধরে বলছে, তোমাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তোমরা পারবে। তাদের সমর্থনের বার্তা খেলোয়াড়রাও পেয়েছেন। লিওনেল মেসিও শুনেছেন তবে হাসিটা আর ফিরছে না। তিনি হাসছেন শুধু কাতারের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল ভবনে টাঙানো ছবিতে। মেসিদের উজ্জীবিত করতে আর্জেন্টিনা ফেডারেশনও কম করছে না। ম্যাচের আগে তাদের প্রেরণা যোগাতে রিলিজ দিয়েছে একটি গানের।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। আগের দিন আলাদা ট্রেনিং করার খবর মিলেছে। যদিও সেই খবর উড়িয়ে দিয়ে স্কালোনি জানিয়েছেন তিনি বেশ সুস্থ আছেন। এই দুঃসময়ে তার সুস্থ থাকা এবং মাঠে দলের সঙ্গে উপস্থিতি খুব জরুরি।

আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় দৈনিক ক্লারিনের সাংবাদিক ডিয়েগো মেজার বিশ্বাস, লিওনেল মেসি মাঠে থাকলে এই দল উজ্জীবিত হবে। আগের মতো দারুণ খেলে ম্যাচ জিতিয়ে আনবে। মেক্সিকোকে হারানোর সামর্থ্য আছে এই দলের।

 

পরিসংখ্যানও বলছে, মেসির উপস্থিতিতে আর্জেন্টিনা কখনো হারেনি মেক্সিকোর কাছে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে পাঁচ ম্যাচের চারটিই জিতেছেন মেসি আর একটি ড্র হয়েছে। কাতারে ষষ্ঠ ম্যাচে কি ইতিহাস ঘুরে যাওয়ার শঙ্কা কম। কারণ বড় দল কখনো টানা অঘটনের শিকার হতে পারে না।

সৌদি আরবের অঘটনের পরপরই মেসি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজের বিশ্বাসের কথা বলেছিলেন, ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা মানে এই দলের সামর্থ্য আছে। একটা বড় আঘাতের পর এই দল আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

যারা ব্রাজিলের বিপক্ষে মারাকানা জয় করে কোপা আমেরিকা জিততে পারে, তাদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি আছে। আর্জেন্টাইন অধিনায়কও সতীর্থদের জাগিয়ে তুলতে তিনি কথা বলেছেন সবার সঙ্গে। একাট্টা হয়ে মানুষের মনের ভুল ভাঙিয়ে দিতে তৈরি মেসি। তবে এটা তার স্বভাবের সঙ্গে খুব একটা যায় না। অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষটি সব সময় নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকেন। এতদিনে মেসিকে জানা বা বোঝা এ রকমই।

হঠাৎ মেসির এই রূপান্তর! আর্জেন্টাইন সাংবাদিকরা মনে করছেন, নিজের শেষ বিশ্বকাপটা এভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চান না তিনি। আগের চারটি আসরেও তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। এবার ফেভারিট হয়ে এসেও গ্রুপ থেকে বিদায় নিলে সেটা হবে নিষ্ঠুর নিয়তি। তাই বয়স পেছন থেকে টেনে ধরলেও মনোবল সামনের দিকে এগিয়ে ৩৫ বছর বয়সীকে।

সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর জন্য নতুন পরীক্ষার মঞ্চ আজ মেক্সিকোর ম্যাচ। এখান থেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিতে পারলে তো ম্যারাডোনার মতোই অমরত্বের পথে যাত্রা। ম্যারাডোনাও ওপর থেকে নিশ্চয় দেখছেন এবং আশীর্বাদ করছেন। মেসিরাও গতকাল আর্জেন্টাইন ঈশ্বরকে স্মরণ করেছেন শ্রদ্ধাভরে। মেক্সিকোর ম্যাচ জয়টাই হবে তার মৃত্যুবার্ষিকীর বড় স্মারক।