ময়মনসিংহের গৌরীপুরের গোবিন্দ জিউর মন্দির আঙ্গিনায় মধ্যবাজারের শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনাস্থল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর/২০২৪) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল পরিদর্শন করেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন পরিচালক সুস্মিতা পাইক ও সহকারী পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মো. মোজাফফর হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ, গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মির্জা মাযহারুল আনোয়ার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে আইয়ুব, উপজেলা পুজা উদযান কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন সরকার, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কর, মধ্যবাজার পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জিত চন্দ্র সাহা প্রমুখ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর/২০২৪) ভোরে পৌর শহরের গোবিন্দ জিউর মন্দির চত্বরে মধ্যবাজার দুর্গোৎসবের দুর্গাপ্রতিমাভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইয়াসিন মিয়া (১৭) একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। পরিবারের দাবি ইয়াসিন প্রতিবন্ধী। সে সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতাও পাচ্ছেন।
প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পেয়ে ওইদিনেই ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৪ এর কোম্পানি কমÐার সামুজ্জামান, গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ ও গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মির্জা মাযহারুল আনোয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা মো. মাযহারুল আনোয়ার বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জিত চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গ্রেফতারকৃত ইয়াসিনকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মন্দির ও মÐগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।
গোবিন্দ জিউর মন্দির এলাকার লিটন চন্দ্র দাসের স্ত্রী ডলি রানী দাস জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হই। এ সময় অপরিচিত এক ছেলেকে প্রতিমা ভাঙতে দেখে চিৎকার শুরু করি। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ^শর্মার পুত্র গোবিন্দ চন্দ্র বিশ^শর্মা জানায়, তিনি এসে দেখেন একটি ছেলে প্রতিমা ভাঙছে। তিনি আসতেই কালী প্রতিমা নিয়ে নাচানাচি শুরু করে রাস্তার দিকে চলে যেতে থাকে। এ সময় তারা সবাই মিলে আটক করেন। তিনি জানান, দুর্গাপ্রতিমার ৪টি হাত, অসুর, সিংহ, স্বরসতী ও কার্তিক প্রতিমার মাথা ভেঙে ফেলা হয়েছে। গণেষ প্রতিমার হাত-পাও ভাঙা। কালি প্রতিমার মাথা ও বিভিন্ন অংশ ভাঙা হয়েছে।
স্থানীয় ও পূজামÐপ প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৌরীপুর মধ্যবাজার পূজা মÐপ কমিটির উদ্যোগে পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায় অস্থায়ী মÐপ তৈরি করে প্রতিবছর শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হয়। মÐপের প্রতিমা তৈরি করা হয় পৌর শহরের গোবিন্দ জিউর মন্দির আঙ্গিনায়। গত ২০ দিন ধরে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাছ চলছিল। বাকি ছিল শুধু প্রতিমায় রং দেয়ার কাজ।
এ প্রসঙ্গে মধ্যবাজার পূজামÐপ কমিটির সভাপতি রনজিৎ চন্দ্র সাহা বলেন, দুর্গোৎসবের প্রায় সাত দিন আগে গোবিন্দ জিউর মন্দির থেকে প্রতিমা মধ্যবাজার মÐপে নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্ত এর আগেই প্রতিমা ভাঙচুর হয়ে গেল। দুর্গোৎসবের আগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমা ঠিক করা যাবে কিনা এটা কারিগরদের সাথে কথা না বলে জানা যাবে।
গৌরীপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন সরকার বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি মÐপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।
এ দিকে ইয়াসিনের মা মিনা আক্তার বলেন, ইয়াসিন মানসিক প্রতিবন্ধী। সে সরকারি ভাতা পায়। গত বুধবার সে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজাখুঁজির সময় জানতে পারি সে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আটক হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে আইয়ুব জানান, ইয়াসিন সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী।