বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -|- ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-গ্রীষ্মকাল -|- ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আজ জেলহত্যা দিবস ॥ গাইডওয়ালে ভাঙ্গন- মূলবেধিতেও ফাটল।

প্রকাশিত হয়েছে- মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০
||
  • প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ৩, ২০২০, ৩:১২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডানেবামে জাতীয় চারনেতা, মাঝে বঙ্গবন্ধু! ৭১’র পঞ্চমুখ। শোক আর শোকাতুর মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে এ ভাষ্কর্য। এ চত্বর নতুন প্রজন্মের দর্শনশক্তিতে দৃষ্টির তীক্ষ্ণতায় পৌঁছে দিবে ‘একাত্তর’। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সোনালী রঙের পিতলে মোড়ানো ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। যুগযুগ অনুসন্ধিৎসা মানুষের নিকট পঞ্চ-অবয়বের আদর্শ আর ইতিহাস পৌঁছে দিবে এ চত্বর।
তবে এ চত্বর দেখভালের জন্য নানা কমিটি তৈরি হলেও সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি মৃত্যুর পর নিয়মিত পরিস্কারও হচ্ছে না। পিছনের গাইডওয়ালে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মূলবেধিতেও ফাটল। পিতলের আস্তরণের মরিচার জং করে মলিন হয়ে যাচ্ছে এ চত্বরের সৌন্দর্য্য। বর্তমান সরকারের আমলেই বঙ্গবন্ধু চত্বর হারাচ্ছে সৌন্দর্য্য, জাতির জনক ও জাতীয় চার নেতার প্রকৃতি সোনালী বদলে এখন কালচে! এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি জানান, চত্বরের সৌন্দর্য্যবর্ধন ও ভাঙনরোধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ চত্বরে এলেই দর্শনার্থীদের জানিয়ে দিবে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ওই বছরের ৩রা নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকোষ্ঠে চার জাতীয় নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সেদিন জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহগুলোকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে যোগদানের প্রস্তাব জাতীয় চার নেতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ কারণেই তাদের নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়।
তরুন-তরুণীদের ফেসবুক, টিউটার আর ইন্টারনেট ভাচ্যুয়াল জগতে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে তোলা ছবি ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বময়। চমকপ্রদ এ চত্বরের পরিকল্পনা ও অর্থায়নের পুরো কৃতিত্বই সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এম.পি’র। চত্বরের এক কোনায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার। তাদের নামের সঙ্গে দেয়া হচ্ছে পরিচিতি। শিল্পী এম.এ মাসুদের পরিকল্পনায় পাথরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠ। বাদ যাচ্ছেন না স্থানীয়ভাবে আওয়ামীলীগে অবদান রাখা নেতৃবৃন্দও। বিকাল ঘনিয়ে এলেই বাড়তে থাকে উপস্থিতি। সৌখিনের কাছে হার মানচ্ছে রাজনৈতিক মতাদর্শও।
বঙ্গবন্ধু চত্বরে চিত্রশিল্পী মৃণাল হক সোনালী রঙে তৈরি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। দু’পাশে রয়েছেন জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। বঙ্গবন্ধুর বাম পাশে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী, ডানপাশে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও অর্থমন্ত্রী এম কামরুজ্জামান। একপাশে রয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুনন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুরো পরিবারের একটি গ্রুপ চিত্রায়ন করেন মৃৎশিল্পী মোহনগঞ্জের সুকেশ কুমার। পাথর কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে অপরূপ দৃষ্টির এ ছবিটি।
অন্যপাশে চিত্রশিল্পী এম.এ মাসুদ পাথরে ফুটিয়ে তুলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, রুহুল আমিন, মুন্সী আব্দুর রব, সিপাহী হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, নুর মোহাম্মদ। পামবীথি সড়কের প্রতিটি গাছের গোড়ায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের অমর সৃষ্টি চিত্রকর্ম। ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের দৃর্শ্যপটে অংকিত ছবি। রয়েছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনের প্রতিকৃতি। চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন বাহাদুর পাথর কেটে চত্বরটিকে আলপনা খুদায় করেছেন।
নয়ানাভিরাম সৌখিন কারুকার্য্যরে ভিতরে একপলক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতাকে দেখতে তারুণ্যের ঢল নামচ্ছে গৌরীপুরে। অপরূপ সৌন্দর্য্যরে পুরোধা প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি পর্যটকদের বসার জন্য তৈরি করে ছিলেন স্টেইনলেস স্টিলের বেঞ্চ। যেখানে এক সাথে প্রায় ৫শ পর্যটক প্রকৃতির হাওয়া, দু’পাশের জলের কলতান আর পামবীথির রূপ নিতে পারবেন। কিন্তু রাজনৈতিক বৈরিতায় এসব উপকরণ আজ থানায় আটকে রয়েছে। খুলে নেয়া হয়েছে ফ্যানসহ নিরাপত্তায় থাকা সিসি ক্যামেরাও। এ স্বপ্নের পুরোধা ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরের ইচ্ছা ছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই মুর‌্যালের উদ্বোধন করবেন। যা জীবনদশায় পূরণ হয়নি। তবে এসেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোঃ নাসিম। তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার ভাষ্কর্য্যে পুষ্পমাল্যও অর্পণ করেন।